চাহিদাও কম দেখানো হচ্ছে!

চট্টগ্রামে গ্যাসের বরাদ্দ দিনদিনই কমছে

অনলাইন ডেস্ক

চট্টগ্রামে প্রতিদিনই কমছে গ্যাসের বরাদ্দ। এক মাস আগেও চট্টগ্রামে গ্যাসের দৈনিক বরাদ্দ ২৮০ মিলিয়ন ঘনফুট দেওয়া হতো। গত মঙ্গলবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২৩৩ মিলিয়ন ঘনফুট। অথচ মহেশখালী টার্মিনাল থেকে দৈনিক ১ হাজার ৫০ মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু চট্টগ্রামে বরাদ্দ কমানো হচ্ছে। গ্যাসের বরাদ্দ কমে যাওয়ায় চট্টগ্রামে দুটি বৃহৎ বাল্ক গ্রাহক ছাড়া অন্যান্য বাল্ক প্রতিষ্ঠানগুলোতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা রয়েছে।

- Advertisement -

সংশ্লিষ্টরা জানান, চট্টগ্রামে গ্যাসের চাহিদাও কম দেখানো হচ্ছে। আগে কেজিডিসিএল (কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি.) এর পক্ষ থেকে গ্যাসের দৈনিক চাহিদা ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট দেখানো হতো। তার বিপরীতে ৩২০ থেকে ৩৪০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস বরাদ্দ পাওয়া যেত। সম্প্রতি চট্টগ্রামে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ দৈনিক চাহিদা কমিয়ে ৩৫০ মিলিয়ন ঘনফুট দেখাচ্ছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, শিল্পে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির কারণে এই খাতে গ্যাসের চাহিদা কমে গেছে। অনেক শিল্পকারখানা অনুমোদিত লোডের চেয়ে কম গ্যাস নিচ্ছে আবার অনেক কারখানা উৎপাদন বন্ধ রেখেছে। জানা যায়, বর্তমানে শতাধিক শিল্পে নতুন গ্যাস সংযোগের জন্য আবেদন জমা রয়েছে। এদের মধ্যে অনেকেই ডিমান্ড নোটের টাকাও পরিশোধ করেছে।

- Advertisement -google news follower

প্রাপ্ত তথ্য মতে, বরাদ্দ পাওয়া ২৩৩ মিলিয়ন ঘনফুটের মধ্যে চট্টগ্রাম শহর এলাকায় সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে ৯৭ মিলিয়ন ঘনফুট। আর শহরের বাইরে সীতাকুণ্ড এলাকায় ১৭ মিলিয়ন ঘনফুট ও মিরসরাই এলাকায় ৯ মিলিয়ন ঘনফুট। কাফকো সার কারখানায় ৪৭ মিলিয়ন ঘনফুট ও শিকলবাহায় সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রে ২২০ মেগাওয়াটে ৩০ মিলিয়ন ঘনফুট। গ্যাস না পাওয়ায় সিইউএফএল সার কারখানা এবং শিকলবাহায় ১৫০ মেগাওয়াট ও রাউজানে ৪২০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ রাখা হয়েছে।

চট্টগ্রামে গ্যাসের বরাদ্দ কমে যাওয়া নিয়ে কেজিডিসিএলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কথা বলতে নারাজ। প্রতিষ্ঠানের এমডিকে একাধিক বার মোবাইল ফোনে কল দিয়েও সাড়া মেলেনি।

- Advertisement -islamibank

চট্টগ্রামে আবাসিক, অনাবাসিক, শিল্পসহ কোন খাতে গ্যাসের নতুন সংযোগ দেওয়া হচ্ছে না। এতে লাভজনক সেবামূলক প্রতিষ্ঠানটি (কেজিডিসিএল) লোকসানের দিকে ধাবিত হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, গ্যাস বিপণন না বাড়ায় বর্তমানে কোম্পানির আয়-ব্যয় কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছে। পরিচালন খরচ দিনদিন বেড়েই চলেছে। ফলে কোম্পানিকে লাভজনক করতে হলে গ্যাসের বরাদ্দ বাড়াতে হবে।

প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, বরাদ্দ কমে যাওয়ায় কোম্পানির গ্যাস বিক্রিও কম হচ্ছে। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে কোম্পানি গ্যাস বিক্রি করে ১ হাজার ৬৩৮ কোটি টাকা মুনাফা অর্জন করেছে। এই অর্থ বছরে গ্যাস বিক্রি বেশি হয়েছিল। কিন্তু ২০২২-২৩ অর্থবছরে গ্যাস বিক্রি কম হওয়ায় মুনাফা হয়েছে ৩৭৪ কোটি টাকা। আর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মুনাফা হয়েছে ৪৫৯ কোটি টাকা। পরের দুই অর্থবছরে আবার সিস্টেম লসের পরিমাণও বেড়ে গেছে।

দীর্ঘদিন ধরে নতুন সংযোগ বন্ধ থাকায় অবৈধ সংযোগের মাধ্যমে গ্যাস চুরির প্রবণতা বেড়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায় বর্তমানে সিস্টেম লস বেড়ে প্রায় ৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এতে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

চট্টগ্রামে গ্যাস সংকট নিরসনের জন্য ২০১৮ সালে চট্টগ্রামে এলএনজি সরবরাহব্যবস্থা চালু করা হয়। তখন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী সংগঠন ও সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে সিদ্ধান্ত ছিল চট্টগ্রামে গ্যাসের চাহিদা মিটিয়ে অবশিষ্ট এলএনজি দেশের অন্যান্য স্থানে সরবরাহ করা হবে। তখন থেকে চট্টগ্রামে জাতীয় গ্রিড থেকে গ্যাসের বরাদ্দ বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু চট্টগ্রামে গ্যাসের সংকট থাকতেও এলএনজি দেশের অন্যান্য স্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী ও শিল্পদ্যোক্তাদের দাবির মধ্যে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানো হচ্ছে না। গ্যাস বরাদ্দ নিয়ে চরম বৈষম্য চলছে।

জেএন/এমআর

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ