খাগড়াছড়ির রামগড়ে দুর্গম পাহাড়ি জনপদে বিপুলসংখ্যক নলকূপ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
রামগড় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো.আবদুল মান্নান বলেন, পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার পাশাপাশি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এ সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। একটু সচেতন হলে এতো নলকূপ নষ্ট হতো না।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল রামগড় অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে উপজেলার ২ হাজার ২৩টি বিভিন্ন ধরনের নলকূপের মধ্যে ৬শ’ ৪৪টিই অকেজো। তাই মানুষ নিরুপায় হয়ে দূষিত পানিই ব্যবহার করছে। উন্মুক্ত জলাশয় ও খালবিলের নোংরা পানিই এখন তাদের ভরসা। বিশুদ্ধ পানির অভাবে মানুষ খুব কষ্ট পাচ্ছে। পানিবাহিত নানা ধরনের জটিল অসুখে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে।
রামগড় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো.আবদুল মান্নান বিশুদ্ধ পানি প্রসঙ্গে বলেন, ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় কিছু নলকূপ বসানো হয়েছে। পাশাপাশি নতুন নলকূপ স্থাপনের উদ্যোগও আছে। পিইডিপি (প্রাইমারি এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম) প্রকল্পের আওতায় ২২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক হাজার লিটার পানির ট্যাঙ্ক বসিয়ে হ্যান্ড ওয়াশ বেসিন স্থাপন করা হয়েছে।
সম্প্রতি রামগড় ও পাতাছড়ার প্রত্যন্ত গ্রামে ৫১টি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। বাজার প্রকল্পের আওতায় কালাডেবা, লামকু, খাগড়াবিল এবং নাকাপা বাজারে ডিপ টিউবওয়েল বসানো হয়েছে।
রামগড় একনম্বর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহ আলম মজুমদার জয়নিউজকে জানান, তার ইউনিয়নে পর্যাপ্ত নলকূপ না থাকায় পানীয় জলের সংকট রয়েছে। অনেকগুলো নলকূপ নষ্ট হয়ে গেছে।
পাতাছড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনিন্দ্র ত্রিপুরা জানান, প্রত্যন্ত পল্লীগুলোতে বসানো নলকূপের অনেকগুলোই অকেজো। ঠিকাদার যেনতেনভাবে নলকূপ স্থাপন করায় পানি উঠছে না।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঠিকাদার জানান, আন্তরিকতা সত্ত্বেও চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্যে কাজ সঠিক হয় না। দুর্বৃত্তদের চাঁদা দিয়ে নলকূপ বসাতে হয়। এলাকায় এ সমস্যা এখন প্রকট।
ইউনিয়নের বুদ্ধধনপাড়া, মানিক চন্দ্রপাড়া, পরশুরাম ঘাট, পাইল্যাভাঙ্গা, তবলাপাড়া, গুজাপাড়া, সালদাপাড়া, মরাকয়লা, কালাপানি, সোনারখিল, বালুখালি, বেলছড়ি, গোয়াইয়াপাড়া, পূর্ব নতুনপাড়া, তেমরঙ, থলিবাড়ি, অশ্বিনী কারবারিপাড়া ও দাতারামপাড়া প্রভৃতি এলাকায় লোকজন বিশুদ্ধ পানির অভাবে কষ্ট পাচ্ছে।
লাছাড়িপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অরবিন্দ দেবনাথ জানান, বেলছড়ি, নিউ তৈকমা, মানিকচন্দ্র পাড়া, বুদ্ধধন কারবারিপাড়া, লাছাড়িপাড়া, নূরপুর ও খেদাছড়াসহ কয়েকটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নলকূপ নেই। লোকজন পাহাড়ি গভীর খাদে জমে থাকা পানি ব্যবহার করে। শিক্ষার্থীরা সুপেয় পানির অভাবে নোংরা পানি ব্যবহার করে নানা পানিবাহিত অসুখে ভুগছে।
সরেজমিনে জানা যায়, প্রত্যন্ত গ্রামগুলোর দরিদ্র জনগোষ্ঠী দূষিত ও নোংরা পানি ব্যবহার করে পেটের পীড়াসহ নানারোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। খুচরা যন্ত্রাংশের অভাবে ওইসব এলাকায় অনেক নলকূপ অকেজো হয়ে গেছে। পানীয় জলের চাহিদা মেটাতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের স্থাপন করা নলকূপ, পাতকূপ, তারাকূপ এবং গভীর নলকূপগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই নষ্ট।
পাহাড়ি গ্রাম বড়খেদা ও বেলতলী গিয়ে জানা যায়, ওই এলাকার মানুষ পানীয় জলের সংকটে রয়েছে। কথা হয় কালাচাঁদ ত্রিপুরা, নয়ন ত্রিপুরা, তরুণ ত্রিপুরা, ঝরনা ত্রিপুরা, সুমন মারমা, হলাঅং মারমা, পুতুল বড়ুয়া সহ কয়েকজন গ্রামবাসীর সঙ্গে। তারা জানান, একটি নলকূপও নেই এখানে। পাহাড়ি খাদের কুয়ার পানিই তাদের একমাত্র ভরসা। এই পানি ব্যবহার করে তাদের সন্তান-সন্ততি সারাবছরই পেটের অসুখসহ নানা রোগে ভুগে।