প্রকৃতির সঙ্গে তার যেন হৃদ্যতার বন্ধন। শুধু তাই নয়, বৃক্ষরাজির সাথে তার অকৃত্রিম অন্তরঙ্গতা। তাইতো এক যুগেরও বেশি সময় ধরে সংসারের খরচ বাঁচিয়ে চারাগাছ কিনে তা মানুষের মাঝে বিতরণ করে যাচ্ছেন হাটহাজারী উপজেলার চিকনদণ্ডী ইউনিয়নের ফতেয়াবাদ গ্রামের আবদুল কাদের দফতরি বাড়ির মো. ইসহাক সওদাগরের পুত্র নুরুল হক বাবুল।
যশ-খ্যাতি বা স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য নয়, শুধু পরিবেশ রক্ষায় মানুষের মাঝে তার এই চারা বিতরণ। অনুকরণীয় এ কাজের স্বীকৃতি হিসেবে মিলছে প্রাপ্তি। এলাকার ছোট-বড় সবার কাছে তিনি ‘বৃক্ষপ্রেমিক বাবুল’ নামে পরিচিত।
বর্ষা মৌসুম এলেই নারিকেল গাছের চারা বিতরণে নেমে পড়েন এই বৃক্ষপ্রেমিক। নিজের সঞ্চয়ের টাকা থেকে তিনি হাজার হাজার নারিকেল গাছের চারা এলাকার মানুষের মাঝে বিতরণ করেন। শুধু নিজ উপজেলা নয়, পার্শ্ববর্তী ফটিকছড়ি উপজেলার বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, ক্লাব, সংগঠন ছাড়াও মানুষের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে বিতরণ করেন গাছের চারা। ইচ্ছা থাকলে অল্প উপার্জন করেও যে মানুষ ও পরিবেশের কল্যাণ করা যায়, তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তিনি। তার উৎসাহে আশেপাশের অনেক মানুষ উদ্বুদ্ধ হয়েছে গাছ লাগাতে।
উপজেলার ফতেয়াবাদে কর্মস্থল শাহ আমানত ফার্নিচার-এ বসে কথা হয় বাবুলের সঙ্গে। তিনি এ প্রতিবেদকের কাছে তুলে ধরেন তার না বলা কথা। জানান, খুব ছোটবেলায় সবার কাছ থেকে লুকিয়ে বৃক্ষ বিতরণ শুরু করেন তিনি। এরপর থেমে থাকেনি তার বৃক্ষ বিতরণ কর্মসূচি। ৬ বছর আগে জীবনে আর্থিক নিরাপত্তা আনতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানে পাড়ি জমান। সেখানেও তিনি তার পরিচিতজনদের কাছে বৃক্ষের উপকারিতা বিষয়ে নানা তথ্য দিয়েছেন। তার এ মহৎ উদ্যোগের কথা শুনে তারাও বেশ প্রশংসা করেন। দেশে ফিরে এসে বনাঞ্চল ও দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজ খরচে নারিকেল গাছের চারা ক্রয় করে বিতরণ শুরু করেন। এখনো এ কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন।
তিনি আরও বলেন, গাছকে তিনি তার আদরের দুই সন্তানের মতোই ভালবাসেন। তার স্বপ্ন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পরিবেশের অকৃত্রিম বন্ধু হয়ে মানুষের মাঝে গাছের চারা বিতরণ করা। এছাড়া তার মৃত্যুর পর যাতে এই কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা থাকে, সেজন্য সন্তানদেরকেও এ কাজে উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছেন।
জয়নিউজ/আরসি