বিশ্বে বন্দরগুলোতে নিরাপত্তার জন্য ২০০৪ সাল থেকে ইন্টারন্যাশনাল শিপ অ্যান্ড পোর্ট ফ্যাসিলিটি সিকিউরিটি (আইএসপিএস) কোড বাস্তবায়ন বাধ্যতামূলক করেছিল আন্তর্জাতিক নৌ সংস্থা (আইএমও)। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে প্রায় দেড় যুগ আগেই আন্তর্জাতিক নৌ বাণিজ্য সংস্থার (আইএমও) নির্দেশনায় চট্টগ্রাম বন্দরে গঠন করা হয় আইএসপিএস মনিটরিং সেল।
বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন ট্রেড বডির নেতারা প্রায় সময় বন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুললেও, চট্টগ্রাম বন্দরকে আন্তর্জাতিক মানের বন্দর মনে করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দর কর্তৃপক্ষ উন্নত বন্দরের কাতারে যাবার যে সব শর্ত পালন বাধ্যতামূলক তা আদৌ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করছে কি-না তা দেখতে আমেরিকা থেকে আসছেন আইএসপিএস সদস্যরা। যদিও শেষমুহূর্তে। অন্যদিকে জোড়াতালি দিয়ে কোনোরকমে নিজেদের সক্ষমতা প্রদর্শনে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
বন্দর এলাকায় অবস্থানরত বিদেশি জাহাজের লোহার শিকলসহ নানাবিধ পণ্য চুরি আপাতত কমলেও, রাতের আঁধারে ইয়ার্ড থেকে কনটেইনার গায়েব, পণ্য চুরি হওয়া, কনটেইনারে বিস্ফোরক, নিরাপত্তা বিভাগের চোখে ধুলো দিয়ে খালি কনটেইনারে করে বিদেশে মানুষ পাচারের ঘটনা যেমন ঘটছে, তেমনি আন্তর্জাতিক মাফিয়ারা চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে কেমিকেলের ঘোষণা দিয়ে আনছে কোকেন আর শিল্প-কারখানার মেশিনারিজ ঘোষণা দিয়ে এদেশীয় কিছু ব্যবসায়ী আনছেন কনটেইনারভর্তি মাটি।
বন্দরের নিরাপত্তা বিভাগের মতে, প্রয়োজনীয় লোকবল ও সরঞ্জাম না থাকায় মাঝেমধ্যে এমন ঘটনা ঘটছে। ইতোমধ্যে আগের চাইতে বন্দরের পরিধি বেড়েছে ৫ গুণ। আগামীতে এসব অনৈতিক কাজ আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা বন্দর ব্যবহারকারীদের।
নিরাপত্তা বিভাগের কর্মকর্তাদের মতে, বন্দর এলাকার সিসিটিভিগুলো পুরোটাই এখন সচল আছে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় আছে অর্ধেকেরও কম নিরাপত্তা বাহিনী। এরমধ্যে অনেকেই আবার বয়সের ভারে অক্ষম। আইএসপিএস সদস্যরা ২০১৫ ও ২০১৬ সালে এসে বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছিলেন। নিরাপত্তা বিভাগ তা বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। ইতোমধ্যে নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট একাধিক যন্ত্রপাতি বিদেশ থেকে এনে বন্দরে স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিদিন কয়েক হাজার গাড়িসহ মানুষ বন্দরে প্রবেশ করে।
নিরাপত্তা বিভাগের অভিযোগ, কাস্টমসের লোকজনই নিরাপত্তা আইন মানতে চান না। এ নিয়ে প্রতিদিন নিরাপত্তা রক্ষীদের সঙ্গে তাদের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটছে। এই সমস্যা নিরসনে বন্দরের নিরাপত্তা বিভাগ থেকে চিঠি দিয়ে কাস্টমস কমিশনারের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে আইএসপিএস সদস্যদের সন্তুষ্ট করতে। তাদের রিপোর্টের ওপর নির্ভর করবে আগামীর চট্টগ্রাম বন্দরের সামগ্রিক অবস্থা।
যদি তারা কোনো নেতিবাচক রিপোর্ট দেয়, তা বিশ্বব্যাপী চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য খারাপ হবে। এতে করে আন্তর্জাতিক শিপিং ব্যবসায় কালো ছায়া পড়বে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ জয়নিউজকে বলেন, দিন যতই যাচ্ছে, ততই বাড়ছে বন্দরের কার্যক্রম। আগের চেয়ে বন্দরের পরিধি বেড়েছে কয়েকগুণ। তাই বন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করে তুলতে হবে। অতীতে আইএসপিএস নিরাপত্তার ব্যাপারে বেশকিছু নির্দেশনা দিলে তা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বন্দর। আমরা চাই সেই প্রতিশ্রুতির সফল বাস্তবায়ন।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহাবুবুল আলম জয়নিউজকে বলেন, আমরা বন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে মোটামুটি সন্তুষ্ট। তবে আমি অবশ্যই চাইব নিরাপত্তা নিয়ে যদি আরো কিছু করণীয় থাকে, দেশের স্বার্থে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ তা বাস্তবায়ন করুক। কারণ চট্টগ্রাম বন্দর বাঁচলেই বাংলাদেশ বাঁচবে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক জয়নিউজকে বলেন, আইএসপিসের চাহিদা অনুযায়ী সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এখন আগের চেয়ে অনেক ভালো। সবগুলো গেটকে সংস্কার করে যুগোপযোগী করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ইন্টারন্যাশনাল শিপ অ্যান্ড পোর্ট ফ্যাসিলিটি সিকিউরিটি (আইএসপিএস) টিম চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শনে এসেছিল ২০১৬ সালে। সোমবার (২৪ জুন) ইউএস কোস্টগার্ড সদস্যরা চট্টগ্রামে আসছেন। আগামী মঙ্গল ও বুধবার (২৫ ও ২৬ জুন) তারা বন্দর পরিদর্শন করবেন।
জয়নিউজ/আরসি