লাখো পর্যটকের পদভারে প্রাণ ফিরেছে বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকতের শহর কক্সবাজারে। সকালে পর্যটকেরা দলবেঁধে সমুদ্রসৈকতের কোমর সমান পানিতে নেমে গোসল করছেন। বিকেলে সৈকতে দাঁড়িয়ে পশ্চিমাকাশে অস্ত যাওয়া লাল সূর্য দেখছেন। আর অন্যসময় পাহাড়-নদী-সাগর আর পাহাড়ি ঝর্ণা ঘুরে দেখে সময় পার করছেন পর্যটকেরা।
২১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিনদিন সরকারি ছুটি থাকায় ভরপুর হয়ে আছে এখানকার হোটেল-মোটেল, গেস্ট ও রেস্টহাউসগুলো। পদচারণা বেড়েছে সৈকতের বালিয়াড়িতেও।
পর্যটকদের অনেকে মেরিনড্রাইভ সড়ক হয়ে যাচ্ছেন হিমছড়ি-ইনানী। আবার অনেকে ট্রলার ও জাহাজে ছুটছেন প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন, সোনাদিয়া আর মহেশখালী।
হোটেল-মোটেল মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পর্যটকরা কক্সবাজার এলে শুধু শহরের সমুদ্রসৈকতেই ঘুরে বেড়ান না, পাশাপাশি ইনানীর পাথুরে সৈকত, হিমছড়ির পাহাড়ি ঝর্ণা ও দরিয়ানগর পর্যটনপল্লী, টেকনাফের মাথিনকূপ, কুদুমগুহা, নেচার পার্ক, নাফ নদীর জালিয়াদ্বীপ, মিয়ানমার সীমান্ত, প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন, ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক, রামুর বৌদ্ধপল্লীসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ভ্রমণে যান।
এছাড়াও পর্যটকদের সমুদ্রদর্শনের জন্য সৈকতের লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্টে চেয়ার ও ছাতাগুলো সাজিয়ে বসানো হয়েছে। পর্যটকরা সমুদ্র দর্শনের জন্য চেয়ারে বসলে হকার কিংবা বখাটেরা যাতে উৎপাত না করে, সেদিকে বিশেষ নজরও রাখা হচ্ছে। পর্যটকের সঙ্গে ভালো আচরণ করার জন্য কর্মচারীদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল ও রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ জয়নিউজকে জানান, ছুটির দিনে বাড়তি আনন্দ উপভোগ করতে প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে কক্সবাজারে এসেছেন লাখের উপরে পর্যটক। তাদের মাঝে জেলার বিভিন্ন উপজেলা এবং আশপাশের জেলা ও উপজেলা থেকে এসেছে আরও ২০-২৫ হাজার ভ্রমণপিপাসু।
হোটেল মালিকেরা বলেন, পর্যটকের এই ‘দৌড়ঝাঁপ’ ২৩ থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
হোটেল-মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার জানান, দুদিন আগ থেকে কক্সবাজার ভ্রমণে এসেছে এক লাখ ২০ হাজারেরও বেশি পর্যটক। এ কারণে সৈকত তীর ও শহরের বিভিন্ন স্থানের চার শতাধিক হোটেল-মোটেল গেস্টহাউসের কোনোটিতেই কক্ষ খালি নেই। সৈকতের লাবণী পয়েন্টে গিয়ে দেখা গেছে, কয়েক কিলোমিটারের বিশাল সৈকত লাখো পর্যটকে ভরপুর।
ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে ভ্রমণে আসা কলেজছাত্রী তাহসিনা জয়নিউজকে বলেন, বাস থেকে নেমেই এ সৈকতে ছুটে এসেছি। সমুদ্রে নেমে গোসল করে হোটেলে ফিরে গেছি। বিকেলে আবার এসেছি অস্ত যাওয়া লাল সূর্য দেখতে। শনিবার রাতের বাসে ঢাকায় ফিরে যাব।
হোটেল দি কক্স টুডের ব্যবস্থাপক আবু তালেব শাহ জানান, ছুটি কাটাতে আসা পর্যটকদের জন্য সৈকততীরের ছোট-বড় সব হোটেল অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। এখন কক্ষ না পেয়ে বহু পর্যটক দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
সৈকতের ছাতা ব্যবসায়ী মাহাবুবুর রহমান জানান, সৈকতের কলাতলী থেকে শৈবাল পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটারে পর্যটকদের বালুচরে বসে সমুদ্র বিনোদন উপভোগের জন্য তারা অন্তত তিন হাজার ছাতা চেয়ার বসিয়েছেন। কিন্তু পর্যটকের উপচে’ পড়া ভিড়ে অনেককে তারা চেয়ার দিয়ে সন্তুষ্ট করতে পারছেন না।
ট্যুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান জয়নিউজকে বলেন, ‘লাখো পর্যটক নিরাপদে এবং নিবিঘ্নে সৈকত ঘুরতে পারছেন, এতে আমরা খুশি। পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা প্রতিটি পয়েন্টে নিয়োজিত রয়েছেন। আমরা চাই পর্যটকের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে পর্যটনশিল্প বহুদূর এগিয়ে যাক।