সাগরে নিরাপদ বাস থেকে বহুদূর, লোকালয়ে ভেসে আসে ডলফিনটি। দুর্লভ প্রজাতির এই ডলফিনটির নাম ইরাবতি। নামের মতো দেখতেও সুন্দর।
শুক্রবার (৫ জুলাই) সীতাকুণ্ডের মুরাদপুর ইউনিয়নের গুলিয়াখালী সাগর উপকূলে জেলেদের পেতে রাখা জালে আটকা পড়ে ডলফিনটি।
কিন্তু যাদের কাছে তার ঠাঁই হলো, সেই জেলেরা সুন্দর বুঝলে তো! তাই পরিণতিটা হলো ভয়াবহ।
স্থানীয়দের ভাষ্য, কয়েক মন ওজনের ডলফিনটিকে জেলেরা সাগর তীরে নিয়ে এসে দড়ি দিয়ে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখেন। এতে মৃত্যু হয় ডলফিনটির। তারপর স্থানীয় এক কবিরাজের কাছে ডলফিনটি বিক্রি করা হয়।
গ্রামের চতুর কবিরাজ ডলফিনটিকে বিপন্ন প্রজাতির প্রাণি নয়, দেখলেন ওষুধের কাঁচামাল হিসেবে। তার মাথায় ‘টার্গেট’ ছিল একটাই, বের করতে হবে তেল। বানাতে হবে ওষুধ। অতএব শুরু হলো প্রস্তুতি।
তবে খবর চাপা থাকেনি। সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিল্টন রায় ঠিক খোঁজ পেয়ে গেলেন।
দিনটি ছিল শনিবার (৬ জুলাই)। সময় তখন রাত। মিল্টন রায় ঘটনাস্থল ভাটেরখিল এলাকায় ছুটে যান। খবর পেয়ে কবিরাজ দেন চম্পট। তবে পেছনে পড়েছিল পঁচা-গলা ইরাবতি ডলফিনটি!
কথা হলো চট্টগ্রাম মেরিন ফিসারিজ একাডেমির অধ্যাপক নোমান আহমেদ সিদ্দিকীর সঙ্গে। নোমান বলেন, বঙ্গোপসাগরের সন্দ্বীপ চ্যানেল ও হালদা এলাকায় ছয় প্রজাতির ডলফিন রয়েছে। উদ্ধার হওয়া ডলফিনটির নাম ইরাবতি ডলফিন।
তিনি বলেন, সাগরে দূষণ ও জেলেদের দেওয়া বিন্ধিজালে আটকা পড়ে ডলফিনের মৃত্যু হতে পারে। সাগরতলে জমে থাকা প্লাস্টিক বর্জ্য খাবারের সঙ্গে ডলফিনের পেটে যাওয়াও আরেকটা কারণ হতে পারে।
উদ্ধার হওয়া ডলফিনটি কী কারণে মারা গেছে তা বের করতে পোস্টমর্টেম করা খুব জরুরি বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
এদিকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ডলফিনটি মৃত ভেসে এসেছিল বলে দাবি করেন। জানতে চাইলে মুরাদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাহেদ হোসেন নিজামী বাবু জয়নিউজকে বলেন, স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে আমি জেনেছি মাছটি মরা অবস্থায় ধরা পড়েছিল।
‘পরে জেলেরা এটিকে ভাটেরখীল এলাকার দিকে নিয়ে যায়। তারপর এক কবিরাজি ওষুধ বিক্রেতা ওষুধি তেল বানানোর জন্য মাছটি কিনে নিয়ে গেছে,’ যোগ করেন তিনি।
এ বিষয়ে ইউএনও মিল্টন রায় জয়নিউজকে বলেন, আমি অনেক খোঁজ নিয়ে পঁচা অবস্থায় মাছটি জব্দ করেছি। তবে তেল তৈরির জন্য যে ক্রেতা মাছটি কিনেছিলেন তিনি পালিয়ে গেছেন। আমি মাছটি মাটিতে পুঁতে ফেলতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দিয়েছি।