চোখের ইশারায় কিংবা হাতের সামান্যতম নড়াচড়ায় শারীরিকভাবে অক্ষমদের নিজেদের নিয়ন্ত্রণে এক বিশেষ হুইলচেয়ার বানিয়েছেন পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ছাত্র আনোয়ার। এই হুইলচেয়ারে জিপিএস ব্যবহার করে রোগীর অভিভাবক সার্বক্ষণিক জানতে পারবেন রোগীর অবস্থান ও আপডেট। এই বিশেষ হুইলচেয়ারটির নাম ‘বায়োনিক হুইল চেয়ার’।
এতে যারা নড়তে অক্ষম তাদের জন্য রয়েছে ‘ভয়েজ কমান্ড কন্ট্রোল’ এবং যারা বলতে পারেন না কিন্তু দেখতে পান তাদের জন্য রয়েছে ‘স্পেশাল আই মুভমেন্ট’।
মাত্র একমাস সময়ে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে এই চেয়ারটি বানিয়ে ফেলেন আনোয়ার। সঙ্গে ছিল তার যন্ত্রতান্ত্রিক দল। একদিন অসুস্থ আনোয়ার হাসপাতালে বসে নিজের প্রকৌশল বিদ্যাকে আরেকটু এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চিন্তা থকেই বানিয়ে ফেলেন এই চেয়ার।
তিনি বলেন, প্রতিবন্ধীদের চিকিৎসার আরো আধুনিকায়নে এই যন্ত্র বানিয়েছি।
এর আগেও আনোয়ার এবং তার দল বানিয়েছিল ‘বায়োম্যাডিকেল হিউমেনয়েড রোবট ডক্টোবট’। তারই সূত্র ধরে এই বায়োনিক হুইলচেয়ার তৈরির পরিকল্পনা।
যাদের জন্য এই প্রজেক্ট: এই হুইলচেয়ারটি মূলত Physically Disable মানুষের জন্য যারা চলতে, কথা বলতে, হাত নাড়াতে ও দাঁড়াতে অক্ষম। এই বায়োনিক হুইলচেয়ার একজন রোগী হাতের সামান্য কিছু নড়াচড়ার মাধ্যমে কন্ট্রোল করতে সক্ষম। যারা নড়তে অক্ষম তাদের জন্য রয়েছে ‘ভয়েজ কমান্ড কন্ট্রোল’। যারা বলতে পারেন না কিন্তু দেখতে পান তাদের জন্য রয়েছে ‘স্পেশাল আই মুভমেন্ট’। চোখের ইশারাতে তারা কন্ট্রোল করতে পারবেন নিজেদের চলাফেরা।
শুধু রোগীর জন্যই নয়, GPS এর মাধ্যমে রোগীর আত্মীয়ও চাইলে বাইরে থেকে রোগীর অবস্থান ও আপডেট জানতে পারবেন।
যেভাবে কাজ করবে বায়োনিক হুইল চেয়ার: গতানুগতিক হুইলচেয়ার থেকে বায়োনিক হুইলচেয়ারের তফাৎ রোগী নিজের মুভমেন্টের জন্য কারো মুখাপেক্ষী হবে না।
এছাড়া চেয়ারটিতে বেশ কিছু এক্সেলেটর মিটার ব্যবহার করা হয়েছে হাতের মুভমেন্টকে ইনপুট হিসেবে নিয়ে Gesture Controlling এর কাজ করার জন্য। রোগীর পেশীর নড়াচড়াকে রিড করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে EMG Sensor ও চোখের নড়াচড়াকে মেশিন রিডেবল ডাটায় রূপান্তরের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে Electroculography (EOG) System.
সহজভাবে বললে আমাদের প্রতিটি মুভমেন্ট বা নড়াচড়ায় পেশিতে কিছু ভোল্টেজ জেনারেট হয়। যা খুবই সামান্য তবে নির্দিষ্ট মাত্রার। এই সেন্সরসমূহের সাহায্যে ভোল্টেজগুলো রিড করা হয় এবং এমপ্লিফাই করে Microcontroller এ প্রেরণ করা হয়। যেখানে কোডিং এর সাহায্যে কমান্ড লিখে রাখতে হয়। কতটুকু ভোল্টেজ পাস হলে কতটুকু কাজ করতে হবে তা নির্ণয় হয়ে গেলে মোট আউটপুট মোটরে পাঠানো হয় এবং হুইল চেয়ারটি রোগীর উদ্দেশ্য অনুযায়ী গন্তব্যেই ধাবিত হয়।
কেমন খরচ পড়বে- এমন প্রশ্নের উত্তরে আনোয়ার জানান, প্রটোটাইপ এই প্রজেক্টে খরচ হয়েছে সব মিলিয়ে ১৫ হাজারের মত। তবে বাস্তব প্রয়োগে খরচ হবে আনুমানিক ৩০ হাজার টাকার মতো।
বর্তমানে বাজারে গতানুগতিক যেসব হুইলচেয়ার রয়েছে সেসবের দাম সুবিধাভেদে ৬ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা। সেখানে এই বায়োনিক হুইলচেয়ার সাশ্রয়ী মূল্যে একজন রোগীকে দিতে পারবে ডিজিটালাইজড মেডিকেয়ার।