জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে চট্টগ্রামের যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর ও তার স্ত্রী জেসমিন আক্তারের বিরুদ্ধে পৃথক দু’টি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আজ বুধবার সকালে দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ বাদি হয়ে দুদক প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. নওশাদ আলী মামলা দু’টি দায়ের করেন।
হেলাল আকবর বাবর নগরীর কোতোয়ালী থানার নন্দনকানন বৌদ্ধ মন্দির সড়ক এলাকার মৃত জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর ছেলে। সে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সাবেক উপ-অর্থ সম্পাদক ছিলেন।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদক চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সুবেল আহমেদ। দুদকের মামলার পর বাবরের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে জানতে সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে নেমেছে বলে জানা গেছে।
মামলার এজাহার অনুযায়ী, হেলাল উদ্দিন বাবর সম্পদ বিবরণী দাখিলের সময় ৯ লাখ ৯ হাজার ২৫০ টাকা স্থাবর এবং ১ কোটি ৬৮ লাখ ৩৪ হাজার ৯৯০ টাকা অস্থাবর সম্পদের তথ্য দিয়েছিলেন। তবে যাচাইকালে তার স্থাবর সম্পদ ৩০ লাখ ৮৮ হাজার ৩৯০ টাকা বেশি পায় দুদক।
এছাড়া আয়কর নথিতে বাবর ২০১২-১৩ থেকে ২০২০-২১ করবর্ষ পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য আয় ১ কোটি ৪১ লাখ ৩০ হাজার ২৭০ টাকা উল্লেখ করেছেন।
অপরদিকে ব্যয়সহ তার স্থাবর-অস্থাবর মোট সম্পদের পরিমাণ ২ কোটি ৩০ লাখ ১৭ হাজার ৬৩০ টাকা। অর্থাৎ তিনি ৮৮ লাখ ৮৭ হাজার ৩৬০ টাকা জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন।
সেই হিসাবে অবৈধ ৩০ লাখ ৮৮ হাজার ৩৯০ টাকার স্থাবর সম্পদসহ বাবরের মোট অবৈধ সম্পদের পরিমাণ ১ কোটি ১৯ লাখ ৭৫ হাজার ৭৫০ টাকা।
আর এই জ্ঞাত বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের দায়ে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬(ক) এবং ২৭(১) ধারায় বাবরের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছে।
অপরদিকে বাবরের স্ত্রী জেসমিন আক্তারের সম্পদ বিবরণী দাখিলের সময় ২ কোটি ১০ লাখ ১৮ হাজার ৪২০ টাকা স্থাবর এবং ২৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য দিয়েছিলেন। অর্থাৎ বিবরণী অনুযায়ী তার মোট সম্পদ ২ কোটি ৩৪ লাখ ৭৮ হাজার ৪২০ টাকা।
তবে দুদক অনুসন্ধান করে জেসমিনের মোট সম্পদ পেয়েছে ২ কোটি ৫০ লাখ ২৯ হাজার টাকার। অর্থাৎ তিনি ১৫ লাখ ৫০ হাজার ৫৮০ টাকা সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করেছেন।
অন্যদিকে, আয়কর নথি অনুযায়ী জেসমিনের আয় ২ কোটি ৬৬ লাখ ৫০০ টাকা। তবে আয়কর নথি পর্যালোচনা করে দুদক গ্রহণযোগ্য আয় পেয়েছে মাত্র ৮৬ লাখ ৪৫ হাজার ১২০ টাকা।
যার বিপরীতে পারিবারিক ব্যয়সহ তিনি সম্পদ উল্লেখ করেছেন ২ কোটি ৬৯ লাখ ৫৫ হাজার টাকার। অর্থাৎ ১ কোটি ৮৩ লাখ ৯ হাজার ৮৮০ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন তিনি।
সেই হিসাবে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদসহ জেসমিন আক্তারের মোট অবৈধ সম্পদের পরিমাণ ১ কোটি ৯৮ লাখ ৬০ হাজার ৪৬০ টাকা।
আর এসব অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং সম্পদ অর্জনের সহায়তার দায়ে বাবর ও তার স্ত্রী জেসমিন আক্তারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারায় এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় মামলা হয়েছে।
সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের ঘনিষ্ঠ অনুসারী হিসেবে চট্টগ্রামের রাজনীতিতে বাবর পরিচিত। একসময় তিনি কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য ছিলেন। তবে নানান অভিযোগে দলীয় পদ হারান তিনি।
জেএন/পিআর