ছাত্রলীগ, যুবলীগ কিংবা স্বেচ্ছাসেবকলীগ, চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী সংগঠনের মধ্যে একটি জায়গায় রয়েছে বড় মিল। তিন সংগঠনের নগর কমিটির মেয়াদ পেরিয়েছে অনেকদিন। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি নিয়ে জয়নিউজের ধারাবাহিক আয়োজনে আজ প্রথম পর্ব নগর ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে। বিস্তারিত পড়ুন জয়নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক পার্থ প্রতীম নন্দীর প্রতিবেদনে
সেই ২০১৩ সালের ৩০ অক্টোবর চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের ২৪ জনের আংশিক কমিটি ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রীয় সংসদ। এর প্রায় একবছর পর ২০১৪ সালে ২৯১ জনের সম্মেলনবিহীন কমিটি পেয়েছিল নগর ছাত্রলীগ।
মেয়াদ শেষ করে সেই কমিটি সাত বছর পার করলেও নগরের কোনো ওয়ার্ড-থানা, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়নি পূর্ণাঙ্গ কমিটি। উপরন্তু আধিপত্য বিস্তারের খেলায় মেতে জড়িয়েছে একের অধিক ভ্রাতৃঘাতী ‘যুদ্ধে’।
সংগঠনের প্রতি নেতা-কর্মীদের আদর্শিক আনুগত্যের অভাব, বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ না করা, দলের সিনিয়র নেতাদের প্রভাব ধরে রাখতে ছাত্রলীগকে ব্যবহার করা এবং সংগঠনে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে না পারায় এই পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে বলে মনে করছেন তৃণমূল ছাত্রনেতারা।
বর্তমান কমিটির সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীরের কমিটিকে মেয়াদোত্তীর্ণ আখ্যা দিয়ে কমিটি বাতিলের দাবিতে রাজপথে সোচ্চার এখন ছাত্রলীগের তৃণমূল নেতাকর্মীরা।
জানা গেছে, বর্তমান নগর কমিটির ৫৬ জন সদস্যই বিবাহিত। দেড়শরও বেশি নেতার বয়স সংগঠনের নিয়মসিদ্ধ নয়। ছাত্রনেতাদের অনেকেই ব্যবসায়ী। বেশ কয়েকজন নেতা পড়ালেখা ছেড়েছেন অনেকদিন।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ বরাবর বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে এমন অনেক অভিযোগ দিয়েছেন নগর ছাত্রলীগের বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নগর কমিটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপসম্পাদক নাছির উদ্দিন কুতুবী জয়নিউজকে বলেন, আমাদের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে অনেক আগে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ব্যর্থ নেতৃত্বের কারণে নগর ছাত্রলীগের কার্যক্রম গতিহীন হয়ে পড়েছে। সাত বছরেও কোথাও তারা কোন্দলবিহীন কমিটি দিতে পারেনি। কর্মীদের আদর্শিকভাবেও তারা গড়ে তুলতে পারেননি। তাই আমরা নগর কমিটি বিলুপ্তের দাবিতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছি।
কেন্দ্রীয় নেতারা তাদের আশ্বস্ত করেছেন বলেও জানান এই নেতা।
নগর কমিটি বাতিলের আন্দোলনে নিজের সমর্থনের কথা জানিয়ে নগর ছাত্রলীগের সহসভাপতি রেজাউল আলম রণি জয়নিউজকে বলেন, ঐতিহ্যের সংগঠন ছাত্রলীগে নতুন নেতৃত্ব উঠে না আসা আমাদের দুঃখ দেয়। এর ফলে অনেক ত্যাগী নেতাকর্মীর স্বপ্নভঙ্গ হচ্ছে। নতুনদের কাছে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে পারলে সাবেক হয়েও গর্ব করতে পারব।
নগর ছাত্রলীগ নেতা আদিল আহমেদ কবির জয়নিউজকে বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগ। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারে থাকা অবস্থায় যতটা শক্তিশালী নেতৃত্ব তৈরি করার কথা ছিল বা সংগঠনের যতটা শক্তিশালী হওয়ার কথা ছিল তা করতে পারেনি ছাত্রলীগের বিবাহিত ও ছাত্রত্বহীন কমিটি। বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত করে দ্রুত চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের নতুন কমিটি প্রদানের জন্য ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে দাবি জানাই।
চটগ্রাম কলেজের ছাত্রলীগ নেতা মো. বেলাল জয়নিউজকে বলেন, চট্টগ্রাম নগরে হাজারো ছাত্রলীগ কর্মী রয়েছেন। যাদের মধ্যে অনেকেই সাংগঠনিকভাবে খুবই দক্ষ। আমরা চাই বর্তমান এই মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বিলুপ্ত করে সাংগঠনিকভাবে দক্ষ নেতাদের হাতে চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের নেতৃত্ব তুলে দেওয়া হোক।
পোর্ট সিটি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি কাজিম জয়নিউজকে বলেন, বর্তমান নগর ছাত্রলীগের কমিটির নেতারা আদর্শ এবং গুণাবলী অনেক আগেই হারিয়েছেন। বছরের পর বছর কমিটি না দিয়ে তার পদ দখল করে রেখেছেন। এর ফলে নতুন নেতা তৈরি হচ্ছে না। স্বপ্নভঙ্গ হচ্ছে অনেক ত্যাগী নেতা-কর্মীর।
মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির বিষয়ে জানতে চাইলে নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু জয়নিউজকে বলেন, এর দায় যদি কারো নিতে হয় তবে সেটা নেবে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ। সারাদেশে কমিটি দেওয়ার এখতিয়ার শুধু তাদেরই আছে।
তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রাম এখন মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির শহরে পরিণত হয়েছে। ছয় বছর ধরে যুবলীগের কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। শ্রমিকলীগের কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ ১৮ বছর। আর ২৬ বছরের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে চলছে স্বেচ্ছাসেবকলীগ। তারা যখন কমিটি দেবে তখন আমরা সম্মেলন নিয়ে ভাবব।
এ বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সভাপতি মো. রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তারা কেউ ফোন রিসিভ করেননি।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এক সহসভাপতি কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে জানিয়ে জয়নিউজকে বলেন, শিগগির চট্টগ্রাম নগর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হবে।