ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা সারদা দুর্নীতি মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করতে কলকাতার পুলিশ কমিশনারের বাসায় হাজির হওয়ার পর তুলকালাম বাঁধিয়ে দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এর প্রতিবাদে তিনি কলকাতার ধর্মতলার মেট্রো চ্যানেলে অবস্থান নিয়ে সেখানেই রাত কাটিয়েছেন। সোমবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে ভারতীয় সংবাদপত্রগুলো এ খবর দেয়।
পশ্চিমবঙ্গের বাংলায় এ ধরনের অবস্থান কর্মসূচিকে বলে ‘ধর্না’। আর মমতা তাঁর এই প্রতিবাদকে মহাত্মা গান্ধীর ভাষায় বলতে চাইছেন ‘সত্যাগ্রহ’।
তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতার অভিযোগ, নরেন্দ্র মোদীর কেন্দ্র সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে দেশের সব গণতান্ত্রিক কাঠামো ভেঙে ফেলছে। এ কারণে গণতন্ত্র রক্ষা করতে এবং দেশকে বাঁচাতেই তিনি ‘ধর্না’য় বসেছেন।
এনডিটিভি জানায়, রোববার (৩ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় সিবিআই এবং রাজ্য পুলিশের বিরোধ যে নজিরবিহীন চেহারা নিয়ে প্রকাশ্য হয়েছিল, রাতভর ‘ধর্না’য় বসে মমতা তাকে কেন্দ্র সরকারের সঙ্গে রাজ্যের সংঘাতের মাত্রায় নিয়ে গেছেন।
বছর ছয়েক আগে সারদা ও রোজভ্যালি কেলেঙ্কারিতে এমএলএম ব্যবসার ফাঁদে ফেলে সাধারণ মানুষের হাজার হাজার কোটি রুপি হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়টি জানাজানি হলে মমতার তৃণমূলের নেতাদের বিরুদ্ধেও অভিযোগের আঙুল ওঠে।
বিবিসি বাংলা জানিয়েছে, ওই কেলেঙ্কারির তদন্তের জন্যে কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে প্রধান করে একটি কমিটি করা হয়। কিন্তু তদন্তে যেসব তথ্যপ্রমাণ তিনি জব্দ করেছিলেন সেগুলো তিনি সিবিআই’র কাছে হস্তান্তর করেননি বলে পরে অভিযোগ ওঠে।
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারে থাকা বিজেপি নেতাদের অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতাসহ তৃণমূল নেতাদের বাঁচাতেই তথ্যপ্রমাণ গায়েব করেছেন রাজীব কুমার।
ইনডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে বলা হয়, এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য কয়েক দফা নোটিশ দিয়েও রাজিবের সাড়া পায়নি সিবিআই। এ কারণে তাকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে বলে গুঞ্জন চলছিল কয়েকদিন ধরে।
এই পরিস্থিতিতে রোববার (৩ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় কলকাতার লাউডন স্ট্রিটে পুলিশ কমিশনারের বাড়িতে হাজির হন সিবিআই কর্মকর্তারা। আর তাতেই নাটকীয়তার সূচনা।
প্রথমে সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ সিবিআই কর্মকর্তাদের বাড়িতে ঢুকতে বাধা দেয়। পরে দুপক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়। একপর্যায়ে সিবিআই কর্মকর্তাদের টেনেহিঁচড়ে গাড়িতে তুলে শেক্সপিয়ার সরণি থানায় নিয়ে যায় কলকাতার পুলিশ। ‘নজিরবিহীন’ এ ঘটনায় পুরো শহরে শোরগোল পড়ে যায়। অবশ্য পরে সিবিআই কর্মকর্তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
আনন্দবাজার লিখেছে, নাটকীয়তাকে নতুন মাত্রা দিতে এর পরপরই পুলিশ কমিশনারের বাসায় হাজির হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। সেখানে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ, রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্র এবং এডিজি (আইন-শৃঙ্খলা) অনুজ শর্মাকে নিয়ে তিনি বৈঠকে বসেন।
বৈঠক শেষে বেরিয়ে মমতা সাংবাদিকদের সামনে এসে বলেন, নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ বিজেপির দুই গুণ্ডা মিলে বাংলায় ‘ক্যু’ করার চেষ্টা করছেন। যে ত্রাস শুরু হয়েছে তা জরুরি অবস্থার থেকেও ভয়াবহ। ক্ষমতায় ফিরবেন না বুঝে মোদী পাগল হয়ে গেছেন।
এ সময় মমতা ঘোষণা দেন, মোদী সরকারের হাত থেকে ভারতের ‘সংবিধানকে বাঁচাতে’ তিনি ‘ধর্না’য় বসবেন। রাতেই ধর্মতলার মেট্রো চ্যানেলে শুরু হয় তাঁর সেই প্রতিবাদী অবস্থান।
মুখ্যমন্ত্রীকে প্রথমে রাস্তার উপরে চেয়ারে বসে থাকতে দেখা যায়। পরে পাশে মঞ্চ তৈরি হয়। মঞ্চের পাশেই তৈরি হয় একটি অস্থায়ী ছাউনি, সেটা মন্ত্রিসভার বৈঠকের জন্য।
মমতা জানিয়ে দেন, সোমবার বিধানসভার বাজেট ঘোষণার সময় তিনি অধিবেশনে উপস্থিত থাকবেন না। বাজেট পেশের আগে মন্ত্রিসভার যে বৈঠক করতে হয় তা তিনি মঞ্চের পাশে ওই ছাউনিতে বসেই সারবেন।