বছর দেড়েক আগে বিয়ে হয়েছিল জান্নাতুন নাঈম নিশুর (২০)। এর মধ্যেই তাকে চলে যেতে হলো না ফেরার দেশে। শ্বশুরবাড়ির ভাষ্য, নিশুর স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। তবে নিহতের পরিবারের দাবি, তাদের মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, ময়নাতদন্তের পরই বোঝা যাবে, এটা কি হত্যা, না অন্যকিছু। এ ঘটনায় থানা পুলিশ নিহত গৃহবধূ নিশুর শ্বশুর-শাশুড়িকে আটক করেছে।
শনিবার (৬ জুলাই) দুপুর ১২টার দিকে হাটহাজারী পৌরসভা বাসস্টেশনের পাশের একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে ওই গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করে মডেল থানা পুলিশ।
নিহত গৃহবধূ নিশু পৌর এলাকার ৬নং ফটিকা ওয়ার্ডের মেহেদী পাড়া এলাকার দুলা মিয়া সওদাগর বাড়ি প্রকাশ রাজ মেহেদী পাড়ার দুবাই প্রবাসী মো. ফোরকান মেহেদীর স্ত্রী ও রাউজানের চিকদাইর ইউনিয়নের আমিনুল খলিফার বাড়ির মো. সোলায়মানের মেয়ে।
নিহতের স্বজনরা অভিযোগ করেন, বিয়ের পর থেকে পারিবারিক নানা বিষয় নিয়ে নিশুর ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালিয়ে আসছিল শ্বশুর-শাশুড়িসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন। গেল রোজার মাসেও নিশুর ওপর নির্যাতন চলে। এ নিয়ে দফায় দফায় শালিসি বৈঠক হয়। পরে শালিসের সিদ্ধান্ত মতে সে স্বামীর ঘর করছিল। এরমধ্যেই শনিবার দুপুরে আমরা খবর পেয়েছি নিশু তার ৫ মাস বয়সী ছেলে ফয়জুল্লাহ মেহেদী ফায়েজকে দুধ খাওয়ানোর সময় স্ট্রোক করেছে। তবে এটা ঠিক নয়। নিশুকে তারা পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে।
এদিকে এসব অভিযোগ সঠিক নয় দাবি করে নিশুর আটককৃত শ্বশুর মো. ফারুক আহাম্মদ জয়নিউজকে জানান, নিশুর ওপর কোনো নির্যাতন চালানো হয়নি। সে তার শিশুকে দুধ খাওয়াতে গিয়ে স্ট্রোক করেছে। পরে তাকে নিয়ে আমরা প্রথমে বাড়ির পাশে স্থানীয় একটি ফার্মেসিতে নিয়ে যাই। সেখান থেকে বাসস্টেশনের আলিফ হসপিটালে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এসময় নিহত নিশুর আত্মীয়-স্বজনরা হাসপাতালে আমার ওপর চড়াও হয় এবং আমাকে পিটিয়ে জখম করে।
এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে হাটহাজারী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এডিশনাল এসপি) আবদুল্লাহ আল মাসুম ও মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ বেলাল উদ্দীন জাহাঙ্গীর ফোর্স নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে যান। সেখানে উদ্ভূত পরিস্থিতি শান্ত করে নিশুর লাশ উদ্ধার করে তার শ্বশুর-শাশুড়িকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এডিশনাল এসপি আবদুল্লাহ আল মাসুম জয়নিউজকে জানান, নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছি। পাশাপাশি এ ঘটনায় অভিযুক্ত শ্বশুর-শাশুড়িকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। আহত শ্বশুর ফারুককে পুলিশি পাহারায় চিকিৎসার জন্য চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়া গৃহবধূ নিশুকে হত্যা করা হয়েছে কি-না তাও আমরা খতিয়ে দেখছি। তবে ময়নাতদন্তের পরই বোঝা যাবে, প্রকৃতপক্ষে এটা কি হত্যা না অন্যকিছু। ঘটনার প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটনে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।