নগরের চট্টেশ্বরী মোড়। এই মোড়েই ছিল ডাস্টবিন। ময়লা-আবর্জনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকত সবসময়। দুর্গন্ধে এই মোড় দিয়ে যাতায়াত করা ছিল কঠিন। সেই মোড়ে এখন কোনো দুর্গন্ধ নেই, ডাস্টবিনও নেই। ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ও নেই। ওই মোড়ে এখন নান্দনিকতার ছোঁয়া। সৌন্দর্য বর্ধন প্রকল্পের কারণে বদলে গেছে চট্টেশ্বরী মোড়ের চেহারা। জহুর-মান্নান চত্বর নামকরণে এই মোড়ে এখন শোভা পাচ্ছে নান্দনিক স্থাপনা। শুধু এই চট্টেশ্বরী মোড়ই নয়, এভাবে নগরের প্রতিটি মোড়ই সৌন্দর্য বর্ধন প্রকল্পের মাধ্যমে দৃষ্ট নন্দন করা হচ্ছে।
এদিকে গ্রিন সিটি ক্লিন সিটি প্রকল্পের বদৌলতে চট্টগ্রাম এখন পরিচ্ছন্ন নগরীতে পরিণত হয়েছে। এই মেগাপ্রকল্পের আওতায় প্রতিদিন ১ হাজার ৯০০ পরিচ্ছন্নকর্মী রাতেই নগরের ময়লা-আবর্জনা পরিস্কার করে থাকে।
এছাড়া ডোর টু ডোর ওয়েস্ট কালেকশনের মাধ্যমে বাসা-বাড়ির ময়লা-আবর্জনাও নিয়ে যাচ্ছে পরিচ্ছন্ন কর্মীরা। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) এমন ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট পাল্টে দিয়েছে বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত চট্টগ্রামের চেহারা।
অথচ বছর পাঁচেক আগেও চট্টগ্রাম নগর ছিল একটি অপরিচ্ছন্ন নগর। এই নগরের বিভিন্ন মোড় ও রাস্তার পাশে ছিল ডাস্টবিন। সেই ডাস্টবিন ভর্তি হয়ে ময়লা-আবর্জনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকত রাস্তা পর্যন্ত। দুপুর গড়িয়ে গেলেও ময়লা-আবর্জনা পরিস্কার করতে আসতো না পরিচ্ছন্নকর্মীরা। এ কারণে দুর্গন্ধে ডাস্টবিনের পাশ দিয়ে যাতায়াত করা ছিল দুরূহ ব্যাপার।
এছাড়া নগরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বড় বড় বিল বোর্ডের কারণে ঢেকে ছিল। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন ২০১৫ সালে চসিক মেয়র নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয় লাভ করার পর গ্রিন সিটি ক্লিন সিটি মেগা প্রকল্প হাতে নেন।
এছাড়া তিনি চট্টগ্রামকে সৌন্দর্য বর্ধন ও সবুজায়নসহ পরিচ্ছন্ন নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেন। প্রথমেই তিনি নগরীর যত্রতত্র ছড়িয়ে থাকা বড় বড় বিল বোর্ড উচ্ছেদ শুরু করেন। বিলবোর্ড উচ্ছেদের পর নগরীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এখন দৃশ্যমান হয়েছে।
সেইসঙ্গে নগরজুড়ে এলইডি লাইটের কল্যাণে আলোকিত রাতের চট্টগ্রামও এখন বেশ দৃষ্টিনন্দন। এরমধ্যে আকাশি-নীলে সাজতে যাচ্ছে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সকল সড়কের দু’পাশের স্থাপনা। সবমিলিয়ে পরিচ্ছন্ন ও সৌন্দর্যের এক মডেল নগরীতে পরিণত হয়েছে এখন বন্দর নগরী চট্টগ্রাম।
১৪ মার্চ চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহর পুলিশ লাইনে জেলা পুলিশের মিডিয়া সেন্টার উদ্বোধন ও মাদক বিরোধী কনসার্টে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। ওই সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি চট্টগ্রামকে ক্লিন ও গ্রিন সিটিতে রূপান্তর করায় সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রামকে ক্লিন ও গ্রিন সিটিতে রূপান্তর করতে এখানকার মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় চট্টগ্রাম শহরটি আগের চেয়ে অনেক পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন লাগছে। চারিদিকে সবুজের ছায়া। ক্লিন ও গ্রিন সিটির রূপকার বলা যায় মেয়র নাছিরকে।
গ্রিন সিটি ক্লিন সিটি প্রকল্পের সুফল
গ্রিন সিটি ক্লিন সিটি প্রকল্প অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়নের উদ্যোগ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন জয়নিউজকে বলেন, আমি যখন মেয়র নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় প্রচারণায় গিয়েছি, তখন অপরিচ্ছন্ন নগরী দেখে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, আমি যদি মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হই, তখন আমার প্রধানতম নির্বাচনি অঙ্গীকার হবে চট্টগ্রামকে একটি পরিচ্ছন্ন নগরী হিসেবে গড়ে তোলা।
তাই মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর আমি গ্রিন সিটি ক্লিন সিটি মেগাপ্রকল্প গ্রহণ করি। এই প্রকল্পের আওতায় অনেকগুলো ময়লা ফেলার গাড়ি ও যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হয়। এবং দৈনিক ভিত্তিতে ১ হাজার ৯০০ পরিচ্ছন্নকর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। রাতের বেলাতেই নগরীর ময়লা-আবর্জনা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে তারা।
এছাড়া নগরীর অধিকাংশ এলাকা থেকে ডাস্টবিন তুলে নিয়েছি আমরা। ডোর টু ডোর ওয়েস্ট কালেকশনের মাধ্যমে বাসা-বাড়ির ময়লা-আবর্জনাও নিয়ে যাচ্ছে পরিচ্ছন্নকর্মীরা। ডোর টু ডোর ওয়েস্ট কালেকশনের জন্য নগরবাসীকে বিনামূল্যে নয় লাখ ময়লা ফেলার বিন দেওয়া হয়েছে। এরফলে নগরী আগের চেয়ে অনেক পরিচ্ছন্ন ও দুর্গন্ধমুক্ত।
বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের পাশাপাশি নগরের সৌন্দর্য বর্ধণে ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন জয়নিউজকে বলেন, সিটি করপোরেশন এলাকায় সৌন্দর্য বর্ধণের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এয়ারপোর্ট রোড, টাইগারপাস, লালখান বাজার, কাজীর দেউরী, আউটার স্টেডিয়াম, আন্দরকিল্লা, জামালখান, চট্টেশ্বরী মোড়, প্রবর্তক মোড় এলাকায় সৌন্দর্যবর্ধণ করা হয়েছে।
৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সড়কে শিল্পী শ্রীকান্ত আচার্য্য কর্তৃক নৌকার উপর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৃষ্টিনন্দন ম্যুরাল তৈরি করা হয়েছে। নগরজুড়ে সৌন্দর্য বর্ধণের পাশাপাশি সবুজায়নের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই গ্রিন সিটি ও ক্লিন সিটি প্রকল্পের আওতায় বদলে যেতে শুরু করেছে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। সেইসঙ্গে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে সত্যিকারের গ্রিন সিটি ও ক্লিন সিটিতে পরিণত করা হচ্ছে চট্টগ্রামকে।
বিলবোর্ড উচ্ছেদের পর বদলে গেছে নগরীর চেহারা
মেয়র হওয়ার পর আ জ ম নাছির উদ্দীন চট্টগ্রাম নগরী থেকে বিলবোর্ড উচ্ছেদ করেছেন। এ প্রসঙ্গে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন জয়নিউজকে বলেন, আমাদের চট্টগ্রাম শহরের মতো সুন্দর শহর বাংলাদেশে আর নেই। একদিকে সমুদ্র, আরেকদিকে পাহাড়, নগরীর পাশ দিয়ে বয়ে চলা কর্ণফুলী নদী আর পুরো শহরজুড়ে সবুজের সমারোহ। এমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই নগরী ঢেকে গিয়েছিল বিজ্ঞাপনের বিলবোর্ডে। নানা প্রতিকূলতা ও বাধা সত্ত্বেও নগরী থেকে সব বিলবোর্ড উচ্ছেদ করে নগরীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে অবমুক্ত করতে সক্ষম হয়েছি।
আমি চট্টগ্রাম নগরীকে নিয়ে যে গ্রিন সিটি, ক্লিন সিটির স্বপ্ন দেখেছি, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিরলস কাজ করে যাচ্ছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সদিচ্ছায় ও চট্টগ্রামের প্রতি তার সুদৃষ্টির কারণে ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে। তার আন্তরিকতার সুবাদে চট্টগ্রাম নগরীকে একটি যানজট ও জলজটমুক্ত সিটিতে রূপ দিতে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করছি।
তিনি আরো বলেন, নগরীর ফুটপাতগুলোতে এক বছরের মধ্যে টাইলস লাগানো হবে। পরিচ্ছন্ন ও পরিবেশবান্ধব চট্টগ্রাম গড়তে আমরা বদ্ধপরিকর। সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে নতুন প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য নগরী গড়বো আমরা।
আকাশি-নীলে সাজছে নগরীর সড়কের দু’পাশের স্থাপনা
আকাশি-নীলে সাজতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম নগরীর সড়কের দু’পাশের স্থাপনা। অর্থাৎ বন্দর নগরী চট্টগ্রামের সড়কের দু’পাশে সরকারি ও বেসরকারি যেসব স্থাপনার দেয়াল রয়েছে সেগুলো আকাশি-নীল রং লাগাবে চসিক।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন জয়নিউজকে বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি সড়কের দুই পাশে বেসরকারি কিংবা সরকারি যেসব স্থাপনার সীমানা প্রাচীর রয়েছে সেগুলোর রং হবে আকাশি-নীল। এটি হলে মানুষ যখন যানবাহন কিংবা হেঁটে সড়কের পাশ দিয়ে যাবেন তখন ভিন্ন পরিবেশ পাবেন। এজন্যই ওই সীমানা প্রাচীরগুলো আকাশি-নীল রংয়ে সাজানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। চসিকের পক্ষ থেকে ওই রং করা হবে বলেও জানান তিনি।