চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) ১৭নং পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থীদের প্রচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে নির্বাচনি এলাকা। বৈরি আবহাওয়ার কারণে এতদিন তেমন প্রচারণা না চালালেও বর্তমানে প্রত্যেক প্রার্থীই প্রচারণা নিয়ে ব্যস্ত। প্রার্থীরা ভোটারদের ঘরে ঘরে গিয়ে জানিয়ে আসছেন নির্বাচনি ইশতেহার।
মাত্র ৮ মাসের জন্য এ নির্বাচন যে আগামী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে সেটি মাথায় রেখেই ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন প্রার্থীরা। এ উপনির্বাচনে অংশ নিয়েছেন মোট ৬ জন প্রার্থী। তার মধ্যে বিএনপি সমর্থিত আছে একজন, বাকি ৫ জন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। যার কারণে অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে বিএনপির প্রার্থী এমনটা ধারণা ভোটারদের।
জানা যায়, পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ডে আগামী ২৫ জুলাই শূন্য কাউন্সিলর পদে উপ-নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে প্রয়াত কাউন্সিলর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি একেএম জাফরুল ইসলামের ছেলে একেএম আরিফুল ইসলাম ডিউক, চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের উপপ্রচার সম্পাদক ও সাবেক কাউন্সিলর শহিদুল আলম, সরকারি সিটি কলেজের সাবেক ভিপি ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মাসুদ করিম টিটু, নগর যুবলীগের সাবেক সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক শাহেদুল ইসলাম শাহেদ, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো. শফি ও যুবলীগ নেতা শেখ নাঈম হোসেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
আওয়ামী লীগের ৫ প্রার্থীর বিপরীতে বিএনপির একক প্রার্থীর কারণে অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবেন বিএনপির ডিউক। এছাড়াও বাকলিয়া এলাকা বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। বিগত দুইবারের নির্বাচনে বিপুল ভোটে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন ডিউকের পিতা ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি একেএম জাফরুল ইসলাম। যার কারণে পিতার শূন্য আসনে ছেলে ডিউকও চমক দেখাবে এমন বিশ্বাসে বিএনপির সমর্থন পান তিনি। নির্বাচনে পিতার প্রতীক মিষ্টি কুমড়া নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ডিউক।
এছাড়াও অনেকেই বলছেন, নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন বাকলিয়ার বাসিন্দা হওয়ার কারণে তার জনপ্রিয়তা ও পিতা জাফরের জনপ্রিয়তা কাজে লাগাবেন তিনি।
অপরদিকে আওয়ামী লীগের ৫ প্রার্থীর মধ্যে শহিদুল আলম তিনবার ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১০ ও ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ডিউকের পিতা একেএম জাফরুল ইসলামের কাছের পরাজিত হন তিনি। নগর রাজনীতিতে শহিদুল আলম আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। ঘুড়ি প্রতীক নিয়ে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
মাসুদ করিম টিটু সরকারি সিটি কলেজে ছাত্রলীগের প্যানেলের এজিএস, ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। এর আগে তিনি ওয়ার্ড ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। টিটু সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। রেডিও প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে লড়ছেন টিটু।
শাহেদুল ইসলাম শাহেদ অবিভক্ত চান্দঁগাও থানা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক ও সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। ছিলেন ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতিও। এছাড়াও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও নগর যুবলীগের সহসাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন শাহেদ। নগরের রাজনীতিতে তিনি সাবেক মন্ত্রী ডা. আফছারুল আমিন ও সিডিএর সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। টিফিন ক্যারিয়ার প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিনি।
অপর দুই প্রার্থীর মধ্যে শেখ নাঈম হোসেন ওয়ার্ড যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। মো. শফি বিগত ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কমিটির সহসভাপতি ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য বলে জানা গেছে। নির্বাচনে তিনি লাটিম প্রতীক নিয়ে লড়ছেন।
বিগত ২০১৫ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফলে জানা যায়, ১০ হাজার ৫শ’ ৭২ ভোট পেয়ে মিষ্টি কুমড়া প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন একেএম জাফরুল ইসলাম চৌধুরী। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী শহিদুল আলম ঘুড়ি প্রতীক নিয়ে পেয়েছিলেন ৫ হাজার ৪শ’ ৪ ভোট। এই হিসেব থেকে বোঝা যায় বিএনপির প্রার্থী ডিউক অনেকটা সুবিধাজনক স্থানে আছেন।
এদিকে নগর আওয়ামী লীগ থেকে যদি কাউকে সমর্থন না দেওয়া হয় তাহলে ৫ প্রার্থীর লড়াইয়ে জয়ের সম্ভাবনা আছে বিএনপি প্রার্থী ডিউকের। তবে আওয়ামী লীগ যদি একক প্রার্থী হিসেবে কাউকে ঘোষণা করে তাহলে অনেকটা কঠিন হবে ডিউকের জন্য নির্বাচনি লড়াই। একক প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগ কাউকে সমর্থন দিলে সেক্ষেত্রে এগিয়ে আছেন মো. শফি ও মাসুদ করিম টিটু।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন জয়নিউজকে বলেন, যেহেতু আরিফুল ইসলাম ডিউকের পিতা কাউন্সিলর অবস্থায় মারা গেছেন এবং তিনি দলের একজন নিবেদিত নেতা ছিলেন তাই আমরা দলীয়ভাবে তাকে সমর্থন দিয়েছি। আশা করি পিতার অসমাপ্ত কাজ করার জন্য বাকলিয়াবাসী ডিউককে বিজয়ী করবে।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী জয়নিউজকে বলেন, দলীয়ভাবে এখনো কাউকে সমর্থন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়নি। যেহেতু নির্বাচনে ভোটগ্রহণের সময় এখনো দেরি আছে। পরবর্তীতে কি সিদ্ধান্ত হবে তা পরে জানানো হবে।