২০ দলীয় জোটের শক্তিধর জামায়াতে ইসলামী এখন অনেকটাই নীরব। নেই তাদের দৃশ্যমান কোনো কর্মসূচি। নেই মিটিং মিছিলের কোনো খবর। তাদের সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক কার্যালয় বলতে মগবাজারের অফিসটি বন্ধ প্রায় এক দশক। এরইমধ্যে নির্বাচন কমিশনকর্তৃক বাতিল হয়েছে দলটির নিবন্ধন। ফলে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে পারেনি দলটি।
বর্তমান জামায়াতে ইসলামী ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শক্তি। তবে জামায়াতের সাংগঠনিক কার্যক্রম প্রকাশ্যে না আসায় দলটির সক্ষমতা আর আগেরমতো নেই। কারণ যুদ্ধপরাধের অভিযোগে জামায়াতের বেশ কয়েকজন নেতা এখনও কারাগারে।
ইতোমধ্যে দলটির শীর্ষ নেতাদের ১৯৭১ সালে বিরোধী অবস্থানের কারণে ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। যার কারণে কেউ কেউ প্রকাশ্যে জামায়াতের রাজনীতি করতে অনীহা প্রকাশ করেছেন। এর মধ্যে জামায়াতের সিনিয়র নেতা ও বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাকের পদত্যাগ ও ১৯৭১ সালের ভূমিকার জন্য ক্ষমা প্রার্থনার আহ্বানে দলটিকে বেশ প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। কারণ জামায়াতের দুর্দিনে ব্যারিস্টার রাজ্জাক বেশ ভুমিকা রেখেছিলেন।
এছাড়া দলে ও দলের বাইরেও ব্যারিস্টার রাজ্জাকের বেশ সুনাম ছিল। অনেকেই বলেছেন দেশে রাজনীতি করতে হলে জামায়াতকে অবশ্যই ক্ষমা চাইতে হবে। তবে জামায়াতের শীর্ষ নেতারা এ বিষয়ে চুপ। তারা এখনই এ বিষয়ে মন্তব্য করতে নারাজ। কারণ তারা একটু সময় নিয়ে জামায়াত সংস্কার আনতে আগ্রহী।
এদিকে দলটির শীর্ষ নেতাদের অনেকেই কারাগারে। আবার কেউ কেউ পালিয়ে ফেরারি জীবনযাপন করছেন। এর মধ্যে যারা প্রকাশ্যে চলাচল করছেন তাদের মধ্যে কেউ কেউ সমাঝোতা করে কোনরকমে দিনপার করছেন। তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ঠিকঠাক রাখতে এমন সমাঝোতা বলে ধারণা খোদ জামায়াত নেতাদের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জামায়াতের কার্যক্রম চোখে দেখা না গেলেও গোপন সিগন্যাল ব্যবহার করে জামায়াত ভেতরে ভেতরে কাজ চালাচ্ছে। তবে আগেরমতো প্রকাশ্যে না আসার কারণ হিসেবে হয়রানির শিকার হতে পারেন এজন্য তারা গোপনে প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে থাকেন বলে দলটির বেশ কয়েকজন নেতা নাম প্রকাশ না করা শর্তে এ প্রতিবেদকে জানিয়েছেন। তারা নির্ধারিত একটি ম্যাসেঞ্জার গ্রুপ ব্যবহার করে নিজেদের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন বলেও জানা গেছে।
শুধু তাই নয়, জামায়াতের তরুণ প্রজন্ম আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বর্তমান স্রোতের সঙ্গে মিলে-মিশে কাজ করতে আগ্রহী হলেও সাজাপ্রাপ্ত জামায়াতের শীর্ষ কয়েকজন নেতার পরিবারের সম্মতি না পাওয়ায় দলে সংস্কার আপাতত আটকে গেছে।
জানা গেছে, জামায়াতের রোকন, সাথী ও শূরা সদস্যরা একাধিক অ্যাপ ব্যবহার করে দলের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছেন। এছাড়া চট্টগ্রামে জামায়াতের অস্থায়ী কেন্দ্র সাংগঠনিক নির্দেশে পরিচালিত হচ্ছে বলেও জানা গেছে। যোগোযোগের ক্ষেত্রে জামায়াতের নেতারা কোনো মোবাইল কিংবা টেলিফোন ব্যবহার করেন না। তবে সামাজিক অনুষ্ঠানের নাম করে তারা প্রায়ই কোনো ধরনের ঘোষণা ছাড়া বিভিন্ন বৈঠকে অংশ নিয়ে থাকেন।
এ বিষয়ে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা আলী আহাদ জয়নিউজকে বলেন, আমরা কাজ করছি আমাদের মতো করে। আমরা ২০ দলীয় জোটে থাকলেও নিজেদের মতো করেই দল নিয়ে কাজ করছি। ইতোমধ্যে আমরা রমজানে বেশ কয়েকটি ইফতার অনুষ্ঠানেও যোগ দিয়েছি। সুতরাং আমরা প্রকাশ্যে নেই এটা বলা যাবে না।
তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি সাংগঠনিকভাবে দলকে সবার উপযোগী করার। জামায়াতকে নিয়ে অপপ্রচার চলছে। এ বিষয়ে তিনি সবাইকে সর্তক থাকার অনুরোধ করেন।