১৯৭১ সালে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য যতই আলোচনা-সমালোচনা হোক না কেন, জামায়াতে ইসলামী এখনই জাতির উদ্দেশ্যে ক্ষমা চাইবে না। এমনকি একাত্তর প্রসঙ্গে আপাতত পজেটিভ-নেগেটিভ কোনো মন্তব্যও করবে না।
শুধু তাই নয়, জামায়াতের যেসব নেতা স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে প্রশ্ন তুলবে আপাতত তাদের সঙ্গে সর্ম্পক ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটির কেন্দ্রীয় মজলিসে সুরা।
এর মাধ্যমে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি দলে কঠোর বার্তা দিতে চায় দলটি। কারণ জামায়াতে ইসলামী মনে করে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ইতিপূর্বে জামায়াতের যেসব নেতার ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে তাদের সম্মান জানাতে তারা এখনই ক্ষমা চাইবে না।
তাদের মতে, এখনই জামায়াত বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য ক্ষমা চাইলে যাদের বিচার হয়েছে সেগুলো সঠিক বলে প্রমাণিত হবে। শুধু তাই নয়, ক্ষমা চাওয়ার পর জামায়াতের রাজনীতি আরো কঠিন হবে বলেও মনে করে তারা। এ কারণে পরিস্থিতি মনিটরিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
জানা গেছে, জামায়াতের রাজনীতি নিয়ে ২০ দলের নেতাদের কে-কি বলছেন সেগুলোও মনিটরিং করছে দলটি। ২০ দলীয় জোটের বৈঠকে জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে বিএনপির যেসব নেতা প্রকাশ্যে বক্তব্য দিয়েছেন এর ব্যাখা চাওয়া হবে বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর থেকে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদ সদস্য ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের জয়নিউজকে বলেন, ক্ষমা চাওয়া-না চাওয়া বিষয় না। আমরা আমাদের মতো কাজ করছি। যেহেতু আমাদের সব অফিস বন্ধ তাই কাজ হচ্ছে অগোছালোভাবে। দলের জন্য যা প্রয়োজন তার সবটাই করবো আমরা।
একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, আমরা যুদ্ধের পরবর্তী প্রজন্ম। আমাদের মধ্যে সবকিছু নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তবে মৌলিক কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারিনি। হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না।
জানা গেছে, নতুন নামে সংগঠনের প্রক্রিয়া প্রায় শেষদিকে। সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি বিশেষ কমিটি এজন্য কাজ করছে। কমিটির প্রতিবেদনের পরই আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেবে জামায়াত। তবে আপাতত জামায়াত কোনোভাবেই ক্ষমা চাইবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এদিকে জামায়াতের একাধিক দায়িত্বশীল নেতা এ প্রতিবেদকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ক্ষমা চেয়ে এ মুহূর্তে বিপদে পড়তে চায় না জামায়াত। হুট করে একাত্তরের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য ক্ষমা চাইলে এর ফল পজেটিভ হওয়ার বদলে নেগেটিভ হতে পারে। কারণ সম্প্রতি জামায়াতের শীর্ষ নেতা ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক পদত্যাগ করায় দলে একধরনের ক্ষত তৈরি হয়েছে। ব্যারিস্টার রাজ্জাককে অনুরোধ করার পরও গণমাধ্যমে যেভাবে খোলামেলা মন্তব্য করেছেন তাতে জামায়াতের বেশ ক্ষতি হয়েছে । ইতোপূর্বে জামায়াতে ইসলামীতে পদত্যাগ নিয়ে কখনোই জটিলতা সৃষ্টি হয়নি। কিন্তু হঠাৎ জামায়াতের বেশ কয়েকজন নেতা পদত্যাগ করায় দলে আস্থার সংকট চলছে।
এদিকে সংস্কারের দাবি তোলা দলটির ছাত্রশিবিরের সাবেক বহিষ্কৃত সভাপতি ও জামায়াতের ঢাকা মহানগর মজলিসে সুরার অন্যতম সদস্য মজিবুর রহমান মঞ্জু জয়নিউজকে বলেন, দল থেকে বহিষ্কার করে জামায়াত আমাকে সব বন্ধন থেকে মুক্তি দিয়েছে। এখন আমি সব বলতে পারবো। কেননা জামায়াতের ভেতরে নবীন-প্রবীণদের একটি বিশাল অংশই দলে সংস্কারের পক্ষে। তাদের অনেকেই একাত্তরে জন্মও নেননি। কোনো অপরাধ না করে তারা দায় নিতে রাজি নন।
অতীত ভুলের জন্য জামায়াতে ইসলামী জাতির কাছে ক্ষমা না চাইলেও তিনি ব্যক্তিগতভাবে ব্যথিত বলে মন্তব্য করেন।