একটু সুখের আশায় ও ছেলে-মেয়ের মুখে হাসি ফোটাতে জীবনযুদ্ধে সফলতার মুখ দেখেছেন বীণা রাণী ত্রিপুরা। এলাকার মানুষ তাকে ‘সংগ্রামী রাণী’ বলে ডাকে। শত প্রতিকূলতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে তিনি আজ প্রতিষ্ঠিত এবং তার হাত ধরে আত্মনির্ভরশীল আরো অনেক অসহায় নারী।
বীণা রাণী ত্রিপুরার জন্ম খাগড়াছড়ি শহরের খাগড়াপুর রমণীপাড়া গ্রামে। ১৯৯৬ সালে ৭ম শ্রেণিতে পড়ার সময় বাবা-মা’র পছন্দের পাত্রকে বিয়ে করতে বাধ্য হন বীণা। ২০১৫ সালে স্বামী তাকে ছেড়ে চলে যায়। পরে স্বামীর সঙ্গে তার ডিভোর্স হয়। এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েন বীণা। ভেবে পাচ্ছিলেন না, কি করবেন।
শুরু হয় তার জীবন সংগ্রাম। এক মাসির পরামর্শে সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ নেন যুব উনয়ন অধিদপ্তর থেকে। ছয় মাস প্রশিক্ষণ শেষে যুব উন্নয়ন থেকে ঋণ নিয়ে শুরু করেন হেমি টেইলার্স এন্ড ট্রেনিং সেন্টার নামের একটি দোকান। মেয়েদের ব্লাউজ, থ্রি-পিস, ছোট মেয়েদের ফ্রক, ড্রেস প্রভৃতি সেলাইয়ের পাশাপাশি প্রশিক্ষণ দেন বেকার-অসহায় মেয়েদের।
তার কাজের মান ও শেখানোর আগ্রহ দেখে তার কাছে কাজ শিখতে আসতে থাকে অনেকে। এদের অনেকে এখন স্বাবলম্বী। রাঙামাটি জেলার দুর্গম সাজেক থেকেও অনেক বেকার নারী তার কাছে কাজ শিখে এখন নিজ এলাকায় কাজ করছে।
বীণা রাণী জানান, কাজ শিখে যারা তার দোকানে কাজ করতে চায়, তাদের তিনি একটা নির্দিষ্ট বেতনে কাজের সুযোগ দেন। আর যারা নিজ এলাকা বা বাড়িতে কাজ করতে চায়, তাদের তিনি সেলাই মেশিন ক্রয়ে সহযোগিতা করেন। যদি সরকারিভাবে কম সুদে নারীদের ঋণ দেওয়া হয় তাহলে এই নারীরা তাদের চাহিদামতো আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারবে। এতে তারা আরো অনেকদূর এগিয়ে যেতে পারবে বলে তিনি মনে করেন।
গত ১ নভেম্বর ২০১৮ একজন সফল আত্মকর্মী হিসেবে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে সম্মাননা পান বীণা রাণী। প্রধানমন্ত্রী তার হাতে এ সম্মাননা তুলে দেন।
এখন ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে সুখের সংসার বীণার। বড় ছেলে অর্কিড ত্রিপুরা বর্তমানে স্থাপত্যবিদ্যা ২য় বর্ষে আর মেয়ে হেমি ত্রিপুরা খাগড়াছড়ি পুলিশ লাইন স্কুলে ৮ম শ্রেণিতে পড়াশুনা করছে।
সম্মাননা পাওয়ার পর এলাকার সকলের কাছে তিনি একটা মডেল। তার দাবি, সরকার যেন সকল অসহায়-সংগ্রামী নারীদের এগিয়ে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে।