চট্টগ্রামের চন্দনাইশে অন্তঃসত্ত্বা মুক্তা আক্তারকে (২৬) মারধরের পর ওষুধ খাইয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনার পর থেকে তার স্বামী পারভেজ ও শাশুড়ি পলাতক রয়েছেন।
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চন্দনাইশ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গোলাম সারোয়ার।
নিহত মুক্তা আক্তার সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড পলিয়ার পাড়া নদ্দিয়া বাড়ির পারভেজের স্ত্রী। তাদের সংসারে আড়াই বছরের এক পুত্র সন্তান রয়েছে।
২০১৯ সালে সামাজিকভাবে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের কয়েক মাস পর পারভেজ প্রবাসে চলে যান এবং প্রায় তিন মাস আগে দেশে ফিরে আসেন। নিহত মুক্তা তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন।
স্থানীয়রা জানায়, প্রবাসে থাকা সময় পারভেজ মুক্তার বাবা থেকে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা নিয়েছিলেন। সম্প্রতি আরও ৫ লাখ টাকা দাবি করলে স্বামী ও শাশুড়ি মিলে মুক্তাকে নির্যাতন করতেন।
অভিযোগ আছে, তারা তাকে কিছু ট্যাবলেট খেতে দিয়েছিলেন, যার পর মুক্তা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে বাবার বাড়ি থেকে দোহাজারী হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং সেখান থেকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। পথে রওশনহাট এলাকায় তার মৃত্যু হয়।
মৃতদেহে আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। পরিবার যৌতুক না পেয়ে মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে দাবি করেছেন।
নিহত গৃহবধূর চাচাতো ভাই সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘২০১৯ সালে আমার চাচাতো বোনের সঙ্গে প্রবাসী মো. পারভেজের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। তাদের ঘরে আড়াই বছরের একটি সন্তান রয়েছে। এ ছাড়াও বর্তমানে আমার চাচাতো বোন তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা। গত তিন মাস আগে আমার দুলাভাই মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমান থেকে দেশে আসেন।
তিনি প্রায় সময় প্রবাসে কষ্টে আছেন দাবি করে আমার চাচার থেকে পর্যায়ক্রমে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা যৌতুক নিয়েছেন।
সম্প্রতি তিনি আমার চাচাতো বোনকে তার বাবার থেকে আরও ৫ লাখ টাকা এনে দিতে বলেন। এতে সে অস্বীকৃতি জানালে তার স্বামী ও শাশুড়ি মিলে তাকে অমানুষিক নির্যাতন করেন। তার পুরো শরীরে এখনো পর্যন্ত আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের সঠিক বিচার চাই।’
নিহত গৃহবধূর পিতা নাছির উদ্দিন বলেন, ‘আমার মেয়ের স্বামী ও শাশুড়ি মিলে যৌতুকের জন্য প্রায় সময় তাকে নির্যাতন করত। সে তাদের নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে অনেকবার আমার বাড়িতে চলে আসতে চেয়েছিল।
তার একটি আড়াই বছরের সন্তানের কথা চিন্তা করে আমি তাকে প্রতিনিয়ত সান্ত্বনা দিয়েছি। অবশেষে তারা আমার মেয়েকে বেধড়ক মারধর করে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সকলের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’
চন্দনাইশ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গোলাম সারোয়ার বলেন, মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য চমেক মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের পিতা নাছির উদ্দীন বাদি হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
জেএন/পিআর