জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ট সহচর ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এম আবদুল ওহাব। চট্টগ্রামের হাটহাজারী থেকে নৌকা প্রতীকে দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।
নির্লোভ এ মানুষটি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সরকারের কাছ থেকে কোনো বিশেষ সুবিধা পাননি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে সম্মানস্বরূপ একটি প্লট বরাদ্দের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তাঁর নামে প্লট বরাদ্দও দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু বরাদ্দকৃত সেই প্লট পরে কেড়ে নিয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। সিডিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ এনে তাঁর (ওহাব) প্লট বাতিল করেন। বর্তমানে ওই প্লট ফিরে পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন ওহাবের পরিবারের সদস্যরা।
এদিকে এম আবদুল ওহাবকে বরাদ্দকৃত প্লট বাতিলের সিদ্ধান্তের কথা শুনে অবাক হয়েছেন সিডিএ’র বর্তমান চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ। তিনি বলেন, ‘আগের সিডিএ চেয়ারম্যান একজন মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক সাংসদের প্লট বরাদ্দ বাতিল করেছিলেন শুনে অবাক লাগছে। বিষয়টা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
জানা যায়, এম আবদুল ওহাব দীর্ঘদিন সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকলেও চট্টগ্রাম নগরের কোথাও তাঁর নিজের কোনো প্লট বা ফ্ল্যাট ছিল না। তাই ২০১১ সালের শুরুতে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি প্লট বা ফ্ল্যাটের জন্য আবেদন করেন তিনি।
এ আবেদনের প্রেক্ষিতে একই বছরের ২০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয় সিডিএকে। নির্দেশনা পেয়ে সিডিএ ২০১১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর আবদুল ওহাবকে চার কাঠার একটি প্লট বরাদ্দ দেয়। সিডিএ’র ৩৯৬তম সভায় এই প্লট বরাদ্দের অনুমোদন দেওয়া হয়।
প্লটের বরাদ্দপত্র পাওয়ার পর কয়েক দফায় লভ্যাংশসহ সিডিএ’র অনুকূলে আবদুল ওহাব ১১ লাখ ৩৪ হাজার টাকা জমা দেন। এরপর তিনি মারা যান। পরে তাঁর স্ত্রী-সন্তানরা ওই প্লট বরাদ্দ পাওয়ার জন্য ২০১৩ সালের ২২ মার্চ সিডিএ চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করেন।
আবেদন করার পর সিডিএ ২০১৪ সালের ৩ জুন প্লট বরাদ্দের বিষয়ে একটি চিঠি দেয় আবদুল ওহাবের পরিবারের কাছে। ওই চিঠিতে সিডিএ’র পক্ষ থেকে বলা হয়, সরকারি নীতিমালা পরিপন্থীভাবে ২৭টি প্লট বরাদ্দ দেওয়ায় প্লট বাতিল করা হয়েছে। যার মধ্যে এম আবদুল ওহাবের প্লটও রয়েছে। পরবর্তী সময়ে অন্যান্যদের প্লট ফিরিয়ে দিলেও ওহাব পরিবারকে বিমুখ করে সিডিএ।
এম আবদুল ওহাবের বড় ছেলে জয়নুল আবেদীন জয়নিউজকে বলেন, ‘প্লট বরাদ্দ বাতিল করার পর আমার পরিবারের পক্ষ থেকে সিডিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামসহ সংস্থাটির শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা এ বিষয়ে কোনো উত্তর না দিয়ে উল্টো আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমার বাবা (ওহাব) হাটহাজারী আসন থেকে দুইবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য। ছিলেন সিডিএ’র চেয়ারম্যান এবং চট্টগ্রাম জেলা বোর্ড কাউন্সিলর। তিনি ওই সময় চাইলে অসংখ্য প্লট ও ফ্ল্যাট করতে পারতেন। কিন্তু তিনি এতোটাই সৎ ছিলেন যে, চট্টগ্রাম শহরে ক্ষমতার অপব্যবহার করে এক বর্গফুট জমিও নেননি। শেষ বয়সে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তিনি অনন্যা আবাসিক এলাকায় ৪ কাঠা জমি বরাদ্দ পান। কিন্তু সেটাই কেড়ে নিল সিডিএ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি এর প্রতিকার চাই।’
এ বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের মুঠোফোনে বারবার ফোন করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
প্রসঙ্গত, প্রয়াত এম আবদুল ওহাব মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রামের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। ১৯৭০ এবং ১৯৭৩ সালে হাটহাজারী আসনে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। নির্লোভ ও সৎ হওয়ার কারণে প্রয়াত এ সাংসদ চট্টগ্রামে ‘গরীবের সাংসদ’হিসেবেই বেশি পরিচিত ছিলেন।