দু’বছর আগে ভালোবেসে বিয়ে করেন একে অপরকে। সেই ভালোবাসা নিজ হাতে নিঃশেষ করে দিলেন সঙ্গী। স্ত্রী খুনের তরতাজা দায় নিয়ে স্বেচ্ছায় পুলিশ স্টেশনে গিয়ে আত্মসমর্পণও করে ফেললেন তিনি। রাগের মাথায় স্ত্রীকে খুন করে থানায় আত্মসমর্পণ এবং হাজতে বসে নামাজও আদায়! সব দেখে-শুনে বিস্মিত খোদ পুলিশ সদস্যরা! বাকিটুকু শোনা যাক স্বেচ্ছায় অভিযুক্ত স্বামীর মুখে। পড়ুন জয়নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক রুবেল দাশ’র প্রতিবেদনে-
নাম তার আল-আমিন, বয়স ২৭। স্ত্রীর নাম রেজিয়া বেগম, যার বয়স ২৪। ২০১৭ সালে যখন তাদের বিয়ে হয়, রেজিয়া তখন নগরের রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা’র (ইপিজেড) একটি প্রসিদ্ধ জিন্সের ফ্যাক্টরির কর্মী। ভালোবাসা যুক্তি মানে না, বেকার আল-আমিনের সাথে জীবন শুরু করে দেন রেজিয়া। সেই থেকে রেজিয়ার আয় দিয়েই চলত সংসার। দিন যায়, মাস আসে; দরজা দিয়ে অভাব যখন টোকা দিল, ভালোবাসা তখন জানালা গলিয়ে পালালো। স্বামীর বেকার দশা নিয়ে প্রথম প্রথম মানিয়ে নিলেও সময় গড়াতেই রেজিয়ার সঙ্গে শুরু হয় মনোমালিন্য। ভালোবাসায় চিড়ে ভিজলো না, সংসারের জাঁতাকলে বেকারত্বের ফাঁদে তীরবিদ্ধ হয়ে পড়লেন স্বামী।
অতপর, স্বামীর প্রেমিক মন হয়ে উঠল বিক্ষুদ্ধ। যে হাতে আরেকটি হাত ধরে নতুন জীবনের পথচলা শুরু হয়েছিল, সেই হাত পরিণত হলো হাতিয়ারে।
মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) সকালে আল-আমিনকে ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দেয় রেজিয়া। সহ্য করতে না পেরে রাগের মাথায় রেজিয়ার বস্ত্র (ওড়না) দিয়ে গলা চেপে ধরে আল-আমিন। নিজেকে বাঁচানোর প্রানান্ত চেষ্টা করে রেজিয়া। কিন্তু কিছুতেই পেরে ওঠেনি আল-আমিনের সঙ্গে। কিছুক্ষণের মধ্যেই নিস্তেজ হয়ে যায় রেজিয়ার শরীর। লাশে পরিণত হয় জীবন্ত রেজিয়া। রেজিয়ার নড়াচড়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর আল-আমিন বুঝতে পারে ততক্ষণে স্ত্রীকেই খুন করে ফেলেছে সে।
ভালোবাসার মানুষটিকে মুহূর্তের উত্তেজনায় খুন করে অনুশোচনা শুরু হয় আল-আমিনের মধ্যে। স্ত্রী’র লাশ ঘরে তালাবন্দি করে আল-আমিন ছুটে যায় থানায়। পুলিশের কাছে অকপটে স্বীকার করে নিজের স্ত্রীকে খুন করার কথা। তার কথা শুনে পুলিশও হতচকিত হয়ে যায়। পরে আল-আমিনকে সঙ্গে নিয়ে ঘরে গিয়ে রেজিয়ার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার সকালে নগরের ইপিজেড থানাধীন নিউমুরিং এলাকায়। নিজের স্ত্রীকে রাগের মাথায় খুন করে থানার হাজতে বসে নামাজও আদায় করেন আল-আমিন। এসব দেখে থানার পুলিশ সদস্যরাও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
নিহত রেজিয়া কুতুবদিয়ার মো. লোকমানের মেয়ে। বান্দরবান জেলার লামার বাসিন্দা মো. সিরাজুল ইসলামের ছেলে আল-আমিনের সঙ্গে ২০১৭ সালে বিয়ে হয় রোজিয়ার। বিয়ের পর তারা নগরের নিউমুরিং এলাকার জাকির ভবনে ভাড়া বাসায় বসবাস করত।
এই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে সাধারণ ডায়রি (জিডি) দায়ের করে। সেই জিডি’র ভিত্তিতে দায়িত্বরত তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ইপিজেড থানার এসআই নাছির উদ্দিন জয়নিউজকে বলেন, মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আল-আমিন থানায় এসে এদিক-সেদিক ঘুরতে থাকে। এসময় একজন পুলিশ সদস্য তাকে ঘোরাঘুরির কারণ জিজ্ঞেস করলে সে পুরো ঘটনা খুলে বলে। পরে তাকে আমার কাছে নিয়ে আসে। বিস্তারিত শুনে প্রথমে বিশ্বাস হয়নি। পরে তাকে নিয়ে তার বাসায় গেলে রেজিয়ার লাশ পড়ে থাকতে দেখি। এরপর সুরতহাল করে লাশ উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়।
তিনি আরো বলেন, পারিবারিক কলহের কারণে স্ত্রীকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে খুন করেছে বলে জানিয়েছে আল-আমিন। স্ত্রীকে খুন করে ঘরে তালা মেরে সে থানায় চলে আসে। প্রতিবেশীরাও জানত না যে ঘরে রেজিয়ার লাশ পড়ে আছে। পরে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে।
খুনের কারণ বিষয়ে জানতে চাইলে আল-আমিন জয়নিউজকে বলেন, ’আমি আমার স্ত্রীকে অনেক ভালোবাসি। আমি কোনো কাজ করতাম না। আমার স্ত্রী’র টাকায় চলত সংসার। এ নিয়ে আমাদের মধ্যে প্রায় প্রতিদিন ঝগড়া হত। মঙ্গলবার সে আমাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দেয়। ব্যাগ গুছিয়ে বাসা থেকে চলে যাওয়ার সময় আমি তাকে রাগের বশে ওড়না দিয়ে গলায় পেঁচিয়ে ধরি। কিছুক্ষণ পর তার মুখ দিয়ে রক্ত চলে আসে। আমি বুঝতে পারি রেজিয়া মারা গেছে। আসলে আমার স্ত্রী আমাকে ছেড়ে চলে যাবে এটা আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি। তাই রাগের মাথায় এটা হয়ে গেছে। পরে আমি থানায় এসে আত্মসমর্পণ করি। আমি অনুতপ্ত’!