চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগ দুইভাগে বিভক্ত। এক গ্রুপ সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী। আরেক গ্রুপ বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী। থানা কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে এই দুই গ্রুপ এখন মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। এ নিয়ে যে কোনো মুহূর্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জানা যায়, মহিউদ্দিন অনুসারীরা একতরফা কমিটি দিতে চান। আবার নাছিরপন্থিরা এর বিরোধিতা করে নগরের ১৬ থানায় বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করে যাচ্ছেন। তবে মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী ছাত্রলীগ নগর সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শেষ করলেও বিষয়টি জানানো হয়নি নাছির অনুসারীদের। ক্ষুব্ধ এই নেতারা বলছেন, না জানিয়ে থানা কমিটি গঠিত হলে পাল্টা কমিটি দেওয়া হবে।
সূত্র জানায়, দীর্ঘ ২০ বছর পর চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের আওতাভুক্ত থানা কমিটিগুলো গঠনের প্রস্তুতি চলছে। নগরের ১৬ থানা কমিটির পদ-পদবীর জন্য দুই গ্রুপের অনুসারীরা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। শিগগিরই ঘোষিত হবে কমিটিগুলো। এই কমিটি নিয়ে দুই গ্রুপ এখন মুখোমুখি। দুই গ্রুপের ভিতরে রয়েছে চাপা ক্ষোভ। এক গ্রুপ আরেক গ্রুপকে পাল্টাপাল্টি কমিটি দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। কমিটি যদি উভয় গ্রুপের সমন্বয়ে না হয়, তাহলে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন সংগঠনটির সাবেক নেতারা।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক ইয়াছির আরাফাত জয়নিউজকে বলেন, নগর ছাত্রলীগের থানা কমিটি নিয়ে যে কোনো সময় শান্ত নগর অশান্ত হওয়ার আশঙ্কা করছি। কারণ সাবেক মেয়রপন্থিরা একতরফা কমিটি গঠন করতে চাইছেন। আবার বর্তমান মেয়রপন্থিরা একতরফা কমিটির বিরুদ্ধে করছেন বিক্ষোভ মিছিল-মানববন্ধন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইমু-দস্তগীর সাবেক সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ না করেই কমিটি দেওয়ার চেষ্টায় রত।
নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু জয়নিউজকে বলেন, নগরের আওতাধীন থানা কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক থানার কমিটি গঠন শেষও হয়েছে। সুবিধাজনক সময়ে ঘোষণা করা হবে। অন্যদিকে নগর ছাত্রলীগের আওতাধীন থানা কমিটির বিলুপ্তি চাইছেন মেয়র নাছিরপন্থিরা।
এ বিষয়ে ইমু বলেন, এটা আমাদের সাংগঠনিক বিষয়। তা প্রকাশ করব না। তবে যে থানায় যে রকম কমিটি গঠন করা যায়, সেরকমই হবে।
কোনো থানায় আহবায়ক, আবার কোনো থানায় ২০ থেকে ৩০ বা তার বেশি সদস্য দিয়ে থানা কমিটিগুলো করা হবে বলে জানান দায়িত্বশীল এক নেতা। ঈদুল আযহার পরে এসব কমিটি গঠন করার আভাস পাওয়া গেছে।
মেয়র নাছিরপন্থি নগর ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক মইনুর রহমান মইন জয়নিউজকে বলেন, থানা কমিটিতে সমন্বয় করা না হলে অতীতের মতো জবাব দেব। তারা থানা কমিটি গঠন বিষয়ে আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি। আমাদেরকে বাদ দিয়ে কমিটি হলে আমরা পাল্টা কমিটি দেব।
উল্লেখ্য, ২০০৪ সালে এম আর আজিম ও সালাউদ্দিন কমিটির দায়িত্ব গ্রহণের পর ২০১৩ সালের ৩০ অক্টোবর কেন্দ্র থেকে ২৪ জনের কমিটি ঘোষণা করা হয়। তখন সিটি কলেজ ছাত্রলীগ নেতা ইমরান আহমেদ ইমুকে সভাপতি ও এমই্এস কলেজ ছাত্রলীগ নেতা নুরুল আজিম রণিকে সাধারণ সম্পাদক করে এ কমিটি হয়। তারা দুজনই প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী। এ কমিটি বাতিলের দাবিতে একটি পক্ষ দীর্ঘদিন আন্দোলন করে রাজপথ উত্তপ্ত রাখে। পরে পদবঞ্চিতদের আন্দোলন পরিণত হয় ক্ষোভে। নগরীর সার্কিট হাউজে দুই গ্রুপে সংঘর্ষও হয়। পরে ছাত্রবান্ধব কর্মসূচি দিয়ে প্রশংসিত হয় নগর ছাত্রলীগ।
কিন্তু পূর্ণাঙ্গ কমিটি হলেও মহিউদ্দিন ও নাছির অনুসারীদের মাঝে বিভাজন থাকায় ছাত্রলীগের রাজনীতি দুই ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়ে। এরইমধ্যে নানা বিতর্কে জড়িয়ে পদত্যাগে বাধ্য হন সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি। গত বছর মেয়র নাছিরের অনুসারীদের বাদ দিয়ে বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড কমিটি গঠন করেন ইমু-দস্তগীর। তখন সেখানে পাল্টা কমিটি গঠন করেন নাছির অনুসারীরা। এরপর নগর ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বিলুপ্তির দাবি তোলেন নাছিরপন্থিরা।
জয়নিউজ/আরসি