গতকালের একটি ঘটনা দিয়েই শুরু করা যাক। ২৯ আগস্ট বিকেলে রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা আওয়ামী লীগ আয়োজন করে শোক দিবসের আলোচনা সভা। বক্তব্যে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি আন্দোলনের নামে কোনো সহিংসতা করলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সমুচিত জবাব দেওয়া হবে।
একইদিন তিনি ছুটে যান রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে। সেখানে দুর্ঘটনায় আহত শিশু আছিয়ার চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন। গত ২১ আগস্ট ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা এলাকার সেই সড়ক দুর্ঘটনায় মা’কে হারায় আছিয়া। ওইদিনই সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শিশু আছিয়ার চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। পাশাপাশি একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সড়ক দুর্ঘটনায় আহত চট্টগ্রামের অক্সিজেন মোড়ের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আজগর আলীর চিকিৎসার দায়িত্বও নেন মন্ত্রী।
এই হলেন ওবায়দুল কাদের। রাজনীতিতে যিনি পর্বতের মতো শক্ত এক মানুষ, মানবিকতায় যিনি অনন্য। দেশের কঠিন সময়ে যিনি পরীক্ষিত এক শক্তিশালী যোদ্ধা, আবার দুখী মানুষের জন্য যার মন কোমলতায় ভরা।
১৯৫০ সালের ১ জানুয়ারি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বড় রাজাপুর গ্রামে জন্ম ওবায়দুল কাদেরের। মেধাবী এই শিক্ষার্থী প্রথম বিভাগে এসএসসি পাস করেন বসুরহাট সরকারি এএইচসি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। মেধা তালিকায় স্থান নিয়ে এইচএসসি পাস করেন নোয়াখালী সরকারি কলেজ থেকে। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্সসহ স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
ছাত্রজীবন থেকেই তিনি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। ১৯৬৬ সালে ৬ দফা আন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালে গণআন্দোলন ও ছাত্রদের ১১ দফা আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। আর মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি ছিলেন কোম্পানীগঞ্জ থানা মুজিব বাহিনীর (বিএলএফ) অধিনায়ক।
শিক্ষাজীবনে সফল ওবায়দুল কাদেরের রাজনৈতিক জীবনটাও ঠিক যেন নদীর মতো। আরেকটু সহজ করে বললে জনপ্রিয় সেই গানের মতো, এ পাড়ে তো ভাঙে নদী, ও পাড়ে তার কিছু ফিরিয়ে সে দেয়…।
১৯৭৫-এর পর দীর্ঘ আড়াই বছর কারাবন্দী ছিলেন ওবায়দুল কাদের। আবার কারাগারে থাকা অবস্থায়ই তিনি ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন।
১/১১ পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে তিনি ২০০৭ সালের ৯ মার্চ গ্রেফতার হন। এ দফায় সংগ্রামী এ নেতাকে কারাবাস করতে হয় ১৭ মাস ২৬ দিন। ২০০৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পাওয়ার তিন মাস পরেই তিনি দ্বিতীয়বারের মতো নোয়াখালী-৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একইসঙ্গে তথ্য মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিও করা হয় তাঁকে। পরের বছরই নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য।
এর আগে ১৯৯৬ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে যুব ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান ওবায়দুল কাদের। ২০০১ সালের ১৫ জুলাই পর্যন্ত সুনামের সঙ্গে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। পরের বছর তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রথম যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান।
বর্ণিল জীবনে সাংবাদিকতাও করেছেন ওবায়দুল কাদের। দৈনিক বাংলার বাণী পত্রিকার সহকারী সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। একইসঙ্গে প্রচুর লেখালেখি করেছেন। লেখালেখিতে ওবায়দুল কাদেরের হাত কতটা পোক্ত এর প্রমাণ পাওয়া যায় তাঁর প্রকাশিত আটটি গ্রন্থে।
ওবায়দুল কাদের রাজনীতির কারণে হারিয়েছেন অনেককিছু, আবার এ রাজনীতিই তাঁকে দিয়েছে অনেককিছু। জেল-জুলুমেও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অবিচল এ নেতা বর্তমানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ২০১৬ সালের ২৩ অক্টোবর বাংলাদেশ আওয়ামী- লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে তিনি (২০১৬-২০১৯) দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
আওয়ামী লীগের মতো দেশের সবচেয়ে প্রাচীন ও সর্ববৃহৎ একটি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন ওবায়দুল কাদের। পাশাপাশি দক্ষতা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে পালন করছেন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পদের দায়িত্ব। স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি অনন্য এক দৃষ্টান্ত।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সবসময় দলের ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করেন। ওবায়দুল কাদেরই এর প্রমাণ। জেল-জুলুমেও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অটল এ নেতা একাত্তরেই প্রমাণ করেছেন তাঁর দেশপ্রেম। আর প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে হালে প্রমাণ করেছেন তাঁর দক্ষতা।
বর্তমানে দেশের মহাসড়ক ব্যবস্থা অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো আছে। ফলে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন সহজ ও সাশ্রয়ী হয়েছে। এ বিভাগ গত নয় বছরে ২৫৪টি প্রকল্প সমাপ্ত করেছে এবং ৩০৩টি নতুন প্রকল্প নিয়েছে। এর চেয়েও বড় ব্যাপার গত পাঁচ বছর ধরেই এ বিভাগ ধারাবাহিকভাবে উন্নয়ন বাজেটের শতভাগ বাস্তবায়ন করেছে!
মাঠের মানুষ হিসেবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছেন ওবায়দুল কাদের। মন্ত্রীর তকমা নিয়ে তিনি এসি রুমে বসে অফিস করার মানুষ নন। সংশ্লিষ্ট কাউকে আগে থেকে কিছু না জানিয়ে হঠাৎই তিনি বেরিয়ে পড়েন অভিযানে। কখনো তিনি সোজা চলে যান বিআরটিএ অফিস, আবার কখনো রাজপথে দাঁড়িয়ে পরীক্ষা করেন গণপরিবহনের কাগজপত্র!
এই হলেন ওবায়দুল কাদের।