কক্সবাজারের টেকনাফে প্রতিনিয়ত চলছে মাদকবিরোধী অভিযান। অভিযানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারাও যাচ্ছে মাদক ব্যবসায়ীরা। অথচ পাশের উপজেলা উখিয়ায় মাদকবিরোধী অভিযানে চলছে ভাটা।
সূত্রমতে, সীমান্ত উপজেলা উখিয়ায় রয়েছে শত শত ইয়াবা কারবারি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর খাতায় তাদের নাম থাকলেও নেই অভিযান। দিনের পর দিন এসব ইয়াবা কারবারি গডফাদাররা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের ধরছে না। এ নিয়ে সচেতন মহলে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, গত পাঁচ বছরে দেশের বিভিন্ন স্থানে মাদকবিরোধী অভিযান হয়েছে। কিন্তু সেই হিসাবে এ পর্যন্ত উখিয়ায় উল্লেখযোগ্য অভিযান হয়নি। আটক হয়নি গডফাদাররা। অথচ পাশের উপজেলা টেকনাফে প্রতিনিয়ত মাদকবিরোধী অভিযানে হতাহতের ঘটনা ঘটছে। এতে বিস্মিত উখিয়ার সচেতন মহল।
সূত্র জানায়, উখিয়ান রাঘববোয়ালরা এখনও অক্ষত রয়ে যাচ্ছে। পুলিশের তালিকাভুক্ত ইয়াবা কারবারিরা বন্দুকযুদ্ধের শিকার হলেও পার পেয়ে যাচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত শীর্ষ কারবারিরা। অথচ মিয়ানমার থেকে ইয়াবা পাচার করে এনে দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে এই শীর্ষ কারবারিদের বিরুদ্ধে। গত ৯ মাসে বন্দুকযুদ্ধে মারা যাওয়াদের ৫৪ জনের মধ্যে ৪৯ জনই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকার বাইরের।
বর্তমানে কক্সবাজারে আয়োজন করে ইয়াবা কারবারিদের আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়া চলছে। আগামী মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে টেকনাফে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ইয়াবা কারবারিরা আত্মসমর্পণ করতে পারে বলে জেলা পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে শতাধিক ব্যক্তি পুলিশের হেফাজতে চলে গেছে। সর্বশেষ বিদেশ থেকে ফিরে জানুয়ারি ২০ জনের বেশি ব্যক্তির হেফাজতে যাওয়ার কথা ছিল। তবে তাদের নামের তালিকা বা সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছে পুলিশ।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকা ছাড়াও জেলা পুলিশের যে তালিকা রয়েছে সেই তালিকায় ১ হাজার ১৫০ ব্যক্তির নাম রয়েছে। মূলত জেলাজুড়ে গত কয়েক বছরে দায়ের করা মামলার আসামিরাই এ তালিকায় স্থান পেয়েছে। এছাড়া কক্সবাজার জেলা পুলিশ মাদকবিরোধী অভিযানে বন্দুকযুদ্ধে নিহত মাদক কারবারিদের তথ্য আলাদাভাবে আরেকটি তালিকায় লিপিবদ্ধ রাখছে।
ওই তালিকায় গত বছরের ২৪ মে থেকে চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত ৯ মাসে বিভিন্ন সময়ে জেলায় বন্দুকযুদ্ধ, মাদক কারবারিদের অন্তর্কোন্দলে মৃত্যু, মাদক কারবারিদের অজ্ঞাতপরিচয় লাশ উদ্ধার সংক্রান্ত তথ্য রয়েছে। ওই তালিকায় ৫৬ জনের মৃত্যু তথ্য রয়েছে। বন্দুকযুদ্ধ হয়েছে মূলত পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির সঙ্গে। তবে তালিকায় র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ২ জন জলদস্যুর মৃত্যুর তথ্য রয়েছে। সেই হিসাবে জলদস্যু বাদে ৫৪ জন মাদককারবারির মৃত্যু হয়েছে।
নিহতের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত চারজন হলো তালিকার ২৩ নম্বর ক্রমিকের আকতার কামাল মেম্বার (৩৬), ২৭ নম্বর হাবিব উল্লাহ হাবিব (৩৫), ৩১ নম্বর জিয়াউর রহমান এবং ৫৬ নম্বর মোস্তাক আহমদ মুছু।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত এই চার ইয়াবা কারবারির মৃত্যুর বিষয়টি অনুসন্ধানে নিশ্চিত হওয়া গেছে। কিন্তু নিহতের তালিকায় দেখা গেছে, পুলিশ আরো তিনজনকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা কারবারি হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় ওই তিনজনের নাম পাওয়া যায়নি।
২০ জানুয়ারি টেকনাফ থানার হ্নীলা ইউনিয়নের দমদমিয়া এলাকায় টেকনাফ থানার পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা যায় শামসুল আলম ওরফে বার্মাইয়া শামসু (৩৮)। টেকনাফ থানার পূর্ব সিকদারপাড়ার হোসেন প্রকাশ গুরা মিয়ার ছেলে শামসুল। আবার ১০ জানুয়ারি টেকনাফের সাবরাং মেরিন ড্রাইভ সড়কের জিরো পয়েন্ট এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা যায় ১০ মামলার আসামি রশিদ আহাম্মদ ডেইলা ও দুই মামলার আসামি আবুল কালাম। এই তিনজনকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা কারবারি হিসেবে উল্লেখ করা হলেও তাদের নাম তালিকায় পাওয়া যায়নি।
বন্দুকযুদ্ধে ছোট কারবারিদের বেশি মৃত্যু হচ্ছে, এই ভয়ে আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছে ইয়াবা কারবারি জাফর আহমদ ও আলী আহমদ। এ দুজনই টেকনাফের বাসিন্দা। তারা জানায়, পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি বন্দুকযুদ্ধের নামে চুনোপুঁটি বেশি মারছে। তাই জীবন রক্ষার্থে আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ৭৩ জনের তালিকার মধ্যে মারা গেছে মাত্র চারজন। বাকি ৬৯ জনের মধ্যে ২৩ জন আত্মসমর্পণ করতে পুলিশ হেফাজতে গেছে বলে জানা গেছে। তবে গত ২৩ জানুয়ারি নতুন করে আরো কয়েকজন পুলিশ হেফাজতে যাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত শীর্ষ ইয়াবা কারবারি কতজন আছে ২৬ জানুয়ারি এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এর আগে ২৩ জনের পুলিশ হেফাজতে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।