কাজী নুরুল আবসার একজন গেরিলাযোদ্ধা। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে সাক্ষী দেন তিনি। তারপরই তিনি বেকার হয়ে পড়েন। সবার ভয় ছিল, আমাকে চাকরিতে রাখলে তাদের যদি কিছু হয়ে যায়। সাক্ষী দিয়েছি সেটাই কি আমার দোষ?
আগে তিনি একটি সিএন্ডএফ এজেন্টে চাকরি করতেন। তাঁর বাড়ি রাঙ্গুনিয়া সরফভাটায়। বাবা কাজী মো. জাবেদ বন বিভাগের কর্মকর্তা ছিলেন। জন্ম ১৯৪৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর। ১৯৭০ সালে রাঙ্গুনিয়া কলেজ থেকে বিএ পাস করেন।
মুক্তিযুদ্ধের স্মতিচারণ করতে গিয়ে নুরুল আবসার জানান, ১৯৭১ সালে ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়ি। এলএলবিতে ভর্তি হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দেশের উত্তাল রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে তা আর হয়নি। চট্টগ্রাম শহর অঞ্চলেই আমি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। মূলত আমি সংগঠক হিসেবেই কাজ করি। মুক্তিযুদ্ধে আমি ৮নং গ্রুপে ছিলাম। আমাদের গ্রুপ নেতা ছিলেন এসএম মাহবুবুল আলম।
২৫ মার্চের যে ক্র্যাকডাউন তার পরেই পাকিস্তানিরা চট্টগ্রাম শহর দখল করে নেয়। তখন আমি পরিবারসহ রাঙ্গুনিয়ায় চলে যাই। কিছুদিন পর রাঙ্গুনিয়া থেকে আমি শহরের বাসায় ফিরে আসি।
এসে দেখি যে অবাঙালি ও পাকিস্তানের সমর্থকরা এ দেশের সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার করছে। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে সিদ্ধান্ত নিই, শহরে থেকেই প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেব।
আমি সে সময় খাতুনগঞ্জে সাহেব মিয়া এন্ড সন্সে থাকতাম। এ সময় এসএম মাহবুবুল আলমের সঙ্গে আমার যোগাযোগ হয় এবং তার দলে যোগ দিই। মাহবুব ছিলেন রাঙ্গুনিয়া কলেজ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি।
জুন-জুলাইয়ে খাতুনগঞ্জে অবস্থানকারী মাহবুবের কোনো খোঁজ-খবর না পাওয়ায় আমরা খুব চিন্তিত হই এবং বিভিন্নভাবে তাঁর খোঁজ নিই।
পরে জানতে পারি, সাকা চৌধুরী খাতুনগঞ্জ থেকে মাহবুবকে উঠিয়ে গুডস হিলে নিয়ে গেছে। সেখানে তার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। সাকা চৌধুরী যেহেতু নেপথ্যে থেকে ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে, সিদ্ধান্ত নিই তাকে খতম করতেই হবে। কিন্তু এটা খুব একটা সহজ কাজ ছিল না। আগস্ট মাসের শেষের দিকে আমার পাশের বাসায় ছাত্রলীগ নেতা এসএম জামাল উদ্দিন ও হারুন খান ভারত থেকে ট্রেনিং নিয়ে ফিরে আসেন।
পরে সবাই মিলে পরিকল্পনা করি, অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে রাত সাড়ে ৮টার দিকে ডা, ছমির উদ্দিনের বাসায় যান। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন সদস্যসহ সাকা ও অন্যরা ওই বাড়িতে যান। আমি রাস্তার ওপর দাঁড়িয়েছিলাম। এ সময় আমার সঙ্গের ৩ জন একটি ড্রেনের নিচে অবস্থান করছিল। আমি তাদেরকে সাকা চৌধুরী ও অন্যান্যদের ডা. ছমির উদ্দিনের বাড়িতে আসার বিষয়টি জানাই। তারপর আমি আবার রাস্তায় চলে আসি।
আমি প্রথমে স্টেনগান, পরে গ্রেনেড এবং শেষে রিভলবারের গুলির শব্দ শুনি। বুঝতে পারি, আক্রমণ শুরু হয়েছে। আমি তখন নিরাপদ স্থানে চলে যাই। পরে জানতে পারি, আক্রমণ হয়েছে। আজিজ উদ্দিন আমাদের খবর আগেই দেওয়াতে সাকা চৌধুরী আর গাড়ি চালাননি।
সেদিন ভীষণ বৃষ্টি হচ্ছিল। ড্রাইভিং সিট লক্ষ্য করে গুলি করা হয়েছিল। পরবর্তী দিন আমরা পত্রিকায় দেখি যে গাড়ির ড্রাইভার মারা গেছে এবং সাকা চৌধুরীর পায়ে গ্রেনেডের আঘাত লেগেছে।
এখন কেমন কাটছে দিন:
আমার শারীরিক অবস্থা বর্তমানে খারাপ, সেইসঙ্গে আর্থিক অবস্থাও । যেমন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম তেমনটা পাইনি। এটাই দুঃখ।