পাক-ভারত যুদ্ধ কি শুরু হয়েছে? উপমহাদেশের চলতি সপ্তাহের সবচেয়ে আলোচিত বহিঃরাষ্ট্রীয় প্রশ্ন এটি। পাকিস্তান বলছে, তারা দুটি ভারতীয় যুদ্ধবিমানকে ভূপাতিত করেছে, দু’জন পাইলটকে আটক করেছে। ভারত বলছে, তারা পাকিস্তানের একটি বিমান ভূপাতিত করেছে এবং তাদের একজন পাইলট নিখোঁজ আছে। মঙ্গলবার পাকিস্তানের বালাকোটে বিমান হামলা চালায় ভারত। ১৪ই ফেব্রুয়ারি ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পুলওয়ামাতে এক জঙ্গি হামলায় ৪০ জন ভারতীয় সেনা নিহত হয়। কাশ্মীর নিয়ে দুটি প্রতিবেশী দেশের মধ্যে এর আগে দুটি যুদ্ধ এবং একটি সীমিত সংঘর্ষ হয়েছে।
আনন্দবাজার পত্রিকা লিখেছে, তুমুল উত্তাপের মুখে আচমকা শান্তির কথা বলতে শুরু করল পাকিস্তান। পাক বাহিনীর প্রধান মুখপাত্র (ডিজি, আইএসপিআর) মেজর জেনারেল আসিফ গফুর সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে জানালেন, পাকিস্তান শান্তি চায়। ভারতকে বুঝতে হবে যে, যুদ্ধ হল নীতিগত ব্যর্থতা— বার্তা মেজর জেনারেল গফুরের। বুধবার সকালে কোনও সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ছাড়াই ভারতীয় আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে পাক বায়ুসেনা, বোমাও ফেলেছে ভারতীয় ভূখণ্ডে। পাকিস্তানের এই পদক্ষেপকে সরাসরি সামরিক পদক্ষেপ হিসাবেই দেখছেন ভারতীয় প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে জরুরি বৈঠকও শুরু করেছেন। তার পরই ইসলামাবাদ বলল, পাকিস্তান যুদ্ধ চায় না।
প্রসঙ্গত, ১৯৪৭ সালে ১৫ই আগস্ট স্বাধীনতার ফলে ভারত প্রজাতন্ত্র ও ইসলামী প্রজাতন্ত্রী পাকিস্তান দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের বিকাশ ঘটে। তারপর থেকে দুটি দেশের মধ্যে বিভিন্ন যুদ্ধ হয়। তার মধ্যে বাংলাদেশ-পাকিস্তান যুদ্ধ ১৯৭১ ছাড়া সকল যুদ্ধই কাশ্মীর সমস্যাকে কেন্দ্র করে ঘটেছে।
সম্প্রতি কাশ্মীরের পুলওয়ামায় আত্মঘাতি হামলার পর জইশ-ই মুহাম্মদ সেই হামলার দায় স্বীকার করেছিল। ভারতীয় সরকার ও সেনাবাহিনী বলছে, হামলাকারীরা এসেছে পাকিস্তান থেকে আর এখন সময় এসেছে তাদের দাঁতভাঙা জবাব দেওয়ার। ওই সংগঠনকে গুঁড়িয়ে দিতে জঙ্গি আস্তানায় ভারতের পাল্টা হামলা করে। পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানের ফের হামলা করে। এ সবকিছুর পরিণতিতে আবারো অশান্ত হয়ে উঠেছে উপমহাদেশের রাজনীতি।
ডয়েচে ভেলে জানিয়েছে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে হামলা-পালটা হামলার কারণে ইতিমধ্যে দুই দেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে৷ শ্রীনগর ছাড়া আরো তিনটি সীমান্তবর্তী বিমানবন্দর বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে ভারতের বিমানবাহিনী৷ ভারতীয় সূত্রমতে, পাকিস্তানের তিনটি বিমান ভারতীয় আকাশে এসে পড়লেও তাদের ফেরত পাঠাতে সক্ষম হয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী৷ পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ ফয়সাল এবিষয়ে বলেন, ‘‘এই হামলা আমাদের অধিকার, ইচ্ছা ও নিজেদের রক্ষার্থে ক্ষমতা ব্যবহারের প্রতিফলন৷ আমরা হামলা চাই না, কিন্তু পরিস্থিতির জবাব দিতে পিছপা হব না৷”
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরে বৈরি সম্পর্ক থাকা দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ১৪ ফেব্রুয়ারির হামলার পর থেকে উত্তেজনা আরো বেড়েছে৷ কাশ্মীর অঞ্চলেরনিয়ন্ত্রণ নিয়ে অতীতে দু’বার যুদ্ধে লিপ্ত হয় ভারত ও পাকিস্তান৷