আধুনিক ও শহুরে জীবনে বিয়ে-শাদিসহ যেকোনো সামাজিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠানের জন্য কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া, খাবার সরবরাহ, সাজসজ্জার নামে ইভেন্ট ম্যানেজম্যান্টের অনন্তরালে চরম নৈরাজ্য চলছে চট্টগ্রামে। হিন্দু ধর্মালম্বীদের লগ্ন ধরে এসব নৈরাজ্যের মাত্রা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। কিছু কিছু অত্যাধুনিক কমিউনিটি সেন্টার নামের কনভেনশন হলে চলে খাবার সরবরাহের নামে প্লেট প্রতি গলাকাটা বিল আদায়ের প্রতিযোগিতা। বছরের পর বছর কমিউনিটি সেন্টার ও কনভেনশন হল ভাড়া নিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের ইচ্ছে মাফিক অবৈধ ব্যবসা চলে এলেও যেন দেখার কেউ নেই। সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কিংবা অন্যকোনো সংস্থার নজরদারি নেই এ গলাকাটা কারবারে। আলাদা করে গ্রাহকের কাঁধে তুলে দেয়া হয় লাইট আর বসার চেয়ার ভাড়াও। বছরের পর বছর ধরে চলা এই নীরব নৈরাজ্যে উদ্বেগ জানিয়েছেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ(ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগ ও নগর কমিটির নেতৃবৃন্দ।
বুধবার (০১ অক্টোবর) গণমাধ্যমে প্রেরিত বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব বিভাগীয় সাধারন সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারন সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, যুগ্ন সম্পাদক মোঃ সেলিম জাহাঙ্গীর, দক্ষিন জেলা সভাপতি আলহাজ্ব আবুদল মান্নান, যুব ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি আবু হানিফ নোমান, পলিসি ইনফ্লেুয়েন্স গ্রুপ চট্টগ্রামের সভাপতি কলামিস্ট মুসা খান, সদস্য সচিব আবু মোশারফ রাসেল ও যুগ্ন সদস্য সচিব সাঈদুর রহমান মিন্টু প্রমুখ।
বিবৃতিতে বলা হয়, চট্টগ্রাম নগরীতে কমপক্ষে ৩০০ অতিথির বিয়ে কিংবা গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানের জন্য লাখ টাকার (বড় আয়োজনের জন্য ৫-৭ লাখ টাকা) নিচে কোনো কমিউনিটি সেন্টারের ভাড়া নেই । ভাড়া উপর ধরিয়ে দেয়া হয় সাজসজ্জার ইভেন্ট ম্যানেজম্যান্ট। এই বিল ক্ষেত্র বিশেষে ৫০ হাজার থেকে পাঁচলাখে পর্যন্ত ঠেকে। আবার এই কাজ করাতে হবে কমিউনিটি সেন্টার বা কনভেনশন হলের নির্ধারিত প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে। এলইডি এবং ভিডিও গ্রাফির বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে হয় আলাদাভাবে। হিন্দু সম্প্রদায়ের বিয়ের লগ্নে এ খরচ বাড়তি হয় তিন থেকে পাঁচগুণ। আবার কি কিছু কনভেনশন হলে তাদের থেকে খাবার সরবরাহ নেয়া বাধ্যতামূলক। যার দাম নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় রান্নার কয়েকগুণ। এসব হলে লাইট, ফ্যান এমনকি চেয়ারের ভাড়াও গুণতে হয়।
বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, বিয়ে-শাদি ছাড়াও অনুষ্ঠান আয়োজনেও কমিউনিটি সেন্টার নৈরাজ্য থেমে থাকে না। কমিউনিটি সেন্টারগুলো অতিথির মাথাগুণে নিজেদের বিল কড়ায়গণ্ডায় আদায় করলেও তাদের সহায়তায় চলে সরকারের ভ্যাট ফাঁকি। তারা ভ্যাট কর্মীদের ম্যানেজ করে আয়োজনের কয়েকগুণ কমিয়ে নামমাত্র ভ্যাট কেটে রাখে।
ক্যাব’র পক্ষ থেকে কমিউনিটি সেন্টার ও কনভেনশন হলগুলোর ভাড়া নৈরাজ্য এবং অন্যান্য খরচ সরকারিভাবে নির্ধারণ করে দেওয়ার পাশাপাশি জেলা প্রশাসন ও ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে তদারকি অভিযান জোরদার করার দাবি জানানো হয়। এছাড়াও খাবার তৈরীতে নানা রকম ক্যামিকেল ও মানহীন ঘি, সুগন্ধিযুক্ত কেওডাজল, রঙসহ ক্ষতিকারক অনেক কিছু মিশ্রণ করা হয়। যা তদারকিতে কোন কতৃপক্ষের নজরদারি নেই। এরবাইরে অনুষ্ঠান চলাকালে রাস্তায় প্রচন্ড যানজট থাকলেও কমিউনিটি সেন্টারগুলোর কোন প্রস্তুতি থাকে না। ফলে পুরো নগরী যাটজট অসনীয় হয়ে উঠে।
জেএন/এমআর