সমাজের মূল অংশ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হাটহাজারী ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের উদালিয়া গ্রামের দুর্গম সোনাই ত্রিপুরা পল্লীর বাসিন্দারা। এই জনগোষ্ঠীর মানুষ বন-জঙ্গল থেকে কাঠ সংগ্রহ ও অন্যের জমিতে সবজির আবাদ এবং জুম চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে। পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে তারা বিশ্বাস করে কারো কুদৃষ্টি পড়েছে। চিকিৎসার জন্য বৈদ্য ও কবিরাজের কাছে ছুটে যায় পল্লীর বাসিন্দারা। অন্ধবিশ্বস-কুসংস্কারে আচ্ছন্ন এদের জীবন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ত্রিপুরা পল্লীতে সুপেয় পানির তীব্র সংকট রয়েছে। নেই স্যানিটেশন ব্যবস্থা। পাশ্ববর্তী খাল থেকে পানি এনে পান করে তারা। ত্রিপুরা পল্লীতে দুটি নলকূপ রয়েছে। তারমধ্যে একটি বহু বছর ধরে নষ্ট। আরেকটি নলকূপ গত চার মাস ধরে অকেজো। ফলে বাধ্য হয়ে তারা খাল ও ছড়ার পানির পান করছে।
পল্লীর বাসিন্দা তাকিধন ত্রিপুরা বলেন, ত্রিপুরা পাড়ায় সুপেয় পানির সংকট দীর্ঘদিনের। এলাকার মেম্বার-চেয়ারম্যানরা ভোটের সময় এসব সমস্যা সমাধানের কথা বললেও পরে আর খোঁজখবর রাখেন না। ফরহাদাবাদ এলাকার মো. হানিফ নামের এক প্রবাসী পল্লীতে একটি নলকূপ স্থাপন করে দিয়েছিলেন। কিন্তু কয়েক মাস পর নলকূপটি বিকল হয়ে যায়। পল্লীর ৫২টি পরিবারের মানুষের জন্য একটি নলকূপ কোনোভাবেই যথেষ্ট নয়। তাই এখনো খাল-ছড়ার পানি আমাদেরকে পান করতে হচ্ছে।
৩০ বছর বয়সী চন্দন নাথ বলেন, পাহাড়ে জুম চাষ করে কিংবা কাঠ কেটে জীবিকা নির্বাহ করি আমরা। খাবার পানি আনতে হয় এক কিলোমিটার দূরের পাহাড়ি ছড়া থেকে। চার মাস ধরে নষ্ট টিউবওয়েলটি ক’দিন আগে মেরামত করে গেছে পাশের গ্রামের চার তরুণ কামাল, টিটু, সেলিম ও তারেক। এখানে নেই স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটারি ব্যবস্থা। সাড়ে তিন শতাধিক বাসিন্দার জন্য একটি মাত্র শৌচাগার আছে।
সম্প্রতি হামে আক্রান্ত হয়ে একই পরিবারের তিন শিশুসহ ৪ শিশুর মৃত্যু এবং ১ প্রসূতিসহ ২৪ শিশুর অসুস্থ হওয়ার পর ত্রিপুরা পল্লী পরিদর্শন করেছেন স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তারা। তারা মৃত শিশুদের পরিবার ও আক্রান্ত পরিবারের সদস্যের সঙ্গে কথা বলেন। ঢাকা থেকে আসা স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতিনিধি ডা. রেজাউর রহমান খান এ প্রতিবেদককে জানান, সুপেয় পানির তীব্র সংকটের কারণে পাশের খাল থেকে পানি এনে পান করে তারা। এছাড়া নেই স্যানিটেশন ব্যবস্থা। খোলা জায়গায় যেখানে সেখানে মলমূত্র ত্যাগ করে। এ কারণে তারা সবসময় অসুস্থ থাকে। এজন্য তাদের সচেতন করতে হবে এবং তাদের জন্য সুপেয় পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় এমন সংকট সর্বদা আমাদের মোকাবেলা করতে হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান মাহবুবুল আলম চৌধুরী জয়নিউজকে বলেন, উপজেলা প্রশাসন সার্বক্ষণিক তাদের খবরাখবর রাখছে। ইতোমধ্যে আমরা মিটিং করে দ্রুত তাদের বিশুদ্ধ পানির জন্য একটি গভীর নলকূপ, ২০টি টয়লেট এবং যাতায়াতের সুবিধার জন্য ত্রিপুরা সংযোগ সড়কের ব্যবস্থা করছি।
জয়নিউজ/আরসি