নগরের বাকলিয়া থানার ভেড়া মার্কেটে সংঘটিত আগুনের কারণ এখনো বের করতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস । তবে বস্তিবাসীর দাবি, রাতের অন্ধকারে তিন যুবক এসে আগুন লাগিয়ে চলে যায়। আগুন লাগার কারণ বের করার জন্য চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী রুমা আক্তার জয়নিউজকে জানিয়েছেন, তিন যুবক এসে আগুন লাগিয়েছে, এ রকম ইঙ্গিত দিয়েছিলেন আগুনে পুড়ে যাওয়া এক মহিলা । তিনি এটি বলেই ঘরে ঢুকে পড়েন । আগুনের কারণে ঘর থেকে আর বের হতে পারেননি। বলার সুযোগ হয়নি সেই তিন যুবকের ব্যাপারে। আগুন লাগার আগে ওই বস্তির বেশ কয়েকটি কলোনিতে কালো পোশাকে আবৃত মুখোশধারী কিছু যুবককে নাকি ঘোরাফেরা করতে দেখেছিলেন তিনি।
রোববার (১৭ ফেব্রুয়ারি) আগুনে পুড়ে মারা গেছে নাসির কলোনির বাসিন্দা সুফিয়া বেগমের দেবরের স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে। তিনি জয়নিউজকে বলেন, ‘আমার দেবরের ঘরের (ফরিদ কলোনি) পাশ থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়। রহিমা ভাবির চিৎকার শুনে কলোনির লোকজন বিষয়টা জানতে পারে। পাশের বেড়া ভেঙে বড় দুই মেয়ে ও স্ত্রী রহিমাকে নিয়ে বেরিয়ে আসেন সুরুজ ভাই। আমার বাসায় আসার পরপরই রহিমা আপা তার ছোট দুই সন্তানকে উদ্ধারে আগুনের মধ্যেই নিজের ঘরে ছুটে যান। কিন্তু ঘরে প্রবেশ করে আর ফেরার উপায় ছিল না তার। এরপরই মা আর ভাই-বোনকে বাঁচাতে দৌড়ে ওই ঘরে প্রবেশ করে তার বড় মেয়ে নাজমাও। এরপর মেজ মেয়ে নার্গিস (১২) যখন ঘরে প্রবেশ করতে চাইল আমি তার হাত চেপে ধরলাম। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছি, কিছুই করার ছিল না।’
সুফিয়া বেগম জানান, বেশ কিছুদিন ধরে বস্তি ছাড়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু বাড়ির মালিকরা তাদের বিভিন্ন আশ্বাসে যেতে দেয়নি। শনিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরেও এ নিয়ে কানাঘুষা হয়েছে কলোনিতে, আর রাতে আগুন লাগল।
সুফিয়া বেগম বলেন, বিভিন্ন সময় পোশাকধারী বা পোশাকছাড়া পুলিশ আসে কলোনিতে। পার্টির ছেলেরাও আসে। শনিবার রাত ১২টার পর নাসির কলোনির পিছন দিক দিয়ে কয়েকজন বস্তিতে প্রবেশ করে। কিন্তু তাদের সবার মুখ বাঁধা ছিল, তাই চেনা যায়নি।
ক্ষুব্ধ সুফিয়া বলেন, ‘আগে যদি জানতাম, একটারেও যাইতে দিতাম না।’
এমন কথা শুধু সুফিয়া বেগমের নয়, বস্তির সবার মুখে মুখে। সাত্তার কলোনির বাসিন্দা নুর আয়শা বেগম বলেন, ‘রাত ১টার দিকে আমি টয়লেটে যাওয়ার জন্য উঠেছিলাম। দেখি গলির মুখে তিনজন মানুষ। সারা শরীরে কালো জামা। মুখটাও কালো রুমালে বাঁধা।’
তিনি আরও বলেন, ‘এর কিছুক্ষণ পর আমি শুনতে পাই, আগুন আগুন চিৎকার। পাঁচটা কলোনির ২০০ ঘর জ্বলতে আধঘণ্টাও লাগেনি।’
ভেড়া মার্কেটের পূর্বপাশে ছিল চটের দোকান। মার্কেটের পাশে চাক্তাই খাল। খালভর্তি পানি থাকা সত্ত্বেও রক্ষা পায়নি শতাধিক ঘর । আগুন লাগার ২০ মিনিটে পুড়ে ছাই হয়ে গেল ঘরগুলো। অঙ্গার হলো ৮টি তাজা প্রাণ। কিভাবে এত দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ল? কিভাবে ২০ মিনিটে শতাধিক ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেল! নানা প্রশ্ন এখন মানুষের মনে।