বছর ঘুরে আবার এসেছে ফাগুন। শীতের বৈরিতা ভুলিয়ে দিয়ে প্রকৃতিকে সাজাতে সবুজের অনন্ত যৌবনায়। ফাগুনের আগমনে বিবর্ণ বৃক্ষরাজি আজ হয়ত গুনগুন করে গাইছে ‘আহা আজি এ বসন্তে এত ফুল ফুটে, এত বাঁশি বাজে, এত পাখি গায়…
পহেলা ফাল্গুন বাংলা পঞ্জিকার একাদশতম মাসের প্রথম দিন। শীতের শেষদিকে অরেণ্যের অগ্নিশিখা পলাশে আগমনী বার্তা পাঠালেও পহেলা ফাল্গুনে আসে ঋতুরাজ বসন্ত। ঋতুরাজ বসন্তের বর্ণনা কোনো রংতুলির আঁচরে শেষ হয় না। কোনো কবি-সাহিত্যিক বসন্তের রূপের বর্ণনায় নিজেকে তৃপ্ত করতে পারেন না। তবুও বসন্তবন্দনায় প্রকৃতিপ্রেমীদের চেষ্টার যেন অন্ত থাকে না। গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে ১৩ ফেব্রুয়ারি পহেলা ফাল্গুন পালিত হয়।
পহেলা ফাল্গুন বাঙালি সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এমনকি হিন্দুদের পৌরাণিক উপাখ্যান ও লোককথাগুলোতে এই উৎসবের উল্লেখ পাওয়া যায়। তবে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময়কাল থেকেই শান্তিনিকেতনে বিশেষ নৃত্যগীতের মাধ্যমে বসন্তোৎসব পালনের রীতি চলে আসছে।
বঙ্গাব্দ ১৪০১ সাল থেকে বাংলাদেশে প্রথম ‘বসন্ত উৎসব’ উদযাপন করার রীতি চালু হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ এই দিনকে বরণ করে নিতে চারুকলার বকুলতলায় এবং ধানমণ্ডির রবীন্দ্র সরোবর উন্মুক্ত মঞ্চে প্রতিবছর জাতীয় বসন্ত উৎসরেব আয়োজন করে। দেশের বাইরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা, ঝাড়খণ্ড ও ওডিশাসহ অন্যান্য রাজ্যে দিনটি বিশেষ উৎসবের সঙ্গে পালিত হয়।
শীত চলে যাবে রিক্ত হস্তে, আর বসন্ত আসবে ফুলের ডালা সাজিয়ে। বাসন্তী ফুলের পরশ আর সৌরভে কেটে যাবে শীতের জরাজীর্ণতা।
শীতকে বিদায় জানানোর মধ্যদিয়েই বসন্তকে বরণ করে নিতে নগরে বিভিন্ন সংগঠন পালন করছে নানা অনুষ্ঠানের। গ্রামে তো বটে বিশেষ করে শহরের তরুণ-তরুণীরা বসন্ত বরণে দিরভর ব্যস্ত থাকে। ফুলে ফুলে ভরে যাবে তরুণীর চুলের খোপা। দর্শনীয় স্থানগুলোতে মানুষের পদচারণায় যেন তিল ধারণের ঠাঁই থাকে না।
নগরের সিআরবি শিরিষতলায় বসন্ত উৎসবে আসা সিটি কলেজের শিক্ষার্থী জয়ন্তি দে জয়নিউজকে বলেন, আমরা বসন্তকে বরণ করতে এসেছি, ঘুরবো, মজা করবো, আড্ডা দিব। বসন্তর মতো আমরা নতুন সাজে সেজে উঠলাম। বাসন্তী সাজা পুরোপুরি সম্ভব না হলেও কাছাকাছি সাজতে করেছি।
মনের গহীন কোণে অতি সূক্ষ্ম যে চাঞ্চল্য, সে তো কেবল বসন্তই জাগাতে পারে! প্রিয়জনের স্পর্শ নিয়ে বাঁচার সুখেরই নামই বসন্ত। ঝড়াপাতার কষ্ট ভুলে বুক ধুঁকপুক, সেই শিহরণ জাগানিয়া ফাগুন এসেছে। তাইতো সুভাষ মুখোপাধ্যায় বলেছিলেন- ফুল ফুটুক না ফুটুক, আজ বসন্ত…।