টাইগারপাসের সৌন্দর্য অক্ষুণ্ন রেখে দেশের অন্যতম বৃহৎ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে নগরের বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ।
বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বরে এ মানববন্ধন ও সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
সমাবেশে বক্তারা টাইগারপাসকে বাদ দিয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করার দাবি জানান। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তারা।
সভাপতিত্ব করেন সেভ টাইগারপাস মুভমেন্টের আহ্বায়ক বিপ্লব পার্থ। সংগঠনের সদস্য সচিব আদিল কবির চৌধুরী ও বায়েজিদ সুমনের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের চট্টগ্রাম জেলা শাখার সভাপতি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সিকান্দর খান, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি কলিম সরওয়ার, পরিবেশবিদ অধ্যাপক ড. মো. ইদ্রিস আলী, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি নাজিমুদ্দিন শ্যামল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক হালদা বিশেষজ্ঞ ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া, সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মহিউদ্দিন মাহিম, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাজীব নন্দী, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা খোরশেদ আহমেদ জুয়েল, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা হাবিবুর রহমান তারেক, কায়সার আলী চৌধুরী, সম্মিলিত সামাজিক সংগঠন পরিষদের সভাপতি ওসমান ফারুকী, সাধারণ সম্পাদক শরীফুল ইসলাম।
অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন হাজি মুহাম্মদ মহসিন কলেজ ছাত্রলীগ নেতা মায়মুন উদ্দিন মামুন, চট্টগ্রাম জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আতিক রিয়াদ, সমাজকর্মী অ্যাডভোকেট মীর মো. ফেরদৌস আলম সেলিম, নিলুফার ইয়াসমিন জয়িতা, শায়েলা আবেদিন, মিজানুর রহমান, ইসমাইল আলভী, ফাহিম আল শাহরিয়ার, মো. জাবেদ হোসেন চৌধুরী, এস এম ইফতেখার হোসাইন, খোরশেদুল আলম পিয়ারু, ফরহাদ জহির, আজিজ আরেফিন, জিয়াউল ইসলাম রিপন, রুবেল দত্ত, ইস্তিব আহমেদ, শহীদুল্লাহ সজীব, জায়মান মেহেদী, ফয়সাল কাসেমী, জামিউল ইসলাম মামুন, মো. শাকিল, জায়েদ উদ্দিন।
সভায় ড. মুহাম্মদ সিকান্দর খান বলেন, ‘আমরা উন্নয়নের বিপক্ষে নই, তবে পরিবেশ ধ্বংস করে কোন উন্নয়ন আমরা চাই না। একটি নগরের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড গ্রহণের আগে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করতে হয়। কিন্তু চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ তা না করে তাদের খেয়াল খুশিমতো প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এর আগেও তারা অপরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প শুরু করে। আমরা জানি, প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি একজন পরিবেশবান্ধব প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীকে হয়তো এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়নি। তিনি যদি জানেন যে, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট করে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি করা হচ্ছে তাহলে তিনি ব্যথিত হবেন। আশা করি চট্টগ্রামের মানুষের হৃদয়ের কথা তার কানে পৌঁছাবে।
কলিম সরওয়ার বলেন, ‘চট্টগ্রাম হচ্ছে পাহাড়, নদী ও সাগর বেষ্টিত সৌন্দর্যের নগরী। এই তিনটি উপাদানের একটিও যদি নষ্ট হয়, তাহলে চট্টগ্রাম তার মৌলিকতা হারাবে। আর চট্টগ্রামবাসী হিসেবে আমরা তা হতে দেব না। সিডিএ চেয়ারম্যানের প্রতি অনুরোধ থাকবে, এখনো সময় আছে, বিষয়টি নিয়ে আরো ভাবুন।’
নাজিমুদ্দিন শ্যামল বলেন, ‘টাইগারপাসকে বাদ দিয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে তৈরির সুযোগ রয়েছে। সুতরাং পাহাড় ধ্বংস বা তার সৌন্দর্য ধ্বংসের কোন প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি না। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি বিষয়টি তদারকি করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি।’
ইদ্রিস আলী বলেন, ‘মানুষ হিসেবে আমরা বেঁচে থাকতে হলে পরিবেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে হবে। বৈরিতা নিয়ে পরিবেশের সঙ্গে টিকে থাকা অসম্ভব। সিডিএ যে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তা আত্মঘাতী। পাহাড় ধ্বংসের মাধ্যমে যে উন্নয়ন, তা জনগণ চায় না। কর্ণফুলী রক্ষায় যেমন উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে ঠিক তেমনি টাইগারপাস রক্ষায়ও সরকারের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। তা না হলে জনবিস্ফোরণ ঘটবে।’
সেভ টাইগারপাস মুভমেন্টের আহ্বায়ক বিপ্লব পার্থ বলেন, ‘চট্টগ্রামের অপরূপ সৌন্দর্য এবং সবুজবেষ্টিত প্রাকৃতিক মনোরম পাহাড়ভূমির নাম টাইগারপাস। চট্টগ্রামে অবস্থিত পাহাড় এবং বৃক্ষবেষ্টিত চিরহরিৎ এই এলাকাটি দেখে মুগ্ধ হন না এমন মানুষ বিরল। এই সড়কের মোড়ে বাংলাদেশের জাতীয় পশু রয়েল বেঙ্গল টাইগারের ভাস্কর্য রয়েছে। এছাড়া রাস্তার একপাশে রয়েছে কৃত্রিম ঝরনা। পাহাড়টির প্রাকৃতিক আবেদন এককথায় নয়নাভিরাম। আমাদের শঙ্কা, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করতে গিয়ে এই পাহাড়ের স্বাভাবিক সৌন্দর্য নষ্ট হবে। তাই ব্যস্ত কোলাহলময় শহরে পুরোদস্তুর অবকাশ কাটানোর জন্য উপযোগী এই টাইগারপাসকে বাদ দিয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মিত হলে সেটি অধিকতর পরিবেশসম্মত হবে বলে সচেতন মহল মনে করে। যদি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে টাইগারপাসের পর থেকে শুরু হয় তাহলে শহরের মনোরম সৌন্দর্য অক্ষুণ্ন থাকবে।
সমাবেশে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন নেতৃবৃন্দ। এসময় শিগগির এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানান তারা।