বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) শিরোপাধারী রংপুর রাইডার্সকে হারিয়ে ফাইনালে উঠল গতবারের রানার-আপ ঢাকা ডায়নামাইটস।
বুধবার (৬ ফেব্রুয়ারি) মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে টস জিতে রংপুরকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠায় ঢাকা। ব্যাটিং ব্যর্থতায় ইনিংসের শেষ ওভারে রংপুর রাইডার্স ১৪২ রানে অলআউট হয়। জবাবে ২০ বল আগে ৫ উইকেট হাতে রেখে ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করে ঢাকা। আগামী শুক্রবার (৮ ফেব্রুয়ারি) এ মাঠেই তাদের অপেক্ষায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।
১৪৩ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে মাশরাফির কাটারে পুল করতে গিয়ে নাহিদুলের হাতে ক্যাচ দেন উপল থারাঙ্গা। এরপর ক্রিজে এসে রনি তালুকদার আক্রমণ চালান। মাশরাফিকে, অপুকে বাউন্ডারি মেরে চাপ হাল্কা করেন। চতুর্থ বলে অপু ফেরান নারিনকে (১৪)।
তৃতীয় উইকেটে সাকিব ও রনি দলের রান ৭৫ এ নিয়ে যান। হাওয়েলকে এক চার ও এক ছক্কা মারার পর সাকিব উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসেন। জায়গা নিয়ে শর্ট বল পুল করতে গিয়ে বল স্ট্যাম্পে টানেন ২৩ রান করা সাকিব। এরপর মাশরাফির দশম ওভারে জোড়া উইকেট হারায় ঢাকা। কাইরন পোলার্ডকে (১৪) উইকেটের পেছনে তালুবন্দি হওয়ার পর রনি তালুকদার রান আউট হন ৩৫ রানে। ২৪ বলে ৪ বাউন্ডারিতে ৩৫ রান করেনডানহাতি ব্যাটসম্যান।
ষষ্ঠ উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ৫০ রানের জুটি গড়ে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন রাসেল ও সোহান। রাসেল ৫ ছক্কায় ১৯ বলে করেন ৪০ রান। সোহান ১৭ বলে করেন ৯ রান। বোলিংয়ে ২ উইকেট নিয়ে বিপিএলের নিজের ২২তম উইকেটের স্বাদ পান মাশরাফি।
এর আগে ওপেনিংয়ে নাদিফ চৌধুরীকে নামিয়ে বড় চমক দিয়েছিলেন মাশরাফি। ডানহাতি ব্যাটসম্যান অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন ভালোভাবেই। রুবেলকে দ্বিতীয় ওভারে মিড অন দিয়ে উড়ানোর পর আন্দ্রে রাসেলকে পুল করে চার হাঁকান ডিপ মিড উইকেট দিয়ে। ওই ওভারে আন্দ্রে রাসেলকে দুই ছক্কা মেরে গেইল খোলস থেকে বেরিয়ে আসেন।
প্রথমবারের মতো খেলতে নামা নাদিফের ঝড়টা তখনও বাকি ছিল। চতুর্থ ওভারে শুভাগতকে পরপর তিন বলে হাঁকান তিন ছক্কা। প্রথম দুটি লং অন দিয়ে, পরেরটি মিড উইকেট দিয়ে। ওভারের শেষ বলে ছক্কা মারতে গিয়ে নাদিফ বিপদ ডেকে আনেন। সেখান থেকেই ব্যাকগিয়ারে যাওয়া শুরু রংপুরের। পোলার্ডের হাতে ক্যাচ দিয়ে নাদিফ ফেরেন ২৭ রানে। পরের ওভারের প্রথম দুই বলে রুবেলের দুই বিগ উইকেট।
অফস্ট্যাম্পের বাইরে বেরিয়ে যাওয়া বলে খোঁচা মেরে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন গেইল। অফফর্মে থাকা গেইল ১৩ বলে ১৫ করে ফেরেন সাজঘরে। রুবেলের পরের শর্ট বলে রুশো ক্যাচ দেন পোলার্ডের হাতে। টানা তিন বলে তিন উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে রংপুর।
শিরোপাধারীদের রানের চাকা থমকে যায় সেখানেই। নাদিফের টানা তিন ছক্কার পর ২০ বলে কোনো বাউন্ডারি আসেনি। চতুর্থ উইকেটে মিথুন ও বোপারা ৬৪ রানের জুটি বাঁধেন ৮৪ বলে। এ জুটিতে ১৩তম ওভারে শতরানের স্বাদ পায় রংপুর। কিন্তু পরের ওভারেই ভাঙে তাদের প্রতিরোধ। কাজী অনিকের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে মিথুন সাজঘরে ফেরেন ৩৮ রানে।
আগের ম্যাচে ব্যাটিংয়ে সবাইকে চমকে দেওয়া বেনি হাওয়েলের দিকে তাকিয়ে ছিল রংপুর। কিন্তু তাকে থামানোর মন্ত্র জানা ছিল সাকিবের। ৮ বলে ৩ রানে সাকিবের ঘূর্ণিতে এলবিডব্লিউ হন হাওয়েল। তার উইকেট নিয়ে বিপিএলে ২২তম উইকেটের স্বাদ পান সাকিব।
এরপর ধারাবাহিক উইকেট হারাতে থাকে রংপুর। কাজী অনিকের বলে মাশরাফি ফেরেন শূন্য রানে।রুবেল দ্বিতীয় স্পেলের ফিরে পান নাহিদুলের উইকেট। আন্দ্রে রাসেলের এক ওভারে সাজঘরে ফেরেন ফরহাদ রেজা ও শফিউল ইসলাম।
১৯ ওভারে রংপুরের রান ছিল ৯ উইকেটে ১২৮। বোপারা ক্রিজে থাকায় ভালো কিছুর প্রত্যাশা করছিল রংপুর। প্রথম তিন বলে ডানহাতি ব্যাটসম্যান দলের প্রয়োজন মিটিয়েছেন ভালোভাবে। প্রথম বলে ছক্কা, পরের দুই বলে দুই চার। চতুর্থ বলেও মেরেছিলেন বোপারা। কিন্তু দীর্ঘদেহী পোলার্ড জায়গায় দাঁড়িয়ে ক্যাচ নিয়ে বোপারাকে হতাশ করেন। ৪৩ বলে ৪৯ রানে শেষ হয় বোপারার বীরত্বগাথা ইনিংসের।
শুরুর চাপ সামলে ঢাকার বোলিং ছিল দুর্দান্ত। গেইল ও রুশোকে পরপর দুই বলে ফেরানো রুবেল হোসেন ২৩ রানে পেয়েছেন ৪ উইকেট। রাসেল ও কাজী অনিক ২টি করে উইকেট পেয়েছেন। উইকেট না পেলেও সুনীল নারিন ৪ ওভারে দিয়েছেন মাত্র ১৮ রান। পুরো ইনিংসে মাত্র ১০ চার ও ৮ ছক্কা হজম করেন বোলাররা। আর পুরো ইনিংসে ৫৪ বলে কোনো রানই দেননি তারা।