আশির দশকের কথা। ক্যামেরা কাঁধে চট্টগ্রামের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে চষে বেড়াতেন এক আলোকচিত্র সাংবাদিক। যাঁর জাদুর হাতে ক্যামেরাবন্দি হয়েছে অসংখ্য ছবি। কখনো তিনি তুলে ধরেন বঞ্চিতদের চিত্র, আবার কখনো সমৃদ্ধির। সবমিলিয়ে ওই সময়ে সচেতন মহল থেকে সাধারণ মানুষ- সর্বমহলে প্রিয়মুখ ছিলেন তিনি। যাঁর নাম তাপস বড়ুয়া।
আশির দশকে দৈনিক আজাদীর আলোকচিত্র সাংবাদিক তাপস বড়ুয়া দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন আমেরিকার নিউইয়র্কের বোস্টন শহরে। দূর দেশে থেকেও সবসময় তাঁর মন পড়ে থাকে প্রিয় শহরের অলি-গলিতে। সময় পেলেই স্মৃতি হাতড়ে বেড়ান এই নগরে তোলা তাঁর আলোচিত ছবিগুলোয়।
আলোকচিত্র তাপস বড়ুয়ার তোলা ছবি নিয়েই মঙ্গলবার (১৪ মে) নগরের চেরাগি পাহাড়ের আজাদী চত্বরে আয়োজন করা হয় প্রদর্শনী। যাতে তুলে ধরেন তাঁর সোনালি সময়ের ৫২টি ছবি।
সকাল সাড়ে ১১টায় ‘ফিরে দেখা তাপসের সেই ছবি’ শিরোনামে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন লায়ন্স জেলার নবনির্বাচিত গভর্নর কামরুন মালেক।
প্রদর্শনীতে একদিকে তুলে ধরা হয়েছে ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের ভয়াবহতার ছবি, অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সন্তু লারমার অস্ত্র সমর্পণের ছবি।
২০-৩০ টাকায় বিক্রি হওয়া ইলিশের স্তূপ, প্রত্যন্ত অঞ্চলে দোলনায় করে রোগী নিয়ে যাওয়া, কুকুরের সঙ্গে বেড়ালের স্নেহমমতার ছবিসহ পুরস্কারপ্রাপ্ত অনেক ছবি স্থান পেয়েছে প্রদর্শনীতে।
প্রদর্শনীতে ব্যস্ততার মাঝেই জয়নিউজ একটু সময় চেয়ে নেয় প্রখ্যাত আলোকচিত্রী তাপস বড়ুয়ার কাছ থেকে। বিমুখ করেননি সদা হাস্যোজ্জ্বল তাপস বড়ুয়া।
জয়নিউজকে তাপস বড়ুয়া বলেন, ১৯৮৬ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত আজাদীতে আলোকচিত্র সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছি। ২০০৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাই। এখনো ছবি নিয়েই কাজ করছি। এখানে এসে পুরনো ছবিগুলো প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে পারায় ভালো লাগছে। প্রদর্শনীতে এতো মানুষের উপস্থিতি আমাকে আপ্লুত করেছে।
জানা যায়, দেশের বাইরেও ২০১৪ সালে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ‘বুদ্ধইজম’ নিয়ে তাঁর ৩২টি ছবির প্রদর্শনী হয়। ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলা বই উৎসবে প্রদর্শনী হয়।
লাইভ ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে ছবি স্থান পাওয়া এই আলোকচিত্রী বলেন, আমাদের সময় কাজ করা অনেক কঠিন ছিল। ফ্লিম ক্যামেরায়, ডার্করুমে কাজ করতে হতো। ছবি তুলে ফ্লিম নিয়ে অফিসে দৌঁড়াতে হতো। সাদা-কালো ছবি ছিল। এখন ডিজিটাল যুগে ক্যামেরার কাজ সহজ হয়েছে। এই পেশায় তরুণরা এগিয়ে আসবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
১৯৮৮ সালে দেশে জাতীয় আলোকচিত্র প্রতিযোগিতায় প্রথম হন তাপস বড়ুয়া। ১৯৮৯ সালে পান ইউনেস্কো ইন্টারন্যাশনাল ফটো কনটেস্ট অ্যাওয়ার্ড। এছাড়া ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশের ‘ফটোজার্নালিস্ট অব দ্য ইয়ার’ পদক এবং ১৯৯৪ সালে ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত ফেডারেশন ইন্টারন্যাশনাল আর্টস ফটোগ্রাফিসহ (ফিআপ) বিভিন্ন দেশি ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি।