উদ্বোধনের আগেই আউটার রিং রোডের ওয়াকওয়ের কয়েকটি অংশ ধসে পড়ায় চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রামবাসীর মধ্যে। এ ঘটনায় চট্টগ্রামে সমাবেশের ডাক দিয়েছে ‘নাগরিক উদ্যোগ’ নামে একটি সংগঠন। এছাড়া ধসের ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। এজন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর আহ্বান জানিয়েছেন অনেকে।
অন্যদিকে এ ধসের ঘটনায় বিশেষজ্ঞ তদন্ত কমিটি করার দাবি জানিয়েছেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বোর্ড সদস্য ও নগর পরিকল্পনাবিদ আশিক ইমরান।
তিনি জয়নিউজকে বলেন, প্রকল্প শেষ না হওয়ার আগেই ধসের ঘটনা দুঃখজনক। এখানে কি ঘাটতি রয়েছে তা খুঁজে বের করা দরকার। যদি এ ধরনের ঘটনা পুরো প্রকল্পে হয়, তবে এর দায় কে নেবে! কারণ রিং রোডের সঙ্গে কর্ণফুলী টানেলকে সংযুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। বিশেষজ্ঞ প্যানেলের একটি তদন্ত কমিটি করলে এই কারণগুলো বেরিয়ে আসবে।
অজ্ঞতার কারণে পতেঙ্গা আউটার রিং রোডের ওয়াকওয়েটি ধসে পড়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। এছাড়া প্রকল্প পরিচালকের এ ধরনের কাজে অতীত অভিজ্ঞতা রয়েছে কিনা প্রশ্ন উঠেছে।
আরও পড়ুন: ‘কর্মবীর’ ছালামের কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন, ফেসবুকে সমালোচনার ঝড়
নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদার জয়নিউজকে বলেন, যেহেতু সাগরপাড়ে সড়কটি করা হচ্ছে, সেক্ষেত্রে অনেক সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত ছিল। মাটির কমপ্রেশন সঠিকভাবে না হলে যে কোনো স্থাপনা মুহূর্তে ধসে পড়বে, এটাই স্বাভাবিক। তাদের উচিত ছিল আগে প্রোটেকশন দিয়ে কাজ করা অথবা কাজ শেষে দ্রুত প্রোটেকশন দেওয়া। কিন্তু তারা এর কোনোটাই করেনি। প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছাকে তারা বলি দিয়েছে এবং সরকারি টাকা অপচয় করেছে।
এদিকে আউটার রিং রোডের ওয়াকওয়ে ধসের ঘটনায় ফুঁসে উঠেছে চট্টগ্রামবাসী। এ ঘটনার সঙ্গে দায়ীদের বিচার এবং তদন্তের দাবিতে মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সকাল ১১টার দিকে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বরে সমাবেশের ডাক দিয়েছে ‘নাগরিক উদ্যোগ’ নামে একটি সংগঠন। যার প্রধান উপদেষ্টা নগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি খোরশেদুল আলম সুজন।
তিনি জয়নিউজকে বলেন, এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দরকার। কে বা কারা সরকারি এ টাকা অপচয় করেছে, তা জনগণের জানা দরকার। এভাবে লুটপাট হতে পারে না।
সমাবেশের বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ হায়দার চৌধুরী জয়নিউজকে বলেন, চট্টগ্রামের স্বার্থে আমরা বসে থাকতে পারি না। ওয়াকওয়ে ধসের প্রতিবাদে আমরা মঙ্গলবার সমাবেশ করব।
শনিবার (১৩ জুলাই) চট্টগ্রাম শহর রক্ষায় নির্মিত উপকূলীয় বাঁধ কাম পতেঙ্গায় আউটার রিং রোডের ওয়াকওয়ের কয়েকটি অংশ ধসে পড়ে।
প্রসঙ্গত, জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) ২০০৫ সাল থেকে পতেঙ্গা-ফৌজদারহাট পর্যন্ত বেড়িবাঁধ কাম আউটার রিং রোড নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু করে। যাচাই শেষে ২০০৭ সালে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে চুক্তি করে জাইকা।
২০১৬ সালের জুলাইয়ে চার লেনের এ সড়কটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। আড়াই হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)।
উপকূলীয় বাঁধ কাম আউটার রিং রোড নির্মাণের নামে এ প্রকল্পের আওতায় ১৭ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ হবে। এরমধ্যে রয়েছে ১৫ দশমিক ২০ কিলোমিটার মূল ও ২ দশমিক ১৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক। এছাড়া প্রায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে তৈরি করা হবে।
শুরুতে এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৮৬৫ কোটি ২৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা। দুইবার সংশোধনের পর বর্তমানে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৪২৬ কোটি ১৪ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। এরমধ্যে বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে ১ হাজার ৭২০ কোটি ১১ লাখ ৮০ হাজার টাকা ও জাইকার সহায়তা ৭০৬ কোটি টাকা।
ইতোমধ্যে প্রকল্পের বেশিরভাগ কাজ শেষ হয়েছে। ২০১৯ সালে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা।
জয়নিউজ/আরসি