শহরজুড়ে এখন বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণের আমেজ। নববর্ষের দিন সেরা পোশাকটা গায়ে তুলতে ব্যস্ত সময় কাটছে নগরবাসীর। দম ফেলার ফুসরত ছিল না বিপণী বিতানগুলোয়।
বাঙালি ঐতিহ্যের আদি উৎসব পহেলা বৈশাখ। সেই উৎসবকে আরো রঙিন করে তোলে হরেকরকমের পোশাক।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বৈশাখের নতুন পোশাক কিনতে তরুণ-তরুণীসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষের পদচারণায় মুখরিত বিপনী বিতানগুলো। হাল ফ্যাশনের সঙ্গে নিজেকে সাজাতে এই মার্কেট ওই মার্কেট চষে বেড়াচ্ছেন সব শ্রেণির মানুষ। বৈশাখী আমেজের নতুন ডিজাইনের পাঞ্জাবি, শাড়ি, থ্রিপিস কিংবা ছোটদের বাহারি রঙের পোশাক নজর কাড়ছিল সবার।
নগরের ইউনেস্কো সিটি সেন্টার, সানমার ওশান সিটি, সেন্ট্রাল প্লাজা, আফমি প্লাজা, ফিনলে স্কয়ার, নিউমার্কেট, মিমি সুপার মার্কেট, আখতারুজ্জামান সেন্টার, রিয়াজউদ্দিন বাজার, তামাকুমণ্ডি লেন, টেরিবাজার, ভিআইপি টাওয়ার, লাকি প্লাজা, সিঙ্গাপুর মার্কেটসহ অন্যান্য বিপণী বিতানগুলোতে মানুষ বৈশাখের পোশাক কিনতে ভিড় জমাচ্ছেন। সন্ধ্যা থেকে ক্রেতার ভিড় লেগে থাকে রাত পর্যন্ত।
এবার বৈশাখী পোশাকের ভিন্নতা ছিল লক্ষ্য করার মত। দোকানগুলোও সেজেছে উৎসবের আমেজে। রঙ-বেরঙের ফতুয়া, পাঞ্জাবির পাশাপাশি মেয়েদের শাড়ি, থ্রি-পিসেও বৈশাখের ছাপ ছিল স্পষ্ট। লাল-সাদা শাড়িগুলোতে ফুটে উঠেছে আবহমান গ্রামবাংলার চিত্র।
তবে বেশিরভাগ পোশাকের গায়ে সাঁটিয়ে দেওয়া হয়েছে একদামের ট্যাগ। ছেলেদের পোশাকের মধ্যে পাঞ্জাবি ৭০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা, একটু বেশি কাজ করা হলে ৫ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত দাম হাঁকছেন বিক্রেতারা। আর মেয়েদের সুতি শাড়ি বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ১৬০০ টাকা, একটু বেশি কারুকাজের হলে ৩ হাজার টাকা, হাফসিল্ক শাড়ি ৪ হাজার টাকা, থ্রি-পিস ১ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা, ফতুয়া ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা, সিঙ্গেল কামিজ ৮০০ থেকে আড়াই হাজার টাকা, লেগিংস ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা, ধুতি ৪৫০ থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত রয়েছে।
নগরের আফমি প্লাজায় ছিল সবচেয়ে বেশি ভিড়। পরিবারসহ বৈশাখের কেনাকাটা করতে আসা পুলিশ সদস্য আশরাফুল ইসলাম জয়নিউজকে বলেন, পহেলা বৈশাখে আমাদের জন্য সরকার বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা করেছে। তাই পরিবার নিয়ে কেনাকাটা করতে আসা।
পহেলা বৈশাখের ইতিহাস ও ঐতিহ্য পরিবার থেকে পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টার কথাও জানান তিনি।
পহেলা বৈশাখের দিনের পরিকল্পনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ডিউটি না থাকলে পরিবারের সবাইকে নিয়ে ডিসি হিল আর সিআরবি ঘুরে শিল্পকলায় যাব।
আফমি প্লাজায় দেশি দশের ম্যানেজার আব্দুল আলীম জয়নিউজকে বলেন, মাসের শুরু থেকেই বৈশাখের বিক্রি শুরু হয়েছে। বৈশাখ উপলক্ষে অঞ্জনস প্রায় শতাধিক নতুন আইটেমের কাপড় নিয়ে এসেছে। ছেলেরা পাঞ্জাবি ও ফতুয়া বেশি কিনছেন। মেয়েরা থ্রি-পিস ও শাড়ি বেশি কিনছে। দিন যত ঘনিয়ে আসছে বিক্রি তত বাড়ছে।
তবে লক্ষণীয় ভিড় ছিল নগরের রিয়াজউদ্দিন বাজার আর হকার মার্কেটে। যেখানে তুলনামূলক স্বল্প আয়ের মানুষ বৈশাখের কেনাকাটায় ছিল ব্যস্ত। ফুটপাতেও ছিল বৈশাখী পণ্যের সমাহার। এখানে দাম কিছুটা কম। তাই বিক্রি হয় বেশি।
সরেজমিনে দেখা যায়, ২০০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যেই ফতুয়া ও গেঞ্জি পাওয়া যাচ্ছে। ছোটদের পোশাক ১শ’থেকে ২৫০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। রয়েছে অল্প দামের পাঞ্জাবিও।
দাম যতই হোক, নতুন পোশাক চাই সবার। বৈশাখ বরণে নগরের সব শপিং মল ও বিপণী বিতানগুলোও তাই সেজেছিল নব সাজে।