মাদক, জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ থেকে দেশের যুবসমাজকে মুক্ত রাখতে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সহযোগিতা চেয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় নগরের জিইসি কনভেনশন সেন্টারে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কমিউনিটি পুলিশিংয়ের থিম হলো, পুলিশকে সহযোগিতা করা। আগে সমাজের যে বন্ধন ছিল, কিছু হলে প্রথমে এলাকার মুরুব্বিরা বিচার করত। পরে পুলিশ হস্তক্ষেপ করত। প্রধানমন্ত্রী নিজে সবসময় কমিউনিটি পুলিশিংয়ের ওপর জোর দেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, যে গতিতে বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে, সে গতি অব্যাহত রাখার জন্য নিরাপত্তা বড় ব্যাপার। আর তাই পুলিশি ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। নুসরাত হত্যাসহ সকল ঘটনায় পুলিশের দক্ষতা-সক্ষমতা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। অপরাধীরা এই পুলিশকে ১০ বছর আগের পুলিশ মনে করলে ভুল করবে।
মন্ত্রী বলেন, ৭১-এর পরাজিত শক্তি এখনো সক্রিয়। তাই দেশের জনগনকে এগিয়ে আসার ডাক দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এখন দেশে আস্তে আস্তে জলদস্যু-বনদস্যু মুক্ত হচ্ছে।
সমাবেশে সভাপতির বক্তৃতায় সিএমপি কমিশনার মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, আমরা এখন আর ৫-১০পিস ইয়াবার পেছনে ছুটবো না। এখন আমরা ইয়াবা ব্যবসা-ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটে ধ্বংস করে দেব। একবছর হয়েছে এসেছি, মাদক ও সন্ত্রাস ইস্যুতে সামনে আমাদের আরো কঠোর রুপ দেখবেন।
সমাবেশে নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, নিজ দলের সবাইকে আপনারা চিনে রাখুন। দলে মাদকসেবী সন্ত্রাসীদের যেন জায়গা না হয় সেই বিষয়ে সর্তক থাকুন।
শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, কমিউনিটি পুলিশংয়ের ব্যাপ্তি আরো বাড়াতে হবে। বর্তমানে এর যে অবদান সেটাকে আরো ছড়িয়ে দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী আগামীর ১০০ বছরের পরিকল্পনা রেখে যাচ্ছেন। যার জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার জননিরাপত্তা। আর সেই নিরাপত্তা রক্ষায় কমিউনিটি পুলিশিং ভূমিকা রাখবে।
তিনি বলেন, অতীতে যারা অন্যায় ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করেছে তাদের বিচার সৃষ্টিকর্তা করেছে। তাদের কেউ ফাঁসিতে ঝুলেছে, আবার কেউ চুরির মামলায় জেলে আছে।
সাংসদ ডা. আফসারুল আমীন বলেন, গত দশ বছরে জনসংখ্যা বেড়ছে কিন্তু গরিব কমেছে। যে বাজেট এ সরকার দিয়েছে তাতে সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে। যুবসমাজের একটা বড় অংশ এখন কাজের আওতায় এসেছে। এতে সমাজে অন্যায় কমেছে। মাদক ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
সাংসদ এম এ লতিফ বলেন, চট্টগ্রামের আইনশৃঙ্খলায় বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করা ছাড়া কোনো পরিকল্পনা সফল করা যাবে না। মানুষের সঙ্গে পুলিশের সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করছে কমিউনিটি পুলিশিং।
সভায় নগরপিতা আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদক নির্মূল করায় কমিউনিটি পুলিশিংয়ের প্রধান লক্ষ্য। প্রধানমন্ত্রীর যে ঘোষণা, সেই লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। আগে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সবাইকে শপথ নিতে হবে। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদক যেন আমাদের না ছুঁয়ে। কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে চট্টগ্রামে জনসচেতনতা তৈরি হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে যদি অর্থ পাওয়া যায়, তাহলে এই সংগঠন আরো এগিয়ে যাবে।
পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের ধারণা অনেকটা নতুন। জনতাই পুলিশ, পুলিশই জনতা। এই চিন্তায় এগিয়ে যেতে হবে। সবাই পুলিশের সদস্য, আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করলে সমাজের অন্যায় দূর হবে। আপনাদের চোখ দিয়ে যেন আমরা দেখি। কোথায় কি হচ্ছে তা আমাদের খবর দিন।
চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে নগরে অনেক অপরাধ কমানো গেছে।
কমিউনিটি পুলিশিং চট্টগ্রামের প্রধান সমন্বয়ক ও নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ অভিযান) আমেনা বেগম বলেন, চট্টগ্রামে ১৪৫টি বিটে প্রায় ১২ হাজার সদস্য কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সঙ্গে যুক্ত। এর ফলে চট্টগ্রাম শহরে অপরাধ অনেকাংশে কমে এসেছে।
সদস্য সচিব অহীদ সিরাজ চৌধুরী স্বপন বলেন, মাত্র ৭১ সদস্য নিয়ে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের যাত্রা শুরু হয়েছিল। এখন চট্টগ্রামের ১৬টি থানায়, ৪১টি ওয়ার্ডে হাজার হাজার সদস্য আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। যার ফলে চট্টগ্রামে বড় ধরনের কোনো অপরাধ সংগঠিত হয়নি। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী মনোভাবের নিরাপদ নগরী হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছে।
স্বপন আরো বলেন, কমিউনিটি পুলিশিং চট্টগ্রামে ২৩৭টি স্কুলে মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র দেখিয়েছে। বিভিন্ন অসহায় পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। এছাড়াও নিরাপত্তা আরো জোরদার করতে নগরের সকল প্রধান সড়ক সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা হবে।
এসময় তিনি চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী সমাজ, সিটি করপোরেশনসহ সকলকে এ কাজে এগিয়ে আসার আহবান জানান।
সমাবেশ শুরুর আগে সিএমপি সদর দফতর থেকে সুসজ্জিত হাজার হাজার মানুষের অংশগ্রহণে একটি র্যালি শহর প্রদক্ষিণ করে। যেখানে প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুনে ছিল, সন্ত্রাস, মাদক ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান।