কথার তুবড়ি ছুটিয়ে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন সমাবেশের প্রধান অতিথি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বক্তৃতা প্রায় শেষের দিকে, তখন হাজারো জনতার মাঝে পিনপতন নীরবতা।
সবাই আগ্রহভরে অপেক্ষায় ছিলেন, মহাসচিব কী কর্মসূচি দিতে যাচ্ছেন দলীয় প্রধানের মুক্তির জন্য! সে আগ্রহে পানি ঢেলে দিলেন মির্জা ফখরুল! কর্মসূচি ছাড়াই ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি শেষ করেন বক্তৃতা।
কিন্তু তাঁর এ আহ্বানে দলীয় কর্মীরা সন্তুষ্ট হবেন কেন? অসন্তোষ বুঝতে পেরে মির্জা ফখরুল স্লোগান ধরলেন, ‘মুক্তি মুক্তি মুক্তি চাই/ খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’। তারচেয়েও দ্বিগুণ উদ্যমে কর্মীরাও গলা মেলান তাতে।
সবমিলিয়ে শনিবার (২০ জুলাই) বেলা ২টা থেকে শুরু হওয়া সমাবেশ যথারীতি শেষ হয় আস্ফালনের মধ্যদিয়েই। তাও কোনো কর্মসূচি ছাড়াই!
এতে কর্মীদের মধ্যে দেখা গেছে ক্ষোভ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মহিলা দলের কয়েকজন নেত্রী বলেন, এত কষ্ট করে লোক নিয়ে সমাবেশে আসলাম। কী লাভ হলো? নেতারা ঢাকা থেকে আসলেন, বক্তব্য রাখলেন, সেই প্রতিদিনের কথাগুলোরই পুনরাবৃত্তি করলেন। এগুলো তো আমরা টিভি টকশোতে বসেও শুনতে পারি।
সমাবেশ জুড়েই ছিল বিএনপির তরুণ কর্মী-সমর্থকদের ভিড়। চট্টগ্রাম শহর, উপজেলা, আশপাশের বেশ কয়েকটি জেলা থেকে তারা এসেছিলেন বিভাগীয় সমাবেশ সফল করতে। পরনে ছিল তাদের একই রঙের টি-শার্ট। একজন আবার এসেছিলেন সারাগায়ে ধানের শীষ লাগিয়ে। সমাবেশে আসা নেতা-কর্মীদের কারো মধ্যেই আবেগের কমতি ছিল না।
তবে এরমধ্যেও দেখা মিলেছে বড় সমাবেশে তাদের স্বভাবসুলভ মারামারি। কয়েকদফা হাতাহাতি নেতাদের হস্তক্ষেপে রূপ নেয়নি বড় কোনো ঘটনায়। সমাবেশ শেষে যত্রতত্র পড়ে ছিল বেগম জিয়ার মুক্তি চেয়ে নিয়ে আসা ব্যানার-ফেস্টুনও।
সমাবেশে বক্তৃতা করেন দলের অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী। এক-দুই মিনিটের বক্তৃতায় প্রত্যেকে যতবার বেগম খালেদা জিয়ার নাম উচ্চারণ করেছেন তারচেয়েও বেশি শেখ হাসিনার নাম উচ্চারিত হয়েছে। অথচ সমাবেশ ছিল খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে!
নগরের কাজির দেউড়ির নাসিমন ভবনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে এই বিভাগীয় সমাবেশের আয়োজন করে বিএনপি।
নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্করের সঞ্চালনায় সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের নগর সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনসহ কেন্দ্রীয় ও নগরের অর্ধশতাধিক নেতা।
এদিকে সমাবেশ থেকে নতুন কর্মসূচি দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আবুল হাশেম বক্কর জয়নিউজকে বলেন, ‘আজকের সমাবেশটাইতো ছিল বেগম জিয়ার মুক্তির সমাবেশ। বিভাগীয় শহর থেকে নেতা-কর্মীরা এসেছেন। তারা ফিরে গিয়ে আন্দোলন জোরদার করবেন। ঢাকার সমাবেশে আরো দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে আমরা উপস্থিত হব।’
ঢাকার সমাবেশ কবে এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এখনো সে ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।’