কোলেস্টেরল মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা জটিল কোনো বিষয় নয়। কোলেস্টেরল বাড়ায় এমন খাবার খাওয়া কমাতে হবে। একইসঙ্গে কোলেস্টেরল কমায় এমন খাবার খাওয়া বাড়াতে হবে।
অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের মতো চর্বিও শরীরে দরকার। তাই খাদ্যাভ্যাস থেকে সকল চর্বি জাতীয় খাবার ঝেড়ে ফেলতে হবে এমন কোনো কথা নেই।
কোলেস্টেরল হচ্ছে একধরনের চর্বিজাতীয় উপাদান। প্রধানত, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, ডিমের কুসুম, মাংস, নির্দিষ্ট কিছু ফল ও সবজি ইত্যাদি থেকে মেলে। নির্দিষ্ট কিছু হরমোন তৈরি করা এবং হজমে সাহায্য করা কোলেস্টেরলের কাজ। তবে রক্তে প্রয়োজনীয় মাত্রার বেশি কোলেস্টেরল হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। ডাক্তারি ভাষায় একে বলা হয় ‘হাইপারকোলেস্টেরোলেমিয়া’।
কোলেস্টেরলের মাত্রা ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং ওজন কমানোর মাধ্যমে হৃদরোগীদের জটিলতা কমানো সম্ভব।
তাই কোলেস্টেরল কমায় এমন কয়েকটি খাবার সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-
রসুন: বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধানে কার্যকর রসুন। গবেষণা মতে, রক্তনালীর গায়ে কোলেস্টেরল জমা হওয়া রোধ করে। ফলে রক্ত জমাট বেঁধে রক্তনালী বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা কমে।
অ্যাভোকাডো: অ্যাভোকাডোর‘বেটা-সিস্টোসেরল’উপাদান খাবার থেকে শরীরে কোলেস্টেরল শোষণের পরিমাণ কমায়। এছাড়াও শরীরে এইচডিএল’নামে পরিচিত উপকারী কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতেও সাহায্য করে।
পালংশাক: বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধানে কাজে লাগে পালংশাক। কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ তার মধ্যে অন্যতম। দৈনিক খাদ্য তালিকায় এই শাক থাকলে কোলেস্টেরলের কারণে রক্তনালী বন্ধ হওয়ার ঝুঁকি কমবে অনেকটাই।
চা: চা-তে থাকা ‘ফ্লাভানয়েডস’ একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা, ‘এলডিএল’বা ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রায় কমায়। রক্তনালীতে ‘প্লাক’ জমে তা বন্ধ করার পেছনে অনেকটাই দায়ী এই ‘এলডিএল’।
ডার্ক চকলেট: ডার্ক চকলেটে রয়েছে প্রচুর ‘ফ্লাভানয়েডস’। তাই চায়ের মতোই এটি লড়াই করে ‘এলডিএল’য়ের বিরুদ্ধে।
বীজজাতীয় খাবার: সব ধরনের বীজজাতীয় খাবার যেমন- কিডনি বিন, মটরদানা বা মটরশুঁটি কোলেস্টেরল কমাতে সহায়ক। কারণ এসবে রয়েছে কোলেস্টেরল কমাতে সহায়ক দ্রবণীয় আঁশ।
ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড: হৃদযন্ত্রের প্রাকৃতিক ওষুধ এই উপাদান ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। স্যামন, ম্যাকারেল সার্ডিনস, টুনা ইত্যাদি মাছ ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের উল্লেখযোগ্য উৎস। তাই নিয়মিত এই মাছগুলো খেলে হৃদস্পন্দনের তাল ঠিক থাকবে, কোলেস্টেরল কমবে এবং ধমনীর প্রদাহ দূরে থাকবে।
সয়া: ভোজ্য চর্বি ও মাংসের স্বাস্থ্যকর বিকল্প হল সয়া। উদ্ভিজ্জ আমিষের এক চমৎকার উৎস সয়া, যাতে প্রকৃত মাংসে থাকা ‘স্যাচুরেইটেড ফ্যাট’ নেই। কোলেস্টেরল কমানোর পাশাপাশি কিছু নির্দিষ্ট ধরনের ক্যান্সারের বিরুদ্ধেও লড়াই করে এই শষ্য।
ওটস: দ্রবণীয় আঁশ, যা কোলেস্টেরলকে শরীর থেকে ধুয়ে বের করে দেয়। গবেষণায় জানা গেছে, দ্রবণীয় আঁশনির্ভর খাদ্যাভ্যাস শরীরের মোট কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে পারে ১০ থেকে ১৫ একক পর্যন্ত।
বাদাম: হৃদরোগের ঝুঁকি ৩৯ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে পারে বাদাম খাওয়ার অভ্যাস। চিনাবাদাম, আখরোট ও কাজুবাদাম বেশি উপকারী। বাদামে চর্বি বেশি থাকলেও তা ‘মনোস্যাচুরেইটেড’ ও‘পলিম্যাচুরেইটেড’ ধরনের, যা কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। এছাড়াও কমায় ‘সিআরপি’ এবং ‘ফাইব্রিনোজেন’য়ের মাত্রা, দুটাই প্রদাহ সৃষ্টিকারী। তাই সপ্তাহে কমপক্ষে পাঁচবার এক আউন্স পরিমাণ বাদাম খাওয়ার অভ্যাস গড়তে হবে।