সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থপাচার মামলায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অভিযানে তার দুই ঘনিষ্ঠ সহকারী—আব্দুল আজিজ ও উৎপল পালকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে দুদক।
দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আজ বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে হাজির করে তাদের সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে।
জানা গেছে, গ্রেপ্তার হওয়া মো. আব্দুল আজিজ ‘ইম্পেরিয়াল ট্রেডিং’ নামক একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক এবং তিনি দুদকের দায়ের করা মামলার তালিকাভুক্ত আসামি।
অপর দিকে উৎপল পাল আরামিট পিএলসির সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) হলেও মূলত সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ব্যক্তিগত এজেন্ট হিসেবে কাজ করতেন।
দুদক সূত্রে আরও জানা গেছে, বিদেশে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর স্থাবর সম্পত্তি কেনা, রক্ষণাবেক্ষণ ও অর্থপাচার প্রক্রিয়ায় উৎপল পাল ছিলেন মূল সংগঠক।
দুদকের তদন্তে তাকে ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে ২টি ল্যাপটপ ও ২টি মোবাইল জব্দ করা হয়। এসব ডিভাইস ফরেনসিক বিশ্লেষণের জন্য আদালতের অনুমতি চাওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে আব্দুল আজিজ দেশের ভেতরে সাইফুজ্জামানের বিভিন্ন সম্পত্তি ক্রয়, বিক্রয় ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন।
দুদক সূত্র জানায়, সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এবং তার স্ত্রী ইউসিবি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান রুকমীলা জামানের বিরুদ্ধে প্রায় ১২৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুদক একাধিক মামলা তদন্ত করছে। এই মামলায় অন্তত অর্ধশতাধিক ব্যক্তি জড়িত রয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
দুদক ইতোমধ্যে সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও রুকমীলা জামানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির জন্য আবেদন করেছে, যা বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন।
বিভিন্ন দেশের সম্পত্তি সংক্রান্ত আদালতের আদেশ অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যে তাদের ৩৪৩টি, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২২৮টি এবং যুক্তরাষ্ট্রে ৯টি স্থাবর সম্পত্তি (বাড়ি, ফ্ল্যাট, জমি ইত্যাদি) ক্রোক ও ফ্রিজ করা হয়েছে।
এছাড়া ২০২৪ সালের ৫ মার্চ আদালত এক আদেশে সাইফুজ্জামান ও তার পরিবারের নামে থাকা ৩৯টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করেন। এসব হিসাবে মোট ৫ কোটি ২৬ লাখ ৮৩ হাজার টাকা জমা রয়েছে।
আরেকটি আদেশে, আদালত সাইফুজ্জামানের নামে থাকা ১০২ কোটি টাকার শেয়ার এবং ৯৫৭ বিঘা জমি জব্দের নির্দেশ দেন।
২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর আদালত আরও একটি আদেশে সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার স্ত্রী রুকমীলা জামানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।
দুদক বলছে, অর্থপাচার এবং সম্পদ লুকানোর অভিযোগে এই মামলাটি দেশের অন্যতম আলোচিত দুর্নীতির ঘটনায় পরিণত হয়েছে এবং এর পেছনে থাকা জড়িত সব ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনা হবে।