লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদীতে জাল ফেলেও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশ। আর ঘাটগুলোতে ইলিশ না আসায় আড়তদাররা কাটাচ্ছে অলস সময়।
গত ১ মে থেকে শুরু হয়েছে মাছ ধরা। এর আগে নিষেধাজ্ঞার কারণে জেলেদের কিছুদিন অভাব-অনটনের মধ্যে থাকতে হয়েছে। এ সময় সরকারিভাবে জেলেদের জন্য চাউল দেওয়া হলেও অনেক জেলেই তা পায়নি। তাদের অভিযোগ জেলেদের তালিকা করা হয়েছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দিয়ে। এজন্যই চাউল জোটেনি তাদের ভাগ্যে।
স্থানীয় জেলেদের দাবি, ইলিশ ধরার নিষিদ্ধ সময়ে যেন সরকার তাদের চালের পরিবর্তে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করে।
জেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, লক্ষ্মীপুরের আলেকজান্ডার থেকে চাঁদপুরের ষাটনাল এলাকার ১শ’ কিলোমিটার পর্যন্ত মেঘনা নদীর ইলিশের অভয়াশ্রম এলাকায় ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সকল প্রকার মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিল।
জেলে ও স্থানীয়রা জানায়, দুইমাস পরে ১ মে থেকে জেলেরা আবার জাল ও নৌকা নিয়ে নদীতে নামে মাছধরার জন্য। একদিন যেতে না যেতেই ঘূর্ণিঝড় ফণীর কারণে তিন-চারদিন নদীতে নামতে পারেনি তারা। এরপর নদীতে নেমেই আশানুরূপ ইলিশ পড়েনি তাদের জালে।
তারা জানায়, নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে দৈনিক ৪/৫ হাজার টাকা লোকসান দিতে হচ্ছে তাদের। এ মাছের ওপর নির্ভর করেই লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায় গড়ে উঠেছে ১৫-২০টি আড়ত। এসব আড়ত ঘিরে মাছ সংরক্ষণে ৪০টি আইস ফ্যাক্টরি গড়ে উঠেছে নদীর পাড়ে। যেখানে কর্মসংস্থান হয়েছে হাজারো মানুষের।
কমলনগর উপজেলার আলমগীর মাঝি জয়নিউজকে জানান, দিনরাত নদীতে জাল ফেলে যে মাছ পাচ্ছি তা দিয়ে ইঞ্জিনচালিত নৌকার তেলের খরচও মিলছে না। নদীতে ইলিশ নেই বললেই চলে।
তার ভাষায়, ‘আগে নদীর পাড় দিয়ে পুঁটিমাছ গড়াইয়া যাইত। সার-কীটনাশক মাছ শেষ কইরা ফালাইছে।’
চর জগবন্ধু এলাকার জেলে জয়দেব (৫০) জানান, সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত নদীতে জাল ফেলেছেন। কিন্তু সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে যখন বাড়ি ফিরছেন তখন মাছের ডালা খালি। ধার-দাদনের দেনা শোধের দুশ্চিন্তায় আছেন।
তিনি বলেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে পরিবার-পরিজন নিয়ে কীভাবে চলবেন?
এছাড়া জেলেদের মধ্যে অনেকের দাবি, নদীতে নাব্যতা সংকটের কারণে তাদের জালে আশানুরূপ ইলিশ মিলছে না।
রামগতি মাছঘাটের ব্যবসায়ী মিনাজ মাঝি জানান, গতবছর এ সময় ঘাট থকে প্রায় দুইশ’ টন ইলিশ দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে গেছে। কিন্তু এ বছর মাছই নেই।
কমলনগরের মতিরহাট মাছঘাটে গিয়ে দেখা যায়, ৩৬টি বড় আড়ত এখনো সরগরম হয়নি। সোমবার বিকাল পর্যন্ত ৫ মণের মতো ইলিশ এসেছে, যার বেশিরভাগ সকালেই শেষ হয়ে গেছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসএম মহিবউল্যাহ জানান, এসময় জাটকা সাগরে যায়। সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে বড় ইলিশ পাওয়া যাবে ।
তবে এ সময় অন্যান্য মাছ পাওয়া যাবে বলে তিনি জানান।
জয়নিউজ/আরসি