আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত টেকনাফের ১২০ জন শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী। আগামী শনিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ইয়াবা পাচারকারীরা আত্মসমর্পণ করবেন বলে জানা গেছে। ওইদিন সকাল ১০টায় টেকনাফ কলেজ মাঠে হবে বহুল প্রত্যাশিত এ আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন জয়নিউজকে জানান, আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান আয়োজনে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও এতে আমন্ত্রণ জানানো হবে।
জেলা পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে প্রতীকীভাবে ইয়াবা ট্যাবলেট জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করবে প্রায় ১২০ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী। তাদের মধ্যে অন্তত ৩৫ জন ইয়াবা গডফাদার। আত্মসমর্পণের জন্য এরই মধ্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হেফাজতে এসেছেন তারা।
তাদের মধ্যে রয়েছেন টেকনাফের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির তিন ভাই আবদুল আমিন, মো. সফিক ও মো. ফয়সাল, ভাগিনা সাহেদুর রহমান নিপু এবং বেয়াই শাহেদ কামাল। রয়েছেন টেকনাফ সদরের এনামুল হক মেম্বার, ছৈয়দ হোসেন মেম্বার, শাহ আলম, আবদুর রহমান, মোজাম্মেল হক, জোবাইর হোসেন, নূরুল বশর, কামরুল হাসান রাসেল, জিয়াউর রহমান, মো. নুরুল কবির, মারুফ বিন খলিল ওরফে বাবু, মো. ইউনুছ, ছৈয়দ আহমদ, রেজাউল করিম, নুরুল হুদা মেম্বার, দিদার মিয়া, জামাল হোসেন মেম্বারসহ অনেকে।
আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও স্বরাষ্ট্র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন বলে সংশ্নিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সম্প্রতি ইয়াবার বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযানে নামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আর এই অভিযানে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে ইয়াবা পাচারকারীদের মৃত্যুর হার বেড়ে যায়। এরপর অনেক ইয়াবা পাচারকারী স্বপ্রণোদিত হয়েই আত্মসমর্পণ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। অনেকেই ইতিমধ্যে আত্মসমর্পণের উদ্দেশে বিদেশ থেকেও ফিরে এসেছেন। সর্বশেষ প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, প্রায় শ’খানেক ইয়াবা ব্যবসায়ী এখন পুলিশের নিরাপত্তা হেফাজতে রয়েছেন।
ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আত্মসমর্পণের প্রক্রিয়াটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনলে তিনিও এতে সম্মতি দিয়েছেন। এরপরই জেলা পুলিশ এ নিয়ে কাজ শুরু করে। আত্মসমর্পণকারীদের বিরুদ্ধে নতুন করে কোনো মামলা দায়ের হবে না। পুরানো মামলাগুলো তাদের আইনিভাবে মোকাবেলা করতে হবে। এক্ষেত্রে তাদের সুপথে ফিরতে সরকার সহায়তা করবে।
টেকনাফের কয়েকজন ইয়াবা ব্যবসায়ী বলেছেন, ‘বন্দুকযুদ্ধে’ প্রতিদিনই ইয়াবা ব্যবসায়ীদের কেউ না কেউ নিহত হচ্ছেন। তাই ভয়ে তারা আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়ায় সঙ্গে থাকা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, তালিকাভুক্ত শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ীদের অনেকে আত্মসমর্পণ করার জন্য যোগাযোগ করেছেন। যারা আত্মসমর্পণ করতে আসছেন তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তিনি আরো জানান, প্রায় ৪৫০ জন নতুন ইয়াবা ব্যবসায়ীর নাম জানা গেছে, যারা তালিকাভুক্ত নয়। তাদের বিরুদ্ধে কোনো থানায় মামলাও নেই। লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে তারা দীর্ঘদিন ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে আসছে।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের তথ্য মতে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় কক্সবাজার জেলায় ১ হাজার ১৫১ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী রয়েছেন। এদের বেশিরভাগ সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের। ভয়াবহ মাদক ইয়াবার বিরুদ্ধে গত বছরের ৪ মে থেকে শুরু হয়েছে বিশেষ অভিযান। এ পর্যন্ত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে ৪২ মাদক ব্যবসায়ী। এর মধ্যে ৩৭ জনই টেকনাফের। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ৭৩ জন গডফাদারের মধ্যে মাত্র চারজন ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন।
ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আত্মসমর্পণের বিষয়ে কক্সবাজার পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন জয়নিউজকে বলেন, কোনো খুচরা ইয়াবা ব্যবসায়ী ও বহনকারীকে আত্মসমর্পণের জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়নি। যারা আত্মসমর্পণের জন্য পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে, তারা সবাই শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী ও গডফাদার।