‘নগরে বসবাস করতে গিয়ে মাসের বেতন শেষ হয়ে যাচ্ছে বেশিরভাগ চাকরিজীবীর । অনেকের মাস শেষে ঋণ করে চলতে হয়। ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখার খরচ চালতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়। চিকিৎসাব্যয় ও সামাজিক অনুষ্ঠান সামলাতে গিয়ে পড়তে হয় বেকায়দায়। যে বেতন পাই তার অর্ধেক চলে যায় বাড়িভাড়ায়। বড় কষ্টের মধ্যে পার করছি দিন । পারছি না সইতে, পারছি না চিৎকার করবে বলতে।’
কথাগুলো বলেছেন বেসরকারি একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা। তাঁর নাম মো. ওয়াহিদ। তিনি ৩০ হাজার টাকা বেতনের চাকরি করেন । বসবাস করেন নগরের চন্দ্রিমা আবাসিকের একটি ভাড়া বাসায়। প্রতিমাসে তাকে বাড়িভাড়া বাবদ দিতে হয় সাড়ে ১৫ হাজার টাকা। এছাড়া আছে গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ বিল। সবমিলিয়ে বেতনের অর্ধেকের বেশি অংশ মাসের শুরুতেই চলে যায়।
এ সমস্যা শুধু মো. ওয়াহিদের নয়, চট্টগ্রামে বসবাসকারী বেশিরভাগ ভাড়াটিয়ার মাসের শুরুতে বেতনের বা আয়ের বেশিভাগ বাড়িওয়ালার হাতে তুলে দিতে হয়। লাগামহীন বাড়িভাড়ার কারণে বিপর্যস্ত নিম্ন ও মধ্যআয়ের মানুষ।
নগরের জামাল খানে পরিবার নিয়ে থাকেন বেসরকারি চাকরিজীবী জামিল হোসেন। তিনি বলেন, বেতন যা পাই তার অর্ধেকের বেশি মাসের শুরুতে বাড়িওয়ালার হাতে তুলে দিতে হয়। প্রতিবছরই ভাড়া বাড়ছে। নগরের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ ভাড়া বাসায় থাকেন এবং বাড়িওয়ালার কাছে তারা জিম্মি।
তিনি আরও বলেন, ৩৩ হাজার টাকা বেতন পাই। এরমধ্যে বাসা ভাড়া ১৪ হাজার টাকা আর গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎবিল মিলে প্রায় ১৮ হাজার টাকা পড়ে। বাকি টাকায় সংসার চালাতে হয়। যার মধ্যে খাওয়া-দাওয়া, সন্তানের পড়ালেখার খরচ, চিকিৎসাব্যয়- সবই করতে হয়। সরকারের উচিত এ বিশাল সংখ্যক মানুষের কথা বিবেচনা করে বাড়িভাড়া আইন সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ বিষয়ক সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এস এম নাজের হোসেন জয়নিউজকে বলেন, প্রতিবছর জানুয়ারি এলেই বাড়িভাড়া বাড়ে। কিন্তু ১৯৯১ সালের বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী, দুই বছর আগে ভাড়া বাড়ানো যায় না। যাবে না জামানত নেওয়াও। এরজন্য ভাড়াটিয়া ও মালিকপক্ষকে চুক্তিবদ্ধ হতে হয়। কিন্তু আইন থাকলেও কোনো বাড়ির মালিক তা মানছে না।
নাগরিক জীবনে বাড়িভাড়া বিড়ম্বনা নিত্য-নৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোনো কারণ ছাড়াই ভাড়া বাড়ানো, বাড়িওয়ালাদের দাপট বা স্বেচ্ছাচারিতায় অসহায় নগরের মানুষ।এতে বিশেষ করে চাকরিজীবিরা বেকায়দায় পড়ছেন। তাদের বেতনের অর্ধেক বাড়িভাড়ায় চলে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে ভাড়াটিয়া পরিষদের সভাপতি বাহরানে সুলতান বাহার বলেন, লাগামহীন বাড়িভাড়া বৃদ্ধি রোধে প্রয়োজন আইনের সঠিক প্রয়োগ। প্রতিবছরই ভাড়া বৃদ্ধি করে চলেছে মালিকরা। তাদের কাছে অসহায় ভাড়াটিয়ারা। এ সমস্যা সমাধানে আইনের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সরকারকে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। যাঁতাকলে পড়া ভাড়াটিয়াদের সমস্যা সমাধানে সিটি করপোরেশনকে মনিটরিংয়ের পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে হবে। এ সমস্যার সমাধান এখনই করা না গেলে আগামীতে আরও অসহায় হয়ে পড়বে ভাড়াটিয়ারা।
জয়নিউজ/আরসি