জাপার নয়া চেয়ারম্যান রওশন নাকি জিএম কাদের!

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলোচিত একটি নাম। রাজনীতিতে বিভিন্ন সময় এরশাদের ভূমিকা ও ডিগবাজি নিয়ে হয়েছে নানা মুখরোচক আলোচনা-সমালোচনা। তবে ভোটের রাজনীতিতে আলোচিত দলের জায়গা ধরে রেখেছে জাতীয় পার্টি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এরশাদই ছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান। তাঁর মুত্যুর পর এখন প্রশ্ন, কে পাচ্ছেন পার্টির চেয়ারম্যানের পদ।

- Advertisement -

এরশাদের অবর্তমানে দলের চেয়ারম্যানের পদ প্রশ্নে নাম আসছে জিএম কাদের ও রওশন এরশাদের। অবশ্য দলের দায়িত্বশীল নেতারা সামনে কাউন্সিলের কথাও বলছেন।

- Advertisement -google news follower

এরশাদ জীবদ্দশায় তাঁর ভাই জিএম কাদেরকে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিয়ে গেলেও, তা নিয়ে চরম অসন্তোষ রয়েছে দলে। কারণ জাতীয় পার্টিতে জিএম কাদের ও রওশন এরশাদের প্রকাশ্য দুইটি গ্রুপ রয়েছে। এ নিয়ে কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদকে। জীবিত অবস্থায় এর কোনো স্থায়ী সমাধান হয়নি। তাঁর মৃত্যুর পর তা আরো প্রকট আকার ধারণ করেছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টরা।

জাতীয় পার্টিতে প্রেসিডিয়াম সদস্য আছেন মসিউর রহমান রাঙ্গা (মহাসচিব), ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কাজী ফিরোজ রশীদ, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, ফখরুল ইমাম, মুজিবুল হক চুন্নু, নুর-ই-হাসনা লিলি চৌধুরী, মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা, সুনীল শুভরায়, এসএম ফয়সল চিশতী, মীর আব্দুস সবুর, হাজি সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলনসহ কয়েক ডজন।

- Advertisement -islamibank

এদের মধ্যে মসিউর রহমান রাঙ্গা, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মুজিবুল হক চুন্নু, জিয়াউদ্দিন বাবলু, ফখরুল ইমামসহ বেশ কয়েকজন ‘রওশনপন্থি’ হিসেবে পরিচিত। বাকিদের বেশিরভাগই জিএম কাদেরের সঙ্গে আছেন।

এরশাদের নানা নাটকীয় সিদ্ধান্ত

পার্টির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রশ্নে শেষবেলায় এরশাদ নিজেই নাটকীয় কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। বিশেষ করে এই স্ববিরোধী সিদ্ধান্তগুলো দেখা যায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে। নির্বাচনি ডামাডোলের মধ্যে ২০১৮ সালের ৩ ডিসেম্বর এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারকে মহাসচিব পদ থেকে সরিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয় মসিউর রহমান রাঙ্গাকে।

চিকিৎসা নিতে বিদেশ যাওয়ার আগে গত ১ জানুয়ারি জাতীয় পার্টিতে নিজের ‘উত্তরসূরী’ হিসেবে ছোট ভাই জিএম কাদেরের নাম ঘোষণা করেন এরশাদ। সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতার পদেও সামনে আনা হয় তাকে। এরশাদের অনুপস্থিতিতে জিএম কাদের পার্টির দায়িত্বভার গ্রহণ করলে দলের মধ্যে তৈরি হয় অস্থিরতা। এজন্য ‘রওশনপন্থি’দের দিকে আঙুল তোলেন ‘কাদেরপন্থি’রা।

এরশাদ চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফেরার পর ২২ মার্চ জিএম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরিয়ে দেন। পরের দিন সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতার পদ থেকেও কাদেরকে সরিয়ে দেওয়া হয়। সংসদের উপনেতা করা হয় রওশন এরশাদকে। খবর ছড়ায়, রওশনের চাপেই ছোট ভাই জিএম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যানের পদ দিয়েও তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। দুই সপ্তাহ পার না হতেই ৪ এপ্রিল জিএম কাদেরকে দলের কো-চেয়ারম্যানের পদ ফিরিয়ে দেন এরশাদ। দুইদিন পর এক ‘সাংগঠনিক নির্দেশে’ তাঁকে আবার দলের ‘ভবিষ্যৎ চেয়ারম্যান’ও ঘোষণা করেন এরশাদ।

সর্বশেষ এরশাদ শয্যাশায়ী হওয়ার আগে ৪ মে রাতে বারিধারার বাসভবনে জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকে জিএম কাদেরকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা দেন। এরশাদের অনুপস্থিতিতে গত ৩ জুলাই জাপার বনানী কার্যালয়ে প্রেসিডিয়াম সদস্যদের নিয়ে যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সভাপতিত্ব করেন জিএম কাদের। ওই সভায় উপস্থিত হননি রওশন এরশাদ।

আর এরশাদ অসুস্থ হয়ে সিএমএইচে ভর্তি হওয়ার পর যাবতীয় ব্রিফিং জিএম কাদের করলেও, হাসপাতালে নিয়মিত গিয়ে খোঁজখবর রাখছিলেন রওশন। এদিকে দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকার পর আবার রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা।
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাওয়ার পর জিএম কাদেরকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিদিশা লেখেন, ‘এরশাদ সাহেব যে ওনার ভাইকে তাঁর জায়গায় বসিয়েছেন, এটিকে স্বাগত জানাই। আমি আশা করবো উনিও এরশাদ সাহেবের মতো সারাদেশ ঘুরবেন, সব নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করবেন। এছাড়া যাদের জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে, তাদেরও ফিরিয়ে আনবেন।’

জাতীয় পার্টির ভবিষ্যৎ চেয়ারম্যান কে হবেন জানতে চাইলে মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, ‘স্যার (এরশাদ) তো জিএম কাদেরকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিয়েছেন। আগামী কাউন্সিলে যদি একাধিক প্রার্থীর নাম প্রস্তাব করা হয়, তখন পরিস্থিতিই বলে দেবে, কে হবেন পার্টির চেয়ারম্যান।’

পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সোলায়মান আলম শেঠ জয়নিউজকে বলেন, ‘জিএম কাদেরের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি এগিয়ে যাবে। কারণ রওশন এরশাদের বয়স হয়েছে। দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চালাতে তাঁর কষ্ট হবে।’

এ বিষয়ে জানতে সাবেক মন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির ‘রওশনপন্থি’ হিসেবে পরিচিত ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

জয়নিউজ/আরসি

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM