ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের (উত্তর ও দক্ষিণ) মশক নিধন কার্যক্রম নিয়ে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন উচ্চ আদালত। ইতোমধ্যে ঢাকায় ডেঙ্গুতে শিশুসহ ২১ থেকে ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। মশা নিধনে অকার্যকর ওষুধ আমদানি ও সরবরাহে জড়িতদের দুর্নীতি তদন্ত করারও নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন কি কি ব্যবস্থা নিয়েছে, তাও জানতে চেয়েছেন আদালত।
ঢাকার যখন এই অবস্থা তখন স্বস্তিতে আছে চট্টগ্রামের মানুষ। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নানা কার্যকরী উদ্যোগে মশার উপদ্রব এখানে নেই বললেই চলে। ফলে এখানে ডেঙ্গু রাজধানী ঢাকার মতো বিরাট আকার ধারণ করেনি।
ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়া রোধে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম শুরু করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। প্রতিদিন ১৬১ জন কর্মী নগরের বিভিন্ন স্থানে ওষুধ ছিটাচ্ছে। এছাড়া রয়েছে সচেতনতা সৃষ্টিতে গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন ও লিফলেট বিতরণ। প্রতিটি ওয়ার্ডের ঝোপঝাড় পরিষ্কার ও নালা-নর্দমায় যেখানে মশা বংশ বিস্তার করে, সেখানেও ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। ফলে ডেঙ্গুর প্রকোপ নেই চট্টগ্রামে।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, ২ কোটি টাকার ২৫ হাজার লিটার এডাল্টিসাইড ও ১০ হাজার লিটার লার্ভিসাইড ওষুধ কিনেছে চসিক। চসিকে ১১০টি জার্মানির ফগার মেশিন ও ৩৫০টি হ্যান্ড স্প্রে মেশিন রয়েছে। নগরের ৪১ ওয়ার্ডে ১৬১ জন শ্রমিক নিয়মিত ওষুধ ছিটানোর কাজ করছে।
এ বিষয়ে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন জয়নিউজকে বলেন, আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর চট্টগ্রাম শহরে ডোর টু ডোর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ব্যবস্থা নিয়েছি। এছাড়া সড়কের বিভিন্ন স্থান থেকে ডাস্টবিন সরিয়ে নিয়েছি। জনগণকে যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা না ফেলার জন্য গণমাধ্যম ও মাইকিংয়ের মাধ্যমে প্রচার কার্যক্রম চালিয়েছি। এর সুফল এখন নগরবাসী পাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, মশক নিধনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন বছরব্যাপী বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। জনগণ ভালো থাকলেই আমার শান্তি। কারণ আমি জনগণের সেবকের দায়িত্ব নিয়েছি।
ডেঙ্গুরোধে জনগণের সহযোগিতা কামনা করে মেয়র নাছির বলেন, বদ্ধ পানি এডিস মশার প্রজননক্ষেত্র। তাই বাসাবাড়ির আশপাশে ডাবের খোসায়, ফুলের টবে, ছাদে, ফ্রিজের নিচের ট্রেতে যাতে পানি না জমে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জনের দেওয়া তথ্য অনুসারে, গত ফেব্রুয়ারিতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে একজন আগ্রাবাদ মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়। জুনের মাঝামাঝি সপ্তাহে একজন জেনারেল হাসপাতালে আর সর্বশেষ জুলাইয়ের ২ তারিখ একজন ডেঙ্গু রোগী চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়।
সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী জয়নিউজকে বলেন, ডেঙ্গু বিষয়ে ঢাকা আর চট্টগ্রামের পার্থক্য অনেক। এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম অনেক সফল। গত ছয় মাসে নগরীতে ডেঙ্গুরোগে আক্রান্ত হয়েছে মাত্র তিনজন। তারা সুস্থ হয়ে বাসায়ও ফিরে গেছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নগর ও জনসচেতনতা এক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা রেখেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গেল কয়েক বছরের তুলনায় রাজধানীতে এবার ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, দিনে গড়ে ১৩৭ রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। তবে প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা আরও বেশি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর রাজধানীতে এখন পর্যন্ত ২ হাজার ১০০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণকক্ষের তালিকা অনুসারে বর্তমানে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছে ১ হাজার ৫৯ ডেঙ্গু রোগী।
জয়নিউজ/আরসি