প্রবেশদ্বার দিয়ে ঢুকতেই চোখে পড়বে বিশাল ওয়াকওয়ে। আরেকটু এগোলেই দেখা যাবে দৃষ্টিনন্দন লেক আর পানির ফোয়ারা। হাঁটতে হাঁটতে চোখে পড়বে সোনালু, নাগেশ্বর, চাঁপা, রাধাচূড়া, বকুল, সাইকাস, জারুল, টগরসহ হরেক রকমের দেশি-বিদেশি ফুল, ফল ও ঔষধি গাছ।
এতসব দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে পড়া দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে বসার স্থান। রয়েছে শৌচাগারও। আর সন্ধ্যার পর তো এর সৌন্দর্যটাই অন্যরকম। তখন যে চারিদিকে জ্বলজ্বল করবে সাড়ে পাঁচশ’এলইডি লাইট!
সৌন্দর্যের এমন পসরা নিয়েই সেজেছে নগরের ঐতিহ্যবাহী জাম্বুরি মাঠ। শনিবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকাল পাঁচটা থেকে যেটি পথচলা শুরু করবে ‘জাম্বুরি উদ্যান’ হিসেবে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, এসব সৌন্দর্য দর্শন করা যাবে কোনো দর্শনি ছাড়াই!
আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের পাশে নবনির্মিত উদ্যানটির উদ্বোধন করবেন গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। সাড়ে ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে সাড়ে আট একর আয়তনের এই উদ্যান নির্মাণ করেছে গণপূর্ত অধিদপ্তর।
উদ্যানে মোট ছয়টি সুবিশাল প্রবেশদ্বার রয়েছে। উদ্যানজুড়ে রয়েছে বিশাল ওয়াকওয়ে, দৃষ্টিনন্দন লেক, পানির ফোয়ারা, দর্শনার্থীদের বসার স্থান ও শৌচাগার। সন্ধ্যার পর থাকবে আলোর ঝলকানি। সাড়ে পাঁচশ’ এলইডি লাইট থাকবে পুরো উদ্যানজুড়ে।
রেস্টুরেন্ট কিংবা ফুড কর্নারমুক্ত থাকবে জাম্বুরি উদ্যান। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত এই উদ্যান দর্শনার্থীদের জন্য থাকবে উন্মুক্ত। উদ্যানে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন পাঁচ থেকে ছয়জন নিরাপত্তাকর্মী।
আগ্রাবাদ জাম্বুরি উদ্যানকে দেশের অন্যতম নান্দনিক পার্ক উল্লেখ করে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন জয়নিউজকে বলেন, সাড়ে আট একর জমির ওপর আগ্রাবাদ জাম্বুরি মাঠে অত্যাধুনিক দৃষ্টিনন্দন পার্কটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। আগামী ৮ সেপ্টেম্বর এর উদ্বোধন হবে।
তিনি বলেন, রমনা পার্কের আদলে এ উদ্যানে হাঁটার জন্য প্রচুর খোলা জায়গা রাখা হয়েছে। মনোরম প্রকৃতির পাশাপাশি এই উদ্যানে দর্শনার্থীরা খুঁজে পাবেন মানসিক প্রশান্তি। হরেক রকম ফুল ও ফলের গাছ লাগানো হয়েছে।
উদ্যানে ফুড কর্নার কেন নেই এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, এখানে খাবারের দোকান থাকলে আড্ডা হবে। নোংরা হয়ে যাবে। এই উদ্যানটি মূলত হাঁটার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে। উদ্যান পূর্ণাঙ্গ রূপে চালু হওয়ার পর পুরো এলাকার পরিবেশ পাল্টে যাবে। নিখাদ বিনোদন এবং প্রশান্তির একটি ঠিকানা খুঁজে পাবে চট্টগ্রামের মানুষ।
সরেজমিনে জাম্বুরি উদ্যান ঘুরে দেখা যায়, স্থাপত্য অধিদপ্তরের নকশা অনুযায়ী বিশাল এই উদ্যানের চারিদিকে সীমানা প্রাচীরেও রয়েছে নান্দনিকতার ছোঁয়া। ঢাকানিবাসী চট্টগ্রামের মেয়ে উজ্জয়নী বন্যা জয়নিউজকে বলেন, চট্টগ্রামে বেড়াতে এসে এতো সুন্দর উদ্যান দেখবো ভাবিনি। চারিদিকে এত গাছের মাঝে বিশাল হাঁটার জায়গা, লেকসহ আলোকবাতি উদ্যানটিকে করেছে মনোমুগ্ধকর ।
চট্টগ্রাম গণপূর্ত বিভাগ-৪ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আহমেদ আবদুল্লাহ নূর জয়নিউজকে বলেন, উদ্যানের সব কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এখন চলছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ। উদ্বোধনের পর প্রকৃতিপ্রেমীসহ সর্বস্তরের মানুষ বিনা টিকিটেই এখানে প্রবেশের সুযোগ পাবেন।
গণপূর্ত বিভাগই উদ্যানটির রক্ষনাবেক্ষণ করবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, মন্ত্রী মহোদয়ের পরিকল্পনা অনুযায়ীই উদ্যানটি সাজানো হচ্ছে। এখানে সোনালু, নাগেশ্বর, চাঁপা, রাধাচূড়া, বকুল, সাইকাস, জারুল, টগরসহ রোপণ করা হয়েছে দেশি বিদেশি ফুল-ফল ও ঔষধি গাছ। সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার জন্য আছে ১৪টি ক্লোজসার্কিট ক্যামেরা।
উদ্যান নির্মাণ কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইএইচবি এন্ড নাহিয়ান এন্টারপ্রাইজের এমডি এরশাদুল হক বাবর জয়নিউজকে বলেন, স্থাপত্য অধিদপ্তরের নকশায় আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যেই জাম্বুরি উদ্যানের নির্মাণ কাজ শেষ করতে পেরেছি। আগামী ৮ সেপ্টেম্বর অত্যাধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন এই উদ্যানটি উদ্বোধনের জন্য এখন সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত। এটি হবে বাংলাদেশের জন্য একটি দৃষ্টান্ত।