জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ এখন কতটা সুস্থ! রাজনৈতিক মাঠে তিনি এখন একপ্রকার অনুপস্থিত। সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিলেও সংসদে দেখা যায় না তাকে। দেখা যায় না দলীয় কোনো সভায় কিংবা সামাজিক অনুষ্ঠানে। নিজ বাড়ি রংপুরে আগে ঘন ঘন গেলেও, এখন তেমন যান না । শুধু তাই নয়, নিজের মতো করে সাজানো বনানীর নিজ কার্যালয়েও এরশাদ যান না অনেকদিন হলো। এরশাদের শূন্যতা সবখানে। দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ঘন ঘন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করার জন্য এরশাদের খ্যাতি বেশ। অসুস্থ হওয়ার পর এরশাদ রাজনৈতিক কর্মসূচি ও ব্যক্তিজীবন একটা গণ্ডীর মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখেছেন।
দলে নিজের প্রভাব বজায় রাখতে ছোট ভাই জিএম কাদেরকে বারবার গুরুত্বপূর্ণ পদ দিয়ে আবার বাদ দেওয়ায় দলে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। সম্প্রতি দুই ভাইয়ের মধ্যে সব ভুল বোঝাবুঝির অবসান হলে এরশাদ আবারও জাতীয় পার্টিতে জিএম কাদেরকে তাঁর উত্তরসূরি নির্বাচিত করেন।
শুধু তাই নয়, তাঁর সব সম্পদ একটি ট্রাস্ট করে দান করে দিয়েছেন। তাঁর কাছে দলের রক্ষিত অর্থ দলকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। সবমিলিয়ে এরশাদ বিশ্রামে যাচ্ছেন এমনটা বলা যেতেই পারে তাঁর সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে। কিন্তু সবাই জানতে চান, একসময়ের দাপুটে এই রাষ্ট্ররায়ক এখন কোথায় আছেন? কেমন আছেন? কিভাবে কাটে তাঁর দিন। বিষয়টি দেশবাসীসহ তাঁর দলের নেতাকর্মীদের কাছে কৌতূহলেরও বটে। কারণ একান্ত কাছের লোকজন ছাড়া এরশাদের সঙ্গে কেউ দেখা করতে পারছেন না।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর হঠাৎ গ্রামের বাড়িতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে রংপুর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি হন এরশাদ। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে এয়ার অ্যাম্বুলেসে সিঙ্গাপুর নেওয়া হয়। সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল হাসপাতালে সফল অস্ত্রোপচার শেষে দেশে ফেরার পর তাঁর শারীরিক অবস্থা এখন অনেকটাই স্থিতিশীল। বিগত ৬ মাস ধরে এক সময়ের প্রতাবশালী সেনা ও রাষ্ট্রপ্রধান এরশাদ খুব একটা প্রকাশ্যে আসেন না।
জানা গেছে, এরশাদ এখন প্রেসিডেন্ট পার্কে তাঁর নিজের বাড়িতে থাকেন। তাঁকে দেখাশুনা করেন ৫ জন কাজের লোক। ছোট ভাই জিএম কাদের, পার্টির সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার, বর্তমান মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গাসহ দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতা নিয়মিত দেখা করতে এরশাদের বাড়িতে যান। তবে পত্নী রওশন এরশাদ তাঁর বাড়িতে না গেলেও, নিয়মিত ফোনে খোঁজখবর নেন। অসুস্থতার কারণে এরশাদ নিয়মিত রোজা রাখতে পারেন না। তবে দোয়া পড়েন নিয়মিত।
জানা গেছে, নিজের জীবন নিয়ে বই লেখার চেষ্টা করছেন এরশাদ। বিশ্রামে থাকার পাশাপাশি এখন বইও লিখছেন।
এ বিষয়ে জাতীয় পাটির ভাইস-প্রেসিডেন্ট জিএম কাদের জয়নিউজকে বলেন, ‘এরশাদ অসুস্থ ছিলেন, এটা সত্যি। তবে তিনি ধীরে ধীরে সুস্থ হচ্ছেন। তিনি নিজে নিজে চলাফেরা করতে পারেন। নিজের কাজ নিজে করতে পারেন। দলের প্রতিটি সিদ্ধান্ত তাঁর অনুমতি নিয়েই করা হচ্ছে।’
তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, এরশাদ শারীরিকভাবে দুর্বল। আর তাঁর মনের মধ্যে নানা অজানা শঙ্কা কাজ করছে। এরশাদ এজন্যই তাঁর সকল বিষয়াদি দান ও ভাইকে দলের দায়িত্ব দিয়েছেন।
জয়নিউজ/এরশাদ