বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামান বলেন, ফ্যাসিবাদী শাসন ও ধনিকশ্রেণির শোষণের বিরুদ্ধে মুক্তির লড়াইয়ে মাস্টারদা সূর্যসেন আগামী দিনের প্রেরণা হয়ে থাকবেন।
বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) যুব বিদ্রোহ দিবসের ৮৯তম বার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ চট্টগ্রাম জেলা শাখার উদ্যোগে “মাস্টারদা সূর্যসেনের স্বপ্ন ও আজকের বাংলাদেশ” শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন।
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক মিলনায়তনে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
সভায় প্রধান বক্তার বক্তব্যে কমরেড খালেকুজ্জামান বলেন, ১৯৩০ সালে মাস্টারদা সূর্যসেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রামের সাহসী যুবকেরা বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল বৃটিশ সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে। ঘোষণা করা হয়েছিল স্বাধীনতার মানপত্র। সেই বিদ্রোহ মাত্র চারদিন টিকে থাকলেও দুইশ’ বছরের ইংরেজ শাসনের পতাকা নামিয়ে তুলে ধরেছিল স্বাধীন ভারতবর্ষের পতাকা। মাস্টারদা সূর্যসেন ও তার তরুণ যোদ্ধাদের সেই লড়াইয়ের স্বপ্ন ছিল এক শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। সেই লড়াই ছিল এক মর্যাদাপূর্ণ জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াবার। কিন্তু ইংরেজশাসিত উপনিবেশিক ভারতবর্ষের বিভক্ত হওয়ার পর ধর্মীয় বিভাজনের পাকিস্তানে তা পূরণ সম্ভব হয়নি। উপরন্তু ধর্মীয় বেড়াজালে নানাভাবে শোষিত হতে থাকে এদেশের মানুষ। পরবর্তীতে দীর্ঘ ২৪ বছরের পাকিস্তানি শোষণ ও লাঞ্ছনার বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা।
তিনি বলেন, কিন্তু যে মুক্তির স্বপ্ন নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন এ দেশের শ্রমিক ও সাধারণ মানুষ তাদের সে মুক্তি মেলেনি। ইংরেজ শাসন ও পাকিস্তানি বাইশ পরিবারের পরিবর্তে প্রতিষ্ঠিত হয় লুটেরাশ্রেণির শোষণ ও নির্যাতন। রাষ্ট্র ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে বাঙালি ধনিকশ্রেণির লুটপাটের মৃগয়াক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে এদেশ। আমাদের দেশের সাধারণ জনগণ দীর্ঘ বৃটিশ ও পাকিস্তান উপনিবেশিক শাসন-শোষণের নিগড় থেকে মুক্তির ধারাবাহিক আন্দোলনে শোষণমুক্ত সমাজতন্ত্রের আকুতিকেই চেতনার কেন্দ্রবিন্দুতে তুলে ধরেছিলেন এবং শোষণমুক্তির লক্ষ্যে জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদবিরোধী লড়াইয়ে যুব বিদ্রোহের শিক্ষা আগামী দিনে প্রেরণা হয়ে থাকবে।
এতে আরো বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক ডাঃ মাহফুজুর রহমান, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড মৃণাল চৌধুরী, বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ, ঐক্য ন্যাপ চট্টগ্রাম জেলার যুগ্ম সম্পাদক পাহাড়ি ভট্টাচার্য, গণসংহতি আন্দোলন চট্টগ্রাম জেলার সমন্বয়কারী হাসান মারুফ রুমি, অ্যাডভোকেট দীপক চৌধুরী, নুরুল হুদা নিপু।
সভাপতিত্ব করেন বাসদ জেলা সমন্বয়ক মহিন উদ্দীন। সভা পরিচালনা করেন আল কাদেরী জয়।
সভার শুরুতে জেএমসেন হলে মাস্টারদা সূর্যসেনের আবক্ষ মূর্তিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান কমরেড খালেকুজ্জামানসহ দলের চট্টগ্রাম জেলার নেতৃবৃন্দ।
জয়নিউজ/পার্থ