প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে এখন মা মাছের ডিম ছাড়ার ভরা মৌসুম। এ সময়ে নদীতে মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা অমান্য করে জাল ও বড়শি দিয়ে নদী থেকে অবাধে মাছ শিকার চলছে। এছাড়া নিষোধাজ্ঞা অমান্য করে নদীতে চলছে যান্ত্রিক নৌযান ।
চৈত্র মাসের শুরু থেকে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত হালদা নদীতে মা মাছের ডিম ছাড়ার ভরা মৌসুম । ডিম ছাড়ার মৌসুমে প্রচণ্ড বৃষ্টি ও বজ্রপাত হয়ে নদীতে উজান থেকে পানির প্রবল স্রোত নেমে এলে হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ে। নদীতে ডিম ছাড়লে রাউজান ও হাটহাজারী উপজেলার ডিম সংগ্রহকারী ও মৎসজীবীরা নৌকা নিয়ে জাল দিয়ে ডিম সংগ্রহ করবে। ডিম সংগ্রহের পর নদীর তীরে খনন করা মাটির কুয়া ও পাকা হ্যাচারিতে সংগ্রহ করা ডিম রাখবে। এরপর ডিম থেকে রেনু ফোটানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়বে ডিম সংগ্রহকারী ও মৎস্যজীবীরা। ডিম থেকে রেনু ফুটানোর পর ডিম সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে চট্টগ্রাম জেলা ও বিভিন্ন জেলার মৎস্য প্রকল্পের মালিক ও মাছচাষিরা রেনু কিনে নিয়ে তাদের মৎস্য প্রকল্পে কিংবা পুকুর-জলাশয়ে ফেলে চাষ করবে ।
এদিকে হালদা নদীকে মাছের অভয়াশ্রম ঘোষণা করে মৎস্য মন্ত্রণালয় হালদা নদীর নাজিরহাট থেকে কালুরঘাট হালদা নদীর মোহনা পর্যন্ত ৪৮ কিলোমিটার এলাকায় সারা বছর মাছ শিকার নিষিদ্ধ করে । ডিম ছাড়ার মৌসুমে নিষিদ্ধ করা হয় যান্ত্রিক নৌযান চলাচল।
তবেে এ নিষোধাজ্ঞা অমান্য করে রাউজানের কচুখাইন, মোকামীপাড়া, সার্কদা, হারপাড়া, মইমকরম, উরকিরচর, সওদাগরপাড়া, খলিফার ঘোনা, পশ্চিম আবুর খীল, মগদাই সুইস গেইট, আজিমের ঘাট, কাসেম নগর, কাগতিয়া, পশ্চিম বিনাজুরী, দক্ষিণ গহিরা, পশ্চিম গহিরা মঘামাস্ত্রী বড়ুয়াপাড়া, বদুর ঘোনা, কোতোয়ালী ঘোনা, নদীমপুর কাজীপাড়া, ইন্দিরা ঘাট, পশ্চিম ফতেহ নগর হাটাহাজারী উপজেলার লাঙ্গলমোড়া, ছিপাতলী, রুহুল্ল্যাপুর, মেখল, গড়দুয়ারা, আমতোয়া বাড়ীঘোনা, মাদারসা, দক্ষিণ মাদারসা ও নগরের মোহরা এলাকায় হালদা নদীতে বড়শি, কারেন্ট জাল ও হাত জাল দিয়ে মাছ শিকার চলছে ।
নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাছ শিকার করার ফলে হালদা নদীতে ডিম ছাড়তে আসা মা মাছ শিকারীদের জালে ও বড়শিতে ধরা পাড়ার আশঙ্কা রয়েছে । একইসঙ্গে হুমকির মুখে পড়েছে মা মাছের প্রজনন।
সরেজমিন হালদা নদী ঘুরে দেখা যায়, দক্ষিণ গহিরা মোবারকখীল হ্যাচারিটি মেরামতের কাজ চলছে। পশ্চিম গহিরা ও কাগতিয়া অচল হয়ে যাওয়া হ্যাচারির মেরামতের কোনো কাজ করছে না। দক্ষিণ গহিরা মোবারকখীল এলাকা হাটহাজারীর গড়দুয়ারার মধ্যবর্তী স্থানে হালদা নদীতে চারটি যান্ত্রিক নৌযান নোঙর করে নদী থেকে বালু উত্তোলন করছে। দক্ষিণ গহিরা সিপাহির ঘাট ও গড়দুয়ারা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মাণাধীন বাঁধের পাশে নদী থেকে হাত জাল দিয়ে কয়েকজন মাছ শিকার করছে।
হালদা নদীতে মাছ শিকার করার সময় রাউজান উপজেলা মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তা শিমুল বড়ুয়া জয়নিউজকে জানান, ইতিমধ্যে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুহুল আমিন অভিযান চালিয়ে নদীর হাটহাজারী ও রাউজান অংশ থেকে ৪১ হাজার মিটার কারেন্ট জাল উদ্ধার করেছে। এছাড়া হালদা নদীতে যান্ত্রিক নৌযান চলাচল বন্ধ ও মাছ শিকার বন্ধে রাউজান উপজেলা মৎস্য বিভাগ নিয়মিত অভিযান চালিয়ে আসছে।
উপজেলা মৎস্য বিভাগের জনবল কম ও যান্ত্রিক সহায়তা পর্যাপ্ত না থাকায় হালদা নদীর নির্দিষ্ট ৪৮ কিলোমিটার নদী পাহারা দেওয়া সম্ভব নয় বলে উল্লেখ করেন শিমুল বড়ুয়া ।
রাউজান পৌরসভার দ্বিতীয় প্যানেল মেয়র বশির উদ্দিন খান জয়নিউজকে বলেন, হালদা নদীতে আমার এলাকার সীমনায় রয়েছে। দক্ষিণ গহিরা মোবারকখীল হ্যাচারিটি অচল হয়ে থাকার পর মা মাছের ডিম ছাড়ার মৌসুম শুরু হওয়ায় হ্যাচারিটি মেরামতের কাজ করা হচ্ছে। হালদা নদীর মা মাছ রক্ষায় এলাকার লোকজন কাজ করছে।
হালদা রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক রাউজান পৌরসভার কাউন্সিলর আলমগীর আলী বলেন, হালদা নদীতে বালু উত্তোলন ও যান্ত্রিক নৌযান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বালু উত্তোলন কম হলেও নৌযান চলাচল করেছে বেশি। রাতে হালদা নদীতে জাল ও বড়শি দিয়ে মাছ শিকার করা হচ্ছে। রাতে হালদা নদীতে যান্ত্রিক নৌযান চলাচল করছে বেশি। যান্ত্রিক নৌযানের আঘাতে হালদা নদীতে মা মাছ, ডলফিনসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মারা গেছে গত কয়েক মাস পূর্বে। নদীতে যান্ত্রিক নৌযান চলাচল বন্ধ করা না হলে হালদা নদীর মৎস্য প্রজনন হুমকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করেন তিনি।
এ ব্যাপারে রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম হোসেন রেজার কাছে জানতে চাইলে তিনি জয়নিউজকে বলেন, হালদা নদীর মা মাছ রক্ষায় অভিযান চালানোর জন্য আমাকে ও হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন অভিযান পরিচালনা করে নদী থেকে মাছ শিকার করার সময় কারেন্ট জাল উদ্বার করেছে। হালদা নদীতে মা মাছ রক্ষায় আমরাও অভিযান চালাবো ।