আসন্ন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে আবার আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন আশা করছেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। অন্যদিকে নির্বাচনে অংশ নেবে কি না এখনো সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়নি বিএনপির হাইকমান্ড।
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ জয়নিউজকে বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বড় দল। এ দলে অনেকেই মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকেন। সবাইকে তো মনোনয়ন দেওয়া যায় না। মনোনয়ন পাবেন একজন।
তবে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমান সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন চট্টগ্রাম নগরে অনেক পরিবর্তন এনেছেন। আগের চেয়ে বন্দর নগর অনেক পরিচ্ছন্ন। আশা করি, দল আ জ ম নাছির উদ্দীনের মূল্যায়ন করবে।
চসিক নির্বাচনের ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী জয়নিউজকে বলেন, চসিক নির্বাচনের বিষয়ে আমি একা কিছু বলতে পারব না। এখনো এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
নগরে এখন সবচেয়ে আলোচিত বিষয় চসিক নির্বাচন। আগামী মার্চে এ নির্বাচন হতে পারে। তাই নগরে বিভিন্ন আড্ডায়-সমাবেশে চসিক নির্বাচন নিয়ে আলোচনা চলছে। ভোটারদের মাঝে কৌতূহল তৈরি হয়েছে মেয়রপদের প্রার্থী নিয়ে। বিশেষ করে দেশের বড় দুইটি দল থেকে কারা হচ্ছেন প্রার্থী- এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। কেউ বলছেন, আবারো আওয়ামী লীগ থেকে বর্তমান সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন মনোনয়ন পাবেন। কারো মতে, নতুন কাউকে মনোনয়ন দেবে দলটি।
তবে বিএনপির হাইকমান্ড চসিক নির্বাচন নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তে না এলেও, বিএনপির মনোনয়ন নিয়েও চলছে আলোচনা। বিএনপি থেকে নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনের নাম শোনা যাচ্ছে। আবার নগর সিনিয়র সহ সভাপতি আবু সুফিয়ান, সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্করের নামটিও উঠে আসছে।
দলীয় সিদ্ধান্ত না হলেও বিএনপির নেতাকর্মীরা ভেতরে ভেতরে চসিক নির্বাচনের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। বিভিন্ন সভা-সমাবেশ করছেন। কৌশলে গণসংযোগও করে যাচ্ছেন। বিশেষ করে মেয়রপদ প্রত্যাশীরা তৃণমূল পর্যায়ে গণসংযোগ বাড়িয়ে দিয়েছেন। পাশাপাশি চলছে জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্মকাণ্ড। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতাদের তৎপরতা চোখে পড়ার মতো। কারণ এ দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে সংশয় নেই। নগরবাসীর সমর্থন লাভের চেষ্টার পাশাপাশি চলছে নেতাদের কেন্দ্রের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা।
এ প্রসঙ্গে বর্তমান নগরপিতা আ জ ম নাছির উদ্দীন জয়নিউজকে বলেন, আমি আওয়ামী লীগের একজন ক্ষুদ্র কর্মী হিসেবে দীর্ঘদিন যাবৎ চট্টগ্রামের মানুষের সুখে-দুঃখে তাদের পাশে আছি। চট্টগ্রামের মানুষের সঙ্গে আমার একটা আত্মিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। চট্টগ্রামের মানুষের ভালোবাসা নিয়ে এ পর্যায়ে এসেছি।
এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র নাছির বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতায় গত চার বছরে চট্টগ্রামে হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন হয়েছে। সেবা এবং উন্নয়নের দিক থেকে অতীতের তুলনায় চট্টগ্রাম অনেক এগিয়ে গেছে। এই নগর বর্তমানে ‘গ্রিন এন্ড ক্লিন’ সিটির রূপ নিয়েছে।
চার বছরের সফলতা-ব্যর্থতা বিষয়ে মেয়র বলেন, আইনের মধ্যে থেকে আমি প্রতিটি কাজ করতে সচেষ্ট ছিলাম এবং এখনো আছি। বলতে পারি, প্রতিটি ক্ষেত্রে আমি সফল। অতীতের চেয়ে আমার কাজের বিচার-বিশ্লেষণ করলে আমার গ্রাফটা অনেক উপরে থাকবে। যেমন আগের যত পাকা রাস্তা ছিল এখন তার দিগুণ হয়েছে। একইভাবে কাঁচা সড়ক পাকা করা, নষ্ট সড়ক মেরামত করা, পানি নিষ্কাশনে ড্রেন-নালার সংখ্যা বৃদ্ধি, নতুন সড়ক নির্মাণ, নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অধিগ্রহণ করাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমি সফল হয়েছি।
তিনি আরো বলেন, এসব বিবেচনা করে আবার দল আমাকে মনোনয়ন দেবে। তবে আওয়ামী লীগ অনেক বড় দল। এখানে অনেক নেতা। তাই নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকবেই। যে কেউ মনোনয়ন প্রত্যাশা করতে পারেন। তাতে কিছু যায় আসে না।
তিনি দাবি করেন, আওয়ামী লীগে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। তাই আসন্ন চসিক নির্বাচনে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কাও নেই।
অন্যদিকে নগর আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীরা মনে করেন, মহানগরের উন্নয়নে আরো গতি আনতে নাছিরের কোনো বিকল্প নেই।
নির্বাচনের ব্যাপারে ডা. শাহাদাত হোসেন জয়নিউজকে বলেন, ভোটের পরিবেশ থাকলে অবশ্যই কেন্দ্রের মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করব। কারণ বিএনপির মূলশক্তি জনগণ।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যদি একাদশ সংসদ নির্বাচনের মতো নির্বাচন হয়, তাহলে ভিন্ন চিন্তা করতে হবে।
জয়নিউজ/আরসি