কাপ্তাই লেক থেকে কর্ণফুলী নদীতে পানি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের ১৬টি জলকপাট দিয়ে প্রতিটি দিয়ে ৩ ফুট করে পানি ছাড়ার ফলে নদীতে তীব্র স্রোতের সৃষ্টি হয়েছে।
এর জেরে বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) সকাল ৬টা থেকে আজ রবিবার দুপুর ২ টা (এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত) টানা ৩ দিন ধরে চন্দ্রঘোনা-রাইখালী নৌ-রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে।
এতে রাঙামাটি জেলা সদরের সাথে বান্দরবান, রাজস্থলী এবং খাগড়াছড়ি জেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। নদীর দুই পাশের হাজার হাজার যাত্রী চরম দুর্ভোগের মুখে পড়েছেন।
রবিবার সকালে চন্দ্রঘোনা ফেরিঘাটে কথা হয় অখিল চাকমা নামে এক পর্যটকের সাথে। তিন জানালেন, পরিবার ও বন্ধুদের নিয়ে খাগড়াছড়ি থেকে বান্দরবান যাচ্ছিলেন। কিন্তু চন্দ্রঘোনা-রাইখালী নৌ-রুটে এসে আটকে যায়। ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় আমরা চরম দুর্ভোগে পড়েছি।
কেউ কেউ পরামর্শ দিচ্ছেন রাঙ্গুনিয়া গোডাউন সেতু ব্যবহার করতে।
ফেরীর ত্রুটি নেই, জনস্বার্থে এবং যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়াতে সড়ক ও জনপথ বিভাগ ফেরি চলাচল বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে বললেন রাঙ্গামাটি সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী কীর্তি নিশান চাকমা।
তিনি জানালেন, কর্ণফুলী নদীতে এখন অস্বাভাবিক স্রোত রয়েছে। এমন স্রোতে ফেরি চালালে ফেরী নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে না। তাই ফেরী চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টানা ৩ দিন ধরে চন্দ্রঘোনা-রাইখালী নৌ-রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। দুপারের বাসিন্দারা জরুরি প্রয়োজনে বিকল্প হিসাবে কেউ কেউ ইঞ্জিন চালিত বোটে পার হচ্ছেন, আবার কেউ কেউ নিজস্ব যান নিয়ে রাঙ্গুনিয়া গোডাউন সেতু ব্যবহার করে গন্তব্যে পৌছাচ্ছে।
ফেরির ইনচার্জ মো. আরমান ও চালক মো. আমিন জানান, কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে পানি ছাড়ার কারণে নদীতে তীব্র স্রোতের সৃষ্টি হয়েছে। তাই ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে, নদীতে স্রোত কমে জোয়ার এলে ফেরি চালানোর চেষ্টা করা হবে বলে তারা জানান।
কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বলা হয়েছে, কাপ্তাই লেকের পানি বিপদ সীমার উর্ধ্বে ১০৮ ফুট মিন সি লেভেলের (এমএসএল) উপরে পানির লেভেল ছুঁয়ে যাওয়ায় কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ গত ৭ আগস্ট বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে কাপ্তাই বাঁধের সুরক্ষায় স্পিলওয়ের ১৬টি গেট ৩ ফুট উচ্চতায় খুলে দেয়।
আর স্পিল খোলার পর কাপ্তাই লেকের পানি সরাসরি পড়ছে কর্ণফুলী নদীতে। যে কারণে নদীতে স্রোত বেড়ে গেছে এবং পানির উচ্চতাও বৃদ্ধি পেয়েছে।
কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ স্পিল দিয়ে পানি ছাড়া বন্ধ না করা পর্যন্ত চন্দ্রঘোনা লিচুবাগন ফেরি চলাচল শুরু করা সম্ভব হবে না।
পানির লেভেল ১০৭ ফুট এমএসএলের নিচে নেমে আসলেই কাপ্তাই লেক থেকে পানি ছাড়া বন্ধ করা হবে বলে জানান, কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান।
তিনি বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ যেকোনো সময় যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
জেএন/পিআর