দুই মাসের শিশু বৈশাখ। গত ৭ ফেব্রুয়ারি এক ট্রেন দুর্ঘটনায় অমাবস্যার অন্ধকার নেমে আসে এ শিশুকন্যার জীবনে। ওই দুর্ঘটনায় সে হারায় তার মাকে (রোকসানা)। শুধু তাই নয়, করুণ ওই দুর্ঘটনায় সে হারায় তার ডান পা।
হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর বৈশাখের শরীরে সমানে চলছে স্যালাইন-ইনজেকশন। ছোট্ট শরীরটা এত ব্যাথা আর নিতে পারছে না। মা হারানো মেয়েটিকে হাসপাতালে দেখতে ছুটে এসেছেন সৎ মা (নাজমা আক্তার)। সৎ মা এলেও একটিবারের জন্য দেখতে আসেনি তার বাবা (রাসেল)। এ অবস্থায় শিশুটির চিকিৎসার ব্যয়ভার নিয়েও দেখা দেয় শঙ্কা। তবে সেই শঙ্কাকে দীর্ঘায়িত হতে দেননি চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজ ভূঁইয়া। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে তিনি নিজেই দায়িত্ব নেন শিশুটির চিকিৎসার খরচ বহন করার।
জানা যায়, প্রতিদিনের মতো গত বৃহস্পতিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে তূর্ণা নিশিথা ট্রেনে ভিক্ষা করছিলেন রোকসানা। কোলে ছিল দুই মাসের বৈশাখ। ট্রেনটি কদমতলী রেলক্রসিং পার হওয়ার সময় গতি একটু কমালে ট্রেন থেকে লাফ দেন রোকসানা। কিন্তু গতি সামলাতে না পেরে চলে যান ট্রেনের চাকার নিচে। মুহূর্তেই দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায় তাঁর শরীর। কোলে থাকা বৈশাখের পুরো শরীর চাকার নিচে না গেলেও ডান পা হাঁটুর নিচ থেকে কাটা পড়ে ট্রেনের চাকায়। পথচারীরা তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে যায়।
এদিকে দুর্ঘটনার কথা শুনে বৈশাখের বাবা রাসেলের প্রথম স্ত্রী নাজমা ছুটে যান হাসপাতালে। এখনও তিনিই দেখাশোনা করছেন শিশুটির। সঙ্গে আছে নাজমার আট বছরের ছেলে সোহেল।
চমেক হাসপাতালের ২৬ নম্বর (অর্থোপেডিক্স) ওয়ার্ডের ৮৪ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন আছে বৈশাখ। ওয়ার্ডের সেবিকারা জয়নিউজকে জানান, বর্তমানে বৈশাখের অবস্থা আগের চেয়ে কিছুটা ভালো।
নাজমা আক্তার জয়নিউজকে বলেন, রোকসানাকে আমার স্বামী রাসেল বিয়ে করার পর তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। রোকসানার সঙ্গেও যোগাযোগ ছিল না। তবে যখন খবর পাই রোকসানা ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছে এবং ওর বাচ্চার পা কাটা গেছে আমি আর বসে থাকতে পারিনি। সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে ছুটে এসেছি। এখন আমিই তার মা। তাকে আমার বুকের দুধ খাওয়াচ্ছি। তার নাম বৈশাখ দিয়েছে আমার ছেলে সোহেল। আমার ছেলে-মেয়েরাও তাকে বোনের মতো আদর করছে।
মেয়েটির চিকিৎসার খরচ বহনের ব্যাপারে জানতে চাইলে রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজ ভূঁইয়া জয়নিউজকে বলেন, প্রচারের জন্য আমি এটা করিনি। করলে সঙ্গে সঙ্গে ফেসবুকে ছবি তুলে দিয়ে দিতাম। সম্পূর্ণ মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে আমি মেয়েটির চিকিৎসার খরচ বহন করছি। কারণ আমারও দুটি ছেলে আছে। আমিও একজন বাবা। শিশুটির বাবা যখন হাসপাতালে আসছে না শুনলাম তখনই তার চিকিৎসার খরচ বহন করার দায়িত্ব নিলাম। আশা করছি, শিশুটি শিগগির সুস্থ হয়ে উঠবে।
হাসপাতাল থেকে ফেরার পথে দেখা গেল ছোট্ট বৈশাখকে পরম মমতায় কোলে নিয়ে বসে আছে নাজমা। আর বোন বৈশাখকে চুমু দিয়ে আদর করছে সোহেল।
ডান পা হারানোর যন্ত্রণা আজীবন বয়ে বেড়াতে হবে বৈশাখকে। তবে পরিবারের মমতা থেকে যাতে বৈশাখ বঞ্চিত না হয়- এমনটিই কামনা করছে মানবিক দৃষ্টিসম্পন্ন মানুষরা।