রাজস্ব আদায়ে গত অর্থবছরে চসিক রেকর্ড সৃষ্টি করেছে বলে জানিয়েছেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) দুপুরে নগরের রীমা কনভেনশন সেন্টারে ‘জনতার মুখোমুখি মেয়র’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। ২১ নম্বর জামালখান ওয়ার্ডের উন্নয়ন ও পরিকল্পনা নিয়ে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে মেয়র বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন।
এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, গত অর্থবছরে ৫৯ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছি। যা চসিকের ইতিহাসে রেকর্ড। চসিকের মাসিক ব্যয় ২৬০ কোটি টাকা। ৯ কোটি টাকার প্রশাসনিক ব্যয় এখন ২০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ভর্তুকি দিচ্ছে চসিক।
সাম্প্রতিক গুজবের বিষয়ে একজন প্রশ্ন করলে মেয়র বলেন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভিত্তিহীন গুজবে বিভ্রান্ত হাবেন না। আইন নিজের হাতে তুলে না নিয়ে কাউকে সন্দেহ হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানাতে হবে। আমি ইতোমধ্যে আমার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে গুজব প্রতিরোধে একটি নির্দেশনা দিয়েছি।
এ ওয়ার্ডের বাসিন্দারা বিমান অফিসের পেছনে নালায় টাইলসের ময়লা ফেলা, সিঁড়ির গোড়ায় অবৈধ বাজার বসিয়ে চাঁদাবাজি ও ওজনে কারচুপি, যানজট নিরসনে জামালখানের স্কুলগুলো আধঘণ্টা আগে পরে ছুটি দেওয়া, স্কুলবাস চালু করা, ফুটপাত ও সড়ক দখল করে হকার বসা ইত্যাদি বিষয়ে মেয়রের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
যানজট প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন অনুমোদন দেয় সিডিএ, পাঠের অনুমোদন দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে স্কুলগুলো যদি চায় তাহলে আধঘন্টা আগে ছুটি দিতে পারে। স্কুলের সামনে যে গাড়িগুলো দাঁড়িয়ে থাকে মূলত সেগুলোর জন্যই যানজটের সৃষ্টি হয়। ট্রাফিক বিভাগকে এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
ডেঙ্গু প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, চসিক নিয়মিত নগরে ওষুধ ছিটাচ্ছে, ডোর টু ডোর ময়লা সংগ্রহ করছে এবং রাতের মধ্যে পুরো নগরের ময়লা অপসারণ করছে। ফলে অন্য যেকোনো শহরের চেয়ে চট্টগ্রামে মশা কম, ডেঙ্গুর প্রকোপও কম। ফগার ও হ্যান্ড স্প্রে মেশিনে ১৬১ জন ওষুধ ছিটাচ্ছেন। ডাক্তারদের সচেতন করেছি। নগরবাসীকে বিজ্ঞপ্তি, প্রচারপত্র দিয়ে সচেতন করছি। ডেঙ্গু আক্রান্ত কেউ যদি চিকিৎসা করাতে অপারগতা জানান তবে আমরা দায়িত্ব নেব।
মেয়র বলেন, আমি কোনো সম্মানী বা সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করিনি। ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা সম্মানীসহ সাড়ে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা অনুদান দিয়ে আসছি। শিক্ষার্থী, সেবা সংস্থা, রোগীদের কল্যাণে এ টাকা খরচ হচ্ছে।
পাহাড়ি ঢলে জামালখান এলাকার সড়কগুলোতে বৃষ্টি হলেই হাঁটু পানি উঠে এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, ২০১৫ সালের ২৬ জুলাই চসিকের দায়িত্ব নিই। ওই দিন মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছিল। তাই জলাবদ্ধতা নিরসনে চীনা প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনা করি। ২০১৬ সালে ১১ মাস তারা ফিজিবিলিটি স্টাডি করেছিল বিশেষজ্ঞরা। তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ডিপিপি মন্ত্রণালয়ে জমা দিই। তখন জানতে পারি সিডিএর মেগাপ্রকল্প একনেকে উঠছে।
আমরা এর বিরোধিতা করিনি, শতভাগ সহযোগিতার সিদ্ধান্ত দিয়ে প্রতিনিধি পাঠিয়েছিলাম। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে কাজ চলছে। ফিজিবিলিটি স্টাডি শেষে ১৩টি খালের ড্রয়িং ডিজাইন কয়েকদিন আগে হস্তান্তর করা হয়েছে। চসিক একাধিকবার চিঠি দিয়ে সিডিএকে জানিয়েছে মেগাপ্রকল্পের আওতাধীন খালগুলোর ৩০২ কিলোমিটার তালিকা দেওযার জন্য। যাতে ওভারলেপিং না হয়। কিন্তু সিডিএর তৎকালীন চেয়ারম্যান দেননি। এখন নতুন চেয়ারম্যান জানিয়েছেন ৩৮৪ কিলোমিটার খাল সিডিএ করবে।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন জামালখান ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন ও কাউন্সিলর মনোয়ারা বেগম মনি।
এসময় উপস্থিত ছিলেন প্যানেল মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, সচিব আবু সাহেদ চৌধুরীসহ চসিকের কর্মকর্তারা। এছাড়া অনুষ্ঠানে চসিকের অর্থায়ন ও উদ্যোগে চার বছরে বাস্তবায়ন করা প্রকল্প, বেসরকারি উদ্যোগে এ ওয়ার্ডে সৌন্দর্যবর্ধনের নানা প্রকল্প, ঐতিহ্য, স্থাপনা নিয়ে একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।